ঝরনায় অসতর্কতায় বাড়ছে মৃত্যু

আন্তর্জাতিক পর্যটন দিবস আজ

রাজু কুমার দে, মিরসরাই »

মিরসরাইয়ে বিভিন্ন পাহাড়ে অবস্থিত ৫টি প্রাকৃতিক ঝরনা ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে অসতর্কতায় বাড়ে হতাহতের সংখ্যা। গত ৫ বছরে উপজেলার ৫টি ঝরনায় নিহত হয়েছেন ৭ পর্যটক। এদের মধ্যে দুসহোদর ছিল। আহত হয়েছে ১৫ পর্যটক। এছাড়া ৩০ পর্যটক পথভ্রষ্ট হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি ঝরনা দেখতে আসা সিংহভাগ পর্যটক বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে অনেকে সাঁতার জানে না। তাই অসতর্কতাবশত ঝরনার নিচে থাকা কূপে পড়ে গেলে উঠতে না পেরে প্রাণ হারাচ্ছে পর্যটকরা।

মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের তথ্যমতে, ২০১৯ সালের ১৯ জুন উপজেলার খৈয়াছরা ঝরনায় পড়ে দুজন পর্যটক আহত হয়। একই বছর ২৮ জুন ওই ঝরনায় আহত হয় একজন। ১২ জুলাই বোয়লীয়া ঝরনা ঘুরতে এসে ১৫ জন পর্যটক পথ হারিয়ে ফেলে। পরে জরুরি সেবায় ফোন দিয়ে মিরসরাই থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে উদ্ধার করে। ২৬ জুলাই খৈয়াছরা ঝরনাায় পড়ে এক পর্যটক আহত হয়। ওই বছরের ১৫ আগস্ট চট্টগ্রাম থেকে আসা মেহেদী হাসান (২২) নামে একজন প্রকৌশল ছাত্রের রুপসী ঝরনায় মারা যান। ২৯ সেপ্টেম্বর সোনাইছড়ি ঝরনায় পড়ে এক পর্যটক আহত হয়। ৪ অক্টোবর খৈয়াছড়া ঝরনা দেখতে গিয়ে আহত হয় একজন।

২০২০ সালের ৩ আগস্ট নাপিত্তাছড়া ঝরনায় খাদে পড়ে আহত হয় একজন। ১০ আগস্ট খৈয়াছড়া ঝরনায় একজন পর্যটক পানিতে পড়ে আহত হয়। ২৯ আগস্ট খৈয়াছড়া ঝরনায় আহত হয় এক পর্যটক। ৪ সেপ্টেম্বর খৈয়াছড়া ঝরনায় ফেনী থেকে আসা ফয়েজ আহম্মদ নামে এক পর্যটক পা পিছলে পড়ে নিহত হয়। ১৭ অক্টোবর একই ঝরনা এলাকায় পা পিছলে পড়ে নিহত হয় আরও একজন। এছাড়া ওই বছরের ১ নভেম্বর রুপসী ঝরনায় খাদে পড়ে একজন আহত হয়। ২০২১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর খৈয়াছরা ঝরনায় উপর থেকে পড়ে আহত হয় এক পর্যটক।

২০২২ সালের ২০ জুন নাপিত্তা ঝরনায় কূপে পড়ে দুই পর্যটক নিহত হয়। নিহতরা হলো মাসুদ আহম্মদ তানভীর ও তার ভাই তৌফিক আহম্মদ তারেক। ১৯ আগস্ট খৈয়াছরা ঝরনায় আহত হয় এক পর্যটক। ৬ ও ২৩ অক্টোবর দুজন পর্যটক আহত হয় খৈয়াছরা ঝরনায়। চলতি বছরের ২৭ জুন সোনাইছড়ি ঝরনা দেখতে এসে পথভ্রষ্ট হয় ১৫ পর্যটক। এসময় জরুরি সেবায় যোগাযোগ করে সাহায্য চায় তারা। পরে মিরসরাই থানা পুলিশ ও ফায়ার সাভির্সের কর্মীরা গিয়ে দুর্গম পাহাড় থেকে তাদের উদ্ধার করে। ২ জুলাই রুপসী ঝরনা দেখতে গিয়ে দুই পর্যটক নিহত হয়।

নিহতরা হলেন চট্টগ্রাম জেলার আকবর শাহ থানার ফিরোজ শাহ কলোনি মো. জামিলের ছেলে মো.আফসার (১৫) একই এলাকার মো. জসীমের ছেলে মো. আরিফ (১৮)। তারা ৯ বন্ধু চট্টগ্রামের আকবর শাহ এলাকা থেকে ঘুরতে আসে মিরসরাইয়ের রুপসী ঝরনায়। কূপে গোসল করতে গিয়ে ২ বন্ধু হারিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের সহযোগিতায় তাদের উদ্ধার করা হয়। ১৫ সেপ্টেম্বর খৈয়াছরা ঝরনায় আহত হয় এক পর্যটক। ৫ বছরের সবচেয়ে বেশি পর্যটক আহত হয়েছে খৈয়াছরা ঝরনায় । ওখানে ৫ বছরের আহত হয়েছে ১২ জন। সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে নাপিত্তা ঝরনায়। এখানে নিহত হয় তিনজন।

এদিকে চলতি বছর ঝরনাগুলো ইজারা নেয় এ এইচ এন্টারপ্রাইজ। ভ্যাট-ট্যাক্সসহ ২৯ লাখ টাকায় বারইয়াঢালা জাতীয় উদ্যানের আওতায় ঝরনাগুলো ইজারা দেয় বনবিভাগ। গত বছর ইজারা দেয়া হয়েছিল ১২ লাখ টাকায়।

জানতে চাইলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এ এইচ এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি নাজুমল হাসান পিন্টু বলেন, ঝরনা আসার সিংহভাগ পর্যটক এলাকাটি সম্পর্কে অবগত নয়। তাই ঝরনায় আসা প্রত্যেক পর্যটককে আমরা গাইড নিয়ে যেতে বললে তারা নেয় না। তবুও ঝূঁকিপূর্ণ স্থানে যেতে পর্যটকদের বারণ করা হয়।

পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে ঝরনার দায়িত্বে থাকা বারইয়াঢালা রেঞ্জ কর্মকর্তা একেএম আলতাফ হোসেন বলেন, পর্যটকদের টিকেট দেয়ার সময় বিপজ্জনক স্থানগুলোতে না যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু পর্যটকরা নির্দেশনা না মেনে বিপদে পতিত হচ্ছে। এছাড়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে গাইড সরবরাহ করতে নির্দেশ দেয়া রয়েছে। ঝূঁকিপূর্ণ স্থানে না যেতে ঝরনা পথে ফেস্টুন দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. কামাল হোসেন বলেন, সিংহভাগ পর্যটক আসে সমতল থেকে। তাদের পাহাড় ও ঝরনার নিচের কূপের গভীরতা সম্পর্কে ধারণা থাকে না। তাই না জেনে পর্যটকরা দুর্ঘটনায় পড়ছেন।