চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণ করতে হবে : বাণিজ্যমন্ত্রী

নগরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন

দ্য চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র উদ্যোগে ‘২৯তম চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০২২’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান গতকাল বিকেলে রেলওয়ে পোলোগ্রাউন্ড মাঠে অনুষ্ঠিত হয়।
চিটাগাং চেম্বার প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি, বিশেষ অতিথিবৃন্দ এম এ লতিফ এমপি, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন’র মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর পিপিএম, চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর এবং চেম্বার পরিচালক ও সিআইটিএফ-২০২২ কমিটির চেয়ারম্যান একে এম আক্তার হোসেন বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে চেম্বার পরিচালকবৃন্দ ও সাবেক পরিচালকবৃন্দ, সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সিসিসি কাউন্সিলরবৃন্দ, বিভিন্ন ট্রেডবডি নেতৃবৃন্দ, অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধিসহ নগরীর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথি বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি বলেন, চট্টগ্রাম দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের লাইফ লাইন। তাই এই অঞ্চলকে আরো গুরুত্ব দেয়া দরকার। আমদানি-রপ্তানি প্রবৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণ করতে হবে। দু’বছরের মধ্যে ৮০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জনে চট্টগ্রামসহ ব্যবসায়ীরা প্রশস্ততার পথ দেখাবে। ২০২৬ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবো। বাংলাদেশ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বাস্তবতার নিরিখে হচ্ছে। দেশের উন্নয়নে ব্যবসায়ীদের অপরিসীম অবদান রয়েছে। তাই তাদের সব প্রয়োজন সরকার নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। ২০৪১ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ৫শত ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ২০২৫ সালের মধ্যে আইসিটি খাতে ৪-৫ বিলিয়ন ডলার আয় হবে। তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা দেখে বলা যায় ‘ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ’।
মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম ও বন্দরের ইতিহাস হাজার বছরের। চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী করতে হলে বাণিজ্যের সকল উপাদান চট্টগ্রামে থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে চট্টগ্রামের চেহারা বদলাতে শুরু করেছে। কর্ণফুলী টানেল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে প্রথম। মিরসরাই ইকোনমিক জোনে ১৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। কাজেই চট্টগ্রামের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশ সমৃদ্ধ হবে। তিনি চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে ১৩ টন ওজন নিয়ন্ত্রণের বিষয় বিবেচনা করার জন্য মন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান। একই সাথে সুন্দর চট্টগ্রাম মহানগর গড়ে তুলতে নগরবাসীর সচেতনতা ও সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন সিটি মেয়র।
বিশেষ অতিথি এম এ লতিফ এমপি বলেন, চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেশের অবকাঠামো উন্নয়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন যাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায়। মেগা প্রকল্পগুলোর কারণে চট্টগ্রামের সাথে সারা পৃথিবীর যোগাযোগ বৃদ্ধিই প্রমাণ করে দেশের উন্নতি। স্থিতিশীল সরকার থাকার কারণে ধারাবাহিক উন্নয়ন হয়েছে। আগামী ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা থাকলে বাংলাদেশ ৮টি উন্নত দেশের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে। টিসিবি’র মাধ্যমে সরকার ভর্তুকিমূল্যে সাধারণ জনগণের কাছে ভোগ্যপণ্য বিক্রি করছে। তিনি চট্টগ্রামে মানসম্পন্ন সাইলো নির্মাণের দাবি জানান।
সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর পিপিএম বলেন, বাংলাদেশ এক অবাক বিস্ময়ের দেশ। করোনা মহামারীর কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিগত দু’বছরে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম, যেখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রবাহ চলমান ছিল। তিনি চট্টগ্রামের মেগা প্রকল্পগুলোর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আগামী দিনে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তির হাব হতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, গত ২৮ বছর ধরে চেম্বার দেশীয় বিশেষ করে এসএমই উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শন ও পরিচিতির সুবিধার্থে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আয়োজন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২৯তম মেলা আয়োজন করা হচ্ছে। তিনি মেলার জন্য একটি স্থায়ী ভেন্যুর দাবি জানান যেখানে সারা বছরব্যাপী সব ব্যবসায়ী সংগঠন মেলা আয়োজন করতে পারেন। চেম্বার সভাপতি অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে ২০২৫ সালের মধ্যে বে-টার্মিনাল নির্মাণ শেষ করা, চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক ৮ লেনে উন্নীতকরণ, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক দপ্তরের ক্ষমতায়ন, মিরসরাই ইকোনমিক জোন দ্রুত বাস্তবায়ন, ব্লু-ইকোনমি নীতিমালা প্রণয়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় নেতৃত্বে দেশব্যাপী ভ্যাক্সিনেশন প্রোগ্রাম পরিচালনার সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও তা বাস্তবায়নের ফলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় কোভিড নিয়ন্ত্রণে আমাদের দেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ করে। ফলে জীবন যাত্রা স্বাভাবিক হওয়ায় চেম্বার চট্টগ্রামবাসীর এই প্রাণের মেলা আয়োজন করছে। চেম্বার পরিচালক ও সিআইটিএফ-২০২২ এর চেয়ারম্যান এ কে এম আক্তার হোসেন মেলার সার্বিক বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে বক্তব্য প্রদান করেন। প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথিবৃন্দ এবং চেম্বার নেতৃবৃন্দ ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
উল্লেখ্য, মাসব্যাপী এই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা পোলোগ্রাউন্ড মাঠে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে। বিজ্ঞপ্তি