টিকায় চলছে সেলফি উৎসব

তৃতীয় দিনে নিলেন ৬০৫৯ জন

মোহাম্মদ কাইয়ুম :
টিকা নেওয়ার পর কেউ তুলছে মোবাইলে ছবি কেউ বা সেলফি। কেউবা বুথের ভেতরে ফাঁকা থাকলে হাসিমুখে তুলছে টিকা নেওয়ার ছবি। আবার অনেকে টিকা নেওয়ার পরে পর্যবেক্ষণ রুমে বসে হাসি-খুশিতে মেতে আছেন আড্ডায়। এমন উৎসবমুখর পরিবেশ জানান দেয় করোনা জয়ের নতুন পৃথিবীর। গতকাল মঙ্গলবার এমনই দৃশ্যের দেখা মেলে নগরের টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে।
করোনা টিকাদান কর্মসূচির তৃতীয় দিনে গতকাল মঙ্গলবার নগরের ১১টি টিকাদান কেন্দ্র ও ১৪ উপজেলায় চার হাজার ৪৪৮ জন পুরুষ ও এক হাজার ৬১১ জন মহিলাসহ মোট ৬ হাজার ৫৯ জন সম্মুখসারির যোদ্ধাসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে নগরীতে ৩ হাজার ৩২ জন এবং ১৪টি উপজেলায় ৩ হাজার ২৭ জন। এ নিয়ে গত তিন দিনে চট্টগ্রামে মোট ৯ হাজার ৮২৭ জন টিকা গ্রহণ করেন। এছাড়া গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত নগরে ও চট্টগ্রামের ১৪টি উপজেলায় টিকা নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন ৪৯ হাজার ৯৩১জন। এর মধ্যে নগরীতে ৩৮ হাজার ৮৯০ এবং উপজেলায় ১১ হাজার ৪১ জন।
সরেজমিনে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল টিকাদান কেন্দ্রে দেখা যায়, উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা নিচ্ছেন। টিকা নেওয়ার পরে অনেকে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছে। আবার অনেকে পর্যবেক্ষণ কক্ষে বসে আড্ডায় মেতেছেন। অনেকেই টিকা নেওয়ার পরে মোবাইল ফোনে আত্মীয় স্বজনদের জানিয়ে দিচ্ছেন টিকা নেওয়ার খবর। এসময় টিকাদানে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া টিকাদান কার্যক্রম দুপুর ২টায় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তখনো অনেককে দেখা গেছে টিকা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রে আসতে।
টিকা নেওয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুন বেগ বলেন, ‘টিকা নেওয়ার ব্যাপারে এক্সাইটেড ছিলাম। টিকা নিতে পরে অনেক ভালো লাগছে। টিকা নেওয়ায় ইমিউনিটি গ্রোথ হবে, ফলে করোনা থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবো।’
টিকা নেওয়ার পরে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করছেন শ্যামল কুমার ধর। ছবি তোলার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিজের ইচ্ছায় টিকা নিচ্ছি। অনেকে টিকা নিয়ে গুজব ছড়িয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। তাই যারা টিকা নিতে ভয় পাচ্ছে তাদের উৎসাহিত করতে ফেসবুকে পোস্ট করার জন্য ছবি তোলা।
টিকা নেওয়ার পরে কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে পর্যবেক্ষণ কক্ষে বসে থাকা ৭৮ বছর বয়সী হোসনে আরা বেগম হাসিমুখে জানান, আলহামদুলিল্লাহ, ভালোই লাগছে। টিকা নেওয়ার পরে এখনও কোন সমস্যা হচ্ছে না। টিকা নেওয়ার বিষয়ে সন্দিহান থাকলেও আজকে এসে টিকা নিলাম। সবাইকে বলবো আপনারা সবাই টিকা কেন্দ্রে এসে টিকা গ্রহণ করুন।
অন্যদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রথম দিকে টিকা নিচ্ছেন জানিয়ে চমেক হাসপাতালের চিকিৎসক অনির্বাণ ঘোষ জানান, ‘করোনার টিকা নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে ভয় কাজ করলেও চিকিৎসকদের টিকা নেওয়া দেখে সবার মধ্যে একটা পজিটিভ ধারণা তৈরি হচ্ছে। চিকিৎসকরা টিকা নিচ্ছেন দেখে সাধারণ মানুষরাও এখন টিকা নেওয়ার জন্য আসছেন। অনেকে ফোন করেই জানতে চেয়েছে টিকা নিয়েছি কিনা। সেজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টিকা নেওয়ার ছবি পোস্ট করছি। এই টিকা নিতে পারাটা সত্যিই ভালো লাগার। এখন আরো বেশি সুরক্ষিত হয়ে রোগীদের সেবা দিতে পারবো।’
চসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে গতকাল মঙ্গলবার নগরের ১১টি টিকাদান কেন্দ্রের টিকা নেওয়া তিন হাজার ৩২ জনের মধ্যে চমেক হাসপাতাল কেন্দ্রে এক হাজার ৯৫ জন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৫০০, বিমান বাহিনী হাসপাতালে ১০০, নৌবাহিনী হাসপাতালে ৫৫০, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৭২, বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি হাসপাতালে ১১০, পুলিশ হাসপাতালে ১৩৭, চসিক জেনারেল হাসপাতালে ৩০৯, মোস্তফা হাকিম মাতৃসদন হাসপাতালে ৯২, চসিক বন্দরটিলা হাসপাতালে ৪০ এবং ছাফা-মোতালেব মাতৃসদন হাসপাতালে ২৭ জন করোনা টিকা গ্রহণ করেন।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে চট্টগ্রামের ১৪টি উপজেলার তিন হাজার ২৭ জনের মধ্যে লোহাগাড়ায় ২১০ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ১৪০, ফটিকছড়িতে ৫০, বাঁশখালীতে ২১০, আনোয়ারায় ১৫৩, সীতাকুণ্ডে ৩০৭, সাতকানিয়ায় ২২৯, রাউজানে ৩৬০, মিরসরাইয়ে ২৯০, চন্দনাইশে ২৪৬, বোয়ালখালীতে ৮৯, হাটহাজারীতে ৩৯৯, সন্দ্বীপে ৯০ এবং পটিয়ায় ২৫৪ জন টিকা গ্রহণ করেন।