চট্টগ্রামে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বাড়ানো বড়ই জরুরি

ভৌগলিক অবস্থানের কারণে চট্টগ্রাম প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। তার সাথে যুক্ত হয়েছে, আগুন ও কারখানায় বিস্ফোরণের মতো মানবসৃষ্ট দুর্যোগ।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, পুরো জেলাতে মঞ্জুরিকৃত ১,০২৬ জনশক্তির সংখ্যা বিপরীতে আছেন মাত্র ৭৭৫ জন। উদ্ধারকাজ পরিচালনার জন্য একটি ২২ তলা, দুটি ১৭ তলা ও একটি ৭ তলা পর্যন্ত উদ্ধারকাজ চালাতে সক্ষম মই (ল্যাডার) রয়েছে। কিন্তু, শহরের সরু রাস্তা তার উপর আবার ফ্লাইওভারের কারণে অধিক উচ্চতার তিনটি ল্যাডারই কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ফোম টেন্ডার রয়েছে মাত্র চারটি। এছাড়া উচ্চ প্রযুক্তির টার্নটেবল ল্যাডার (টিটিএল) ও স্নোরক্যালসহ আগুন নেভানোর প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও পর্যাপ্ত নয়।
বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি ইংরেজি দৈনিক। ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে বহুতল ভবনে দুর্ঘটনা কবলিতদের উদ্ধারের জন্য ৬৪ মিটার লম্বা যে ল্যাডার আছে তা প্রধান সড়কে চলতে গেলে চল্লিশ ফুট প্রশস্ত রাস্তা প্রয়োজন। ‘শহরে তেমন রাস্তা নেই। এছাড়া শহরের প্রধান সড়কের পুরোটা জুড়েই ফ্লাইওভার। তাই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে এসব ল্যাডার নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।’
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সূত্র মতে, চট্টগ্রামের অন্তত ৪২টি মার্কেট ও ১২টি বস্তি আগুনের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। বস্তি ও মার্কেটগুলো ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় এসব এলাকায় যন্ত্রপাতি নিয়ে দ্রুত পৌঁছানো কঠিন।
ফায়ার সার্ভিসের গত দুই বছরের তথ্যানুসারে, চট্টগ্রামে অগ্নি-দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি বেড়েই চলেছে।
২০২১ সালে চট্টগ্রামে অগ্নিকা-ের ঘটনা ছিলো ১,৯১০টি। এসব ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ২০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, নিহত হন ৬০ জন। একবছর পর ২০২২ সালে প্রায় সমান সংখ্যক বা ১,৯১১টি অগ্নিকা-ে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৪৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকায়। অগ্নিকা-ে নিহতের সংখ্যাও বেড়ে দাঁড়ায় ২৫৯ জনে। গত বছরে চট্টগ্রামে বিএম কনটেইনার ডিপো বিস্ফোরণে ১৩ জন দমকল কর্মী নিহত হন।
এদিকে, চলতি বছরের প্রথম দেড় মাসেই ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকায়। ৪০৯টি অগ্নিকা-ের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৮ জন।
এ ধরনের একটি শহরের জন্য শক্তিশালী দমকল সেবা থাকা দরকার। কিন্তু, বাস্তবতা হলো চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের নেই সমুদ্র ও বিমানবন্দর, কনটেইনার ডিপো, অর্থনৈতিক অঞ্চল, ভারী শিল্প ও শত শত পোশাক কারখানায় অগ্নি-নিরাপত্তা নিশ্চিতের সক্ষমতা।
অনিয়ন্ত্রিত উন্নয়ন কর্মকা-ের জেরে চট্টগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনার সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চললেও ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়নি।