টিকা নেওয়ার পরও কেন অনেকে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন?

সুপ্রভাত ডেস্ক >>

টিকাকে তুলনা করা যায় বড় আকারের ছাতার সঙ্গে। এর নিচে দাঁড়ালে আমরা তুমুল বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাব। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের মুখে এই ছাতার নিচে দাঁড়ালেও ভিজে যাব। করোনার ডেল্টা ধরন ঘূর্ণিঝড়ের পরিস্থিতিই সৃষ্টি করছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা অঙ্গরাজ্যে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন টিকা নেওয়া ১৫ অতিথি। চার জুলাই দেশটির স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করতে ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসেন হাজার হাজার মানুষ। সেসব লোকজমায়েত থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ডজনখানেক বড় শহরে। করোনা ছড়িয়েছে সম্পূর্ণরূপে টিকা নেওয়া অনেকের মাধ্যমেও।

ডেল্টা ধরনের দাপট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টিকা নেওয়া লোকেরাও সংক্রমিত হচ্ছেন করোনায়। সে তালিকায় আছেন টেক্সাসের অন্তত ছয়জন ডেমোক্রেট, হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা এবং স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির এক সহকারী।

বিধিনিষেধের অভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব রাজ্যেই বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। নতুন সংক্রমিতদের প্রায় সবাইকেই হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছে।

অবশ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ‘ব্রেকথ্রু ইনফেকশনে’র (টিকা নেওয়ার পরও করোনায় আক্রান্ত হওয়া) সংখ্যা এখনও তুলনামূলকভাবে একেবারেই কম। আর টিকা নেওয়া ব্যক্তিরা করোনায় আক্রান্ত হলেও তাদের খুব কম সংখ্যকই গুরুতর অসুস্থ হন। ‘ব্রেকথ্রু ইনফেকশনে’ মৃত্যুর ঘটনা এবং হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও একেবারেই নগণ্য। করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মানুষগুলোর ৯৭ শতাংশই টিকা নেননি।

‘ব্রেকথ্রু ইনফেকশন’ হওয়ার মানে এই নয় যে, টিকা অকার্যকর। তবু টিকা নেওয়া ব্যক্তিরাও সংক্রমিত হতে পারেন। তাদের ক্ষেত্রে কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না, কিংবা খুব হালকা উপসর্গ দেখা দেয়। এর ফলে টিকা নেওয়া ব্যক্তিরা নিজেদের অজান্তেই অন্যদের মাঝে ভাইরাস ছড়াতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনার বিস্তার ফের বাড়তে থাকায় টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের বদ্ধ জায়গায় এবং শপিং মল বা কনসার্ট হলের মতো জনবহুল স্থানে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছেন কয়েকজন বিজ্ঞানী। অবশ্য দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণবিষয়ক সংস্থা- সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) কেবল টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদেরই মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে।

তবে ডেল্টা ধরনের প্রকোপ বাড়তে থাকায় ক্যালিফোর্নিয়ার কয়েকটি অঞ্চলের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ফের আবদ্ধ জায়গায় মাস্ক পরার বাধ্য-বাধকতা জারি করার অনুরোধ করেছেন।

করোনার আগের ধরনগুলোর সঙ্গে ডেল্টা ধরনের পার্থক্যের কারণেও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ডেল্টার বিস্তারের পদ্ধতিতে অবশ্য কোনো পরিবর্তন আসেনি। এটি নিশ্বাসের সঙ্গে, বিশেষ করে বদ্ধ জায়গায় বেশি ছড়ায়। তবে এ ধরনটিকে মূল ভাইরাসের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ সংক্রামক ক্ষমতাসম্পন্ন বলে মনে করা হয়।

গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, গবেষণায় দেখা গেছে ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত ব্যক্তিরা করোনার প্রথম ধরনের চেয়ে হাজারগুণ বেশি ভাইরাস বহন করেন। তার মানে এই নয় যে, এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর মানে সম্ভবত এই যে, ডেল্টা ধরনের সংক্রমণক্ষমতা অনেক বেশি এবং দীর্ঘস্থায়ী।

ভাইরাসের সংখ্যাও গুরুত্বপূর্ণ। টিকা নেওয়া ব্যক্তিরা খুব অল্প সংখ্যক ভাইরাসের সংস্পর্শে এলে বেশিরভাগ সময়ই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আবার টিকা নেওয়া ব্যক্তি বেশি সংখ্যক ডেল্টা ধরনের সংস্পর্শে এলে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অকার্যকর হয়ে যেতে পারে।

কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা সামাজিক সংক্রমণের হার বেড়ে গেলে সমস্যা আরও তীব্র হবে। কারণ ভাইরাস তখন সংখ্যায় ও শক্তিতে আরও বাড়বে।

এদিকে টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের সিংহভাগই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না। ফলে সবাই-ই মারাত্মক ঝুঁকিতে আছেন।