চিত্রাংয়ের ধাক্কায় নড়বড়ে আনোয়ারার বেড়িবাঁধ

বিভিন্ন জায়গায় ভাঙন

সংবাদদাতা, আনোয়ারা »

২০১৬ সালের ২১ মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর তা-বে উপকূলের ৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণভাবে বিলীন ও ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পরবর্তীতে উপকূল সুরক্ষায় ৫৭৭ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শেষ পর্যায়ে। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হতে না হতেই ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে আবারও নতুন করে বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে উপজেলার রায়পুর ও জুঁইদন্ডী ইউনিয়নে। বেড়িবাঁধ টপকে ও ভাঙা অংশ দিয়ে ঢুকেছে জোয়ারের পানি। যার ফলে স্থানীয়দের বসতবাড়ি ও ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়েছে। এমতাবস্থায় সুরক্ষিত উপকূলে আবারও নতুন করে ভয়ের দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ ঘুরে দেখা যায়, রায়পুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সরেঙ্গা, মধ্যম গহিরা, পূর্ব গহিরা, বাইন্নার দিঘী, ঘাটকুল ও বাইঙ্গার ঘাট এবং জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের সাপমারা খালের মুখ, লামারবাজার, গোদার গোড়া এলাকায় বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে গেছে গহিরাসহ কয়েকটি এলাকার বেড়িবাঁধের অংশ।

জানা যায়, ভাঙন প্রতিরোধে অরক্ষিত আনোয়ারা উপকূল সুরক্ষায় ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের প্রচেষ্টায় ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় ৪২টি প্যাকেজের ২৮০ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে ভূমিমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় কয়েক ধাপে এ প্রকল্পের বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭৭ কোটি টাকায়। চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হয় চলমান এই প্রকল্পের মেয়াদ।
গহিরা এলাকার স্থানীয় হৃদয় নামের এক যুবক বলেন, বেড়িবাঁধ নির্মাণে গাফিলতির কারণে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর আঘাতে আবার নতুন করে বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে জোয়ারের পানিতে আমাদের বাড়িতে পানি ঢুকে যাচ্ছে।

জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের আহমদ কবির বলেন, মাঝিরঘাট থেকে নাপিত খাল পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধে বর্তমানে ফাটল ধরেছে, ধীরে ধীরে ভেঙে পড়েছে নদীতে। রব্বাত মিয়ার বাড়ি থেকে মৌলভী বাজার পর্যন্ত ১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভাঙনে বিলীন হচ্ছে। শঙ্খ নদীর ভাঙনে জুঁইদন্ডী গ্রামের প্রায় ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও তিনি জানান।

‘বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক অনিয়ম তুলে ধরার পরও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নীরবতার ফলে বেড়িবাঁধের এই অবস্থা’ এমনটি অভিযোগ করেন উপকূলীয় বাসিন্দারা।

রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিন শরীফ জানান, বর্তমানে দক্ষিণ সরেঙ্গা, মধ্যম গহিরা, পূর্ব গহিরার ফকিরহাট, বাইন্নার দিঘী ও সাপমারা খালের বেড়িবাঁধ ঘুর্ণিঝড়ের আঘাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যেসব অংশে ভাঙন ধরেছে ওইসব এলাকায় ভূমিমন্ত্রীর নির্দেশে প্রাথমিকভাবে জিও ব্যাগসহ মাটি দিয়ে সংস্কারকাজ করা হচ্ছে।

জুঁইদন্ডী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ ইদ্রিচ বলেন, এলাকার নদী ভাঙনের বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে ব্যাবস্থা নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে। আমাদের সাধ্যমতো পরিষদের পক্ষ থেকে বেড়িবাঁধের ভাঙনের অংশ সংস্কারকাজ করেছি।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ঘুর্ণিঝড়ের আঘাতে যেসব এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে ওইসব এলাকায় প্রাথমিকভাবে জিও ব্যাগ দিয়ে মাটি ভরে সংস্কার করা হচ্ছে।