তিন মাসের রিজার্ভ থাকলেই যথেষ্ট : প্রধানমন্ত্রী

সুপ্রভাত ডেস্ক »

খাদ্য কিনতে তিন মাসের রিজার্ভ থাকলেই তা বাংলাদেশের জন্য ‘যথেষ্ট’ হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের কিছু কিছু লোক আছে এটা (রিজার্ভ) নিয়ে অনেক নানা রকম গল্প-গুজব, এটা-সেটা করে বেড়ায়। আমি মনে করি আমাদের তিন মাসের খাদ্য কেনার মতো যে রিজার্ভ, সেটা থাকলেই যথেষ্ট। খবর বিডিনিউজের।

‘তবে ভোগ্যপণ্য অর্থাৎ আমাদের খাদ্যপণ্য… এটায় আমাদের পরনির্ভরশীলতা কমাতে হবে, নিজের দেশের উৎপাদন বাড়াতে হবে।’

বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেন্টেনিয়াল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’সহ দেশের বিভিন্ন উপজেলায় নির্মিত ২৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

বর্তমান দেশে ৪০ বিলিয়ন ডলারের মত রিজার্ভ আছে, তা দিয়ে ৯ মাসের খাদ্যশস্য আমদানি করা যাবে জানিয়ে বুধবারও শেখ হাসিনা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে নিজেদের উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছিলেন।

জনশুমারি প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখের কিছু বেশি, সে কথা তুলে ধরে বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, মোট জনসংখ্যার ৩৮ শতাংশই যুবক, যাদের বয়স ২০ থেকে ৪০ বছর।

তাদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের এই যে যুব শক্তিটা, আমরা শুধু বিদেশে প্রেরণ করব এই চিন্তা করলে হবে না। আমরা দেশে ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছি। সেখানেও আমাদের দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন আছে।

‘কাজেই আমরা প্রশিক্ষণ দেব। তারা বিদেশেও যেমন কাজ করবে, আবার দেশেও তাদের যাতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়- সেটার ব্যবস্থা নিতে হবে।’

দেশে পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি সংরক্ষণে জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু পণ্য উৎপাদন না। সেই সাথে সাথে পণ্য সংরক্ষণেরও আধুনিক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং এই খাদ্য পণ্য বা কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প ব্যাপকভাবে গড়ে তুলতে হবে।

‘আমাদের সব সময় একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যে, পরনির্ভরশীলতা আমাদের কমাতে হবে। আমাদের নিজেদের পায়ে নিজেরা যাতে দাঁড়াতে পারি, সেই ব্যবস্থাটাই করতে হবে।’

অনেক সময় যথাযথ প্রশিক্ষণ না নিয়েই অনেকে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন, বিষয়টিকে ‘দুর্ভাগ্যের’ বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় তারা যে টাকাটা পায়, সেই টাকাটা নেয় আর ওই টাকারই কিছু অংশ ঘুষ দিয়ে একটা সার্টিফিকেট নিয়ে বিদেশে চলে যায়। তারপরে গিয়েই তারা বিপদে পড়ে।’

দালালরা ‘সোনার হরিণ’ ধরার স্বপ্ন দেখায়, তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে জমি বিক্রি করে অবৈধভাবে বিদেশে গিয়ে বিপদে পড়েন অনেকে, সেই বাস্তবতার কথাও উঠে আসে সরকারপ্রধানের বক্তব্যে।

তিনি বলেন, সেরকম বিপদ কারও হলে সরকারকেই উদ্ধার করতে হয়, নইলে ভূমধ্যসাগরে তাদের সলিল সমাধি ঘটে।

‘সেজন্য আমি আমার দেশের যুব সমাজকে বলব, কেউ এইভাবে কোনো দালালের খপ্পরে পড়ে সবকিছু বিক্রি করে বিদেশে যাবেন না। বিদেশে যেতে গেলে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে আপনারা ঋণ নিতে পারেন।

‘প্রয়োজনভেদে বিনা জামানতেও ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা আছে। যাতে জমি-জমা বিক্রি না হয়, সম্পত্তি বিক্রি না হয়।’
অর্থহীন যুদ্ধ
রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধকে ‘অর্থহীন’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেছেন, এই যুদ্ধে অস্ত্র ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন হচ্ছে।

‘করোনাভাইরাস মোকাবেলা করতে হয়েছে আমাদের, বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিচ্ছে। তারই সাথে শুরু হয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এবং এই যুদ্ধ অর্থহীন। কারণ এই যুদ্ধ আমি দেখতে পাচ্ছি শুধুমাত্র যারা অস্ত্র তৈরি করে তারাই লাভবান হচ্ছে আর সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন হচ্ছে।

‘এই যুদ্ধ, শুধু যুদ্ধই না তার সাথে আবার স্যাংশন। এই স্যাংশন, পাল্টাপাল্টি স্যাংশনের ফলে আজকে সারা বিশ্ব অর্থনৈতিক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।’
এ পরিস্থিতিতে উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে এবং উন্নত দেশগুলো এখন বিদ্যুৎ সাশ্রয়, জ্বালানি সাশ্রয়, খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানান শেখ হাসিনা।

‘সেখানে আমাদের মতো দেশ, কেবল আমরা উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু করেছি। একটা লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আপ্রাণভাবে। তখনই এই ধরনের বাধা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে জ্বালানি সাশ্রয়ের ব্যাপারে সকল দেশই কিন্তু নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমরাও সেটা অনুসরণ করছি।’

সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার তাগিদ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘কাজেই আমাদের দরকার হচ্ছে আমাদের একটা দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। কারণ আমাদের যুব সমাজ রয়েছে। এই ক্ষেত্রে আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে এবং আমরা তা নিচ্ছি।’

উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সরকার দক্ষ জনশক্তি তৈরি করছে বলে জানান তিনি।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।