জলাবদ্ধতার দুর্ভোগে দিশেহারা নগরবাসী

বর্ষা মৌসুম এগিয়ে এসেছে, আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস কিংবা কয়েকদিনের মেঘের আনাগোনা তা-ই বলে দিচ্ছিলো কিন্তু প্রশাসন, নগরীর উন্নয়ন কাজের কর্তৃপক্ষ তা তেমন আমলে নেয়নি, এমন কি নগর পিতা কয়েকদিন আগে সতর্ক করে দিয়েছিলেন খাল ভরাট মুক্ত না করলে কিংবা নগরীর খালগুলির মুখে দেওয়া বাঁধ কেটে না দিলে মহানগরী গলা সমান পানিতে ডুবে যাবে, সেই আশঙ্কাই সত্য হলো। গত রোববার সকালে ৩/৪ ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরীর উঁচু এলাকা ছাড়া সমগ্র নগরী পানিতে তলিয়ে গেছে। বহদ্দারহাট মোড়, ষোলশহর, শুলকবহর, তিনপুলের মোড় এলাকায় কোমর থেকে গলা সমান পানি, নগরীর অন্যন্যা এলাকা হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে ডুবে গিয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরী কিছুক্ষণের জন্যে যেন দ্বীপে পরিণত হয়েছে। নগরীর দোকানপাট, বাসাবাড়ি, হাসপাতাল ময়লা আবর্জনার পানিতে ভেসেছে, খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই বাণিজ্য কেন্দ্রে জলজট। যান চলাচল থমকে ছিলো কয়েক ঘণ্টা, আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে যানজট হয়েছে ৬ কিলোমিটার পর্যন্ত। আমাদের পত্রিকায় প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিলো খাল ভরাট আর বাঁধই বর্ষার সময় নগরবাসীকে ভোগাবে। খালগুলির পানিপ্রবাহের পথ সরু করা হয়েছে, রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের কারণে খালগুলি অনেকটাই ময়লা আবর্জনায় ভরাট হয়েছে। খালের মুখে বাঁধ দিতে হয়েছে। কিছু খালের মুখে জলকপাট (স্লুইচ গেইট) স্থাপনের কাজ চলছে এর ফলে খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ফল যা হবার তাই হলো, নগরবাসী নগর ডুবে যাওয়া দেখলো। ময়লা আবর্জনা দোকানে, ঘরে ঢুকে যাওয়ায় পরিবেশ দূষণ হলো ভয়াবহ, এই করোনাকালে তা প্রবল স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করবে।
দেশের প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই, রেয়াজউদ্দিন বাজারসহ নিচু এলাকার প্রায় সকল দোকানে পানি ঢুকেছে। পণ্য নষ্ট হয়েছে, প্রতি বছরই এই দুর্ভোগ স্থায়ী রূপ নিয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) মধ্যেকার সমন্বয়হীনতাকে দুষছেন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও নগরের ভুক্তভোগী মানুষ। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। এদিকে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ গত ৩ বছরে মাত্র অর্ধেক হয়েছে। সামনে বর্ষায় পরিস্থিতি কিরূপ নেয় তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন নগরের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী সমাজ।
বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসের আশঙ্কা করছে স্থানীয় প্রশাসন। ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজনকে সরে যেতে মাইকিং শুরু হয়েছে, প্রশাসনের উদ্যোগে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা নতুন এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় এবারের বর্ষা বিপর্যয়কর হতে পারে। আমাদের প্রশাসন এবং প্রকল্পকাজে নিয়োজিত সংস্থা, প্রতিষ্ঠানগুলির উচিত হবে আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়গুলো বিশদভাবে অনুধাবন করে সেভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
নগরবাসী চায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নগরবাসীকে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ পরিচালনা করবে, প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ মতামত নেয়া যেতে পারে। এখন প্রধান কাজ হবে নগরীর অভ্যন্তরে খাল, ড্রেনের পানিপ্রবাহ নির্বিঘœ করতে দ্রুত বাধাগুলি অপসারণ করা; পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে জেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। বর্ষা এসেই পড়লো সুতরাং নির্মোহ বা দায়সারা গোছের কর্তব্য পালন করলে চলবে না।