জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি

টানা বৃষ্টির সঙ্গে যোগ হয়েছে জোয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদক »

দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় তাপমাত্রা ছিলো অসহনীয়। মানুষের মধ্যে ছিলো অস্বস্তি। শুক্রবার ভোর রাত থেকে বৃষ্টিতে গরমের অস্বস্তি কাটলেও চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে মানুষকে। নগরীতে টানা বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। নগরের অধিকাংশ নিম্নাঞ্চলসহ প্লাবিত হয়েছে। মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসার সামনেও পানি উঠেছে।

গতকাল ৪ আগস্ট ভোর রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের নগরসহ মফস্বলের অনেক জায়গা প্লাবিত হয়। নগরীর আমানবাজার, আতুরার ডিপো, অক্সিজেন মোড়, মুরাদপুর, শুকলবহর, চকবাজার, কাপাসগোলা, হালিশহর, বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদসহ বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়। মৌসুমি বায়ু ও স্থল নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টির সঙ্গে যোগ হয়েছে জোয়ার, আর তাতে তলিয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকা।

নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ছুটির দিন হলে যারা প্রয়োজনীয় কাজে বাসা-বাড়ির বাইরে যাচ্ছেন তাদের কাউকে কোমর, কাউকে হাঁটু সমান পানি পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে যেতে হয়েছে। যানবাহন চলাচল এক প্রকার বন্ধ হয়ে নগরী হয়ে পড়েছিলো স্থবির। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছিলো নিম্নআয়ের মানুষ। কিছু রিকশা চলাচল করলেও ৫ থেকে ১০গুণ বেশি রিকশাভাড়া গুণতে হয়েছে নগরবাসীকে।

বাসা বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভোরের আলোর সাথে সাথে শুক্রবার সকালে পানিও ঢুকে পড়ে ঘরে। শো-কেস, সোফা, খাট সব ডুবে যায়। পানিতে নষ্ট হয়ে যায় টিভি, ফ্রিজের মতো ইলেক্ট্রনিক জিনিসপত্র।
চকবাজার এলাকার দোকানিরা জানান, পাশের নালাগুলো দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করার কারণে পানি উপচে দোকানপাটে চলে আসে। মালপত্র ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। অন্যদিকে বহদ্দারহাটের বসতবাড়িতে থাকা বিশুদ্ধ পানির উৎসও ডুবে গেছে। চুলা জ্বালাতে না পেরে খাওয়া অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে নগরের প্রান্তিক মানুষকে।
কোমর সমান পানি থাকায় রফিকুল ইসলাম নামে এক দিনমজুরকে বহদ্দারহাট এলাকা পার হতে গিয়ে অতিরিক্ত লুঙ্গি নিয়ে আসতে হয়েছে।

হালিশহরের বাসিন্দা নেয়ামত উল্ল্যাহ জানান, ‘পানি সরে গেলেও বছর বছর এভাবে ঘর আসবাবপত্র ইত্যাদি পরিস্কার করা কঠিন। নষ্ট হয়ে গেলে তার ক্ষতি পুষিয়ে ওঠাও কষ্টসাধ্য। মুরাদপুরের ফ্লাইওভার ব্রিজের নিচে কালভার্ট উন্নয়ন প্রকল্প ও ওয়াসার কাজ চলমান থাকায় মাটিতে পানি জমে কাঁদায় পরিণত হয়েছে। সেখানে বেশ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে গিয়ে বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে।’

এদিকে নগরীর ৫৭টি খালের মধ্যে প্রধান ৩৬ টি খালের সংস্কার, খনন, পুনরুদ্ধার, দেয়াল নির্মাণ, জোয়ার-ভাটা নিয়ন্ত্রণে রেগুলেটর স্থাপনের কাজ এখনও চলমান। পাশাপাশি চলমান রয়েছে চসিক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাল খনন ও রেগুলেটর বসানোর প্রকল্পও।

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০১৭ সালে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার এ প্রকল্প নেয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, যেটি বাস্তবায়ন করছে সিডিএ।
প্রকল্পের আওতায় ১৭৬ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, ৪৫টি ব্রিজ, ৬টি কালভার্ট, ৪২টি সিল্ট ট্র্যাপ,

পাঁচটি রেগুলেটর নির্মাণ, ১০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার নতুন ড্রেন, ৮৫ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার খালের পাশে সড়ক নির্মাণ ও ১৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার ড্রেন সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। ২ মে প্রকল্পটির পূর্ত কাজ পরিচালনাকারী সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনক্ট্রাকশন বিগ্রেডের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রকল্পের ৭৬ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোবারক আলী বলেন, ‘টানা বৃষ্টির সাথে জোয়ার থাকায় পানি সহজে নামছে না। আমাদের কাছে এখনো কোনো স্লুইস গেট হস্তান্তর করা হয়নি। স্লুইস গেটগুলোর সাথে থাকা পাম্প হাউজের কাজও শেষ হয়নি এখনো। এগুলো চালু হলে গেট বন্ধ করে পাম্পের সাহায্যে জোয়ারের পানি সরানো যেত।’
মুরাদপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘এভাবে প্রতি বছর বৃষ্টি হলেই পানিতে পুরো শহর ডুবে যায়।

 

পতেঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ সুমন সাহা বলেন, ‘৫ আগস্ট বৃষ্টি না হলেও পরশু ৬ আগস্ট থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শনিবার (৫ আগস্ট) সূর্যের দেখা মিলবে। তবে রোববার (৬ আগস্ট) থেকে মাঝারি ধরনের ভারি বা ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। ৪ আগস্ট বন্দরে দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৮ মিলিমিটার এবং আমবাগান আবহাওয়া অফিসে নগরের বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১২৫ মিলিমিটার।’