তিন বছরে খরচ ১৭০০ কোটি টাকা

জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্প

চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ মিলছে না- অভিযোগ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের

ভূঁইয়া নজরুল >>

১৫০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দিয়ে শুরু হওয়া মেগা প্রকল্পে তিন বছরে খরচ হয়েছে ১৭০০ কোটি টাকা। প্রথম বছরে মাটি উত্তোলনে, দ্বিতীয় বছরে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও খালের উভয় পাড়ে উচ্ছেদ অভিযানে এবং তৃতীয় বছরে খাল খনন ও রিটেনিং দেয়াল নির্মাণেই শেষ হয়েছে প্রকল্পের সময়। এখন আবারো তিন বছরের জন্য বর্ধিত হচ্ছে প্রকল্পটি। কিন্তু ১৭০০ কোটি টাকা খরচের পরও গত রোববার

তিন ঘণ্টায় মাত্র ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়েছে চট্টগ্রাম নগরী।
মেগা প্রকল্পের এই খাতে কি পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সে সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সালে একনেকে অনুমোদন পাওয়ার পর খালের উপরিভাবের আবর্জনা অপসারণে থোক বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ১৫০ কোটি টাকা। পরবর্তীতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ দেয়া হয় ৪৫০ কোটি টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭৫০ কোটি টাকা এবং চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪২৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ১ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা এ পর্যন্ত বরাদ্দ দেয়া হলেও মাঠপর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পেয়েছে প্রায় ১৭০০ কোটি টাকা। বাকি টাকা সিডিএ শিগগিরই সেনাবাহিনীকে দেয়ার কথা।

কিন্তু টাকা পাওয়ার পরও প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতা কেন এমন প্রশ্নের জবাবে সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ আলী বলেন, ‘আমরা চাহিদা অনুযায়ী অর্থ পাইনি। চলতি অর্থবছরে আমাদের বরাদ্দ ছিল ৭৩২ কোটি টাকা। কিন্তু তা থেকে আমরা পেয়েছি মাত্র ৪২৫ কোটি টাকা। এখন নগরীর প্রায় শতাধিক পয়েন্টে একসাথে কাজ চলছে, ঠিকাদারদের অনেক টাকা বাকি রয়েছে। অর্থ সঙ্কট রেখে প্রকল্প এগিয়ে নেয়া কঠিন।’

তাহলে কি অর্থ সঙ্কটের কারণে কাজে ধীরগতি? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘ অর্থ সঙ্কট থাকলেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ঠিকাদারদের টাকা বকেয়া থাকলেও কাজে কোনো ধীরতা নেই। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে কাজ শেষ করতে হবে বলে কাজের চাপ বেশি। এছাড়া বছরের ১২ মাসের মধ্যে মাত্র সাত মাস কাজ করা যায়।’
কিন্তু প্রকল্পের আওতায় খালের উভয় পাশে রাস্তা নির্মাণের কাজ রয়েছে। এখনো অধিগ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয়নি, সব খালের উভয় পাশে রিটেনিং দেয়াল নির্মাণের কাজও শেষ হয়নি। অর্ধ সমাপ্ত রয়েছে স্লুইস গেট নির্মাণের কাজ।

এসব কাজ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে লে. কর্নেল মো. শাহ আলী বলেন, ‘জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও তা বর্ধিত করা হবে। আমরা আগামী বছরের মধ্যেই বিদ্যমান সব খালের রিটেনিং দেয়াল এবং স্লুইস গেট নির্মাণের কাজ শেষ করবো। বাকি থাকবে শুধু খালের উভয়পাশে রাস্তা নির্মাণের কাজ। প্রকল্পের বাকি সময়ের মধ্যে আমরা রাস্তা নির্মাণের কাজ শেষ করবো। তবে সিডিএ’র পক্ষ থেকে খালের উভয় পাশের ভূমি অধিগ্রহণ করে দিতে হবে।’

এদিকে সিডিএ সূত্রে জানা যায়, ভূমি অধিগ্রহণের জন্য সিডিএ এখনো কোনো অর্থ বরাদ্দ পায়নি। ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ বরাদ্দ রয়েছে এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এই টাকা কবে পাওয়া যাবে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রকল্প পরিচালক আহমেদ মাঈনুদ্দিন বলেন,‘ আগামী অর্থবছরে আমরা ভূমি অধিগ্রহণের জন্য অর্থ বরাদ্দ চাইবো। তা পাওয়া গেলে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করা যাবে।’ তবে ভূমি বরাদ্দের জন্য একসাথে এতো টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। কোভিড পরিস্থিতির কারণে সরকার বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ ছাড় কমিয়ে দিয়েছে বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পটি সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি। সরকারের অন্যান্য প্রকল্পের মতো এই প্রকল্পেও অর্থ বরাদ্দ সঠিক থাকা প্রয়োজন। অর্থ বরাদ্দে গতি থাকলে কাজেও গতি ফিরবে এবং নগরবাসী জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ থেকেও রেহাই পাবে।’

উল্লেখ্য, জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার মেগা প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৩৬টি খাল আরএস শিট অনুযায়ী পূর্বের অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, খালের উভয় পাশে ১৫ ফুট চওড়া রোড ও খালের মুখে ৫টি সøুইস গেইট বসানো, ৪২টি সিল্ট ট্র্যাপ (বালি জমার স্থান), ৫টি জলাধার নির্মাণ, ৩৬টি খাল খননের মাধ্যমে ৫ লাখ ২৮ হাজার ২১৪ ঘনমিটার মাটি উত্তোলন, ৪২ লাখ ঘনমিটার কাদা অপসারণ, নতুন করে ১০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ, ১ লাখ ৭৬ হাজার মিটার দীর্ঘ রিটেনিং দেয়াল নির্মাণ এবং খালের উভয় পাশে ৮৫ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করার কাজ রয়েছে।