চুরির অপবাদে মা ও মেয়েকে নির্যাতন ইউপি চেয়ারম্যানের

চকরিয়ায় মারধরের পর কোমরে রশি বেঁধে ইউনিয়ন পরিষদে নেয়া হচ্ছে মা ও মেয়েকে- সুপ্রভাত

জেলা প্রশাসনের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি

নিজস্ব প্রতিনিধি, চকরিয়া :

গরু চুরির অপবাদ দিয়ে মা-মেয়ে ও ছেলেসহ চারজনকে শারীরিক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

শুক্রবার দুপুরে হারবাং ইউনিয়নের বৃন্দাবনখিল গ্রামে প্রথমদফা মারধরের পর কোমরে রশি বেঁধে ইউনিয়ন পরিষদে তুলে এনে তাদের দ্বিতীয়দফা মারধর করেছে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিরান। শারীরিক নির্যাতনের পর আটককৃত চারজনকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হলে শনিবার সকালে গরু চুরির মামলায় পুলিশ তাদের হাজতে পাঠান।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটলেও শনিবার রাত ১১টার দিকে মা-মেয়েকে কোমরে রশি বেঁধে তুলে আনার কয়েকটি ছবি স্থানীয় জনগণের ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এরপর দুই নারীকে রশি বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় সারাদেশে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম নেয়।

এলাকাবাসীর দাবি, গরু চুরি করে নিয়ে যাওয়া সন্দেহে শুক্রবার দুপুরে হারবাং ইউনিয়নের বৃন্দাবনখিল গ্রামের স্থানীয় লোকজন একটি সিএনজি অটোরিকশা আটকিয়ে গাড়ির ভেতর থেকে গরুর বাছুরসহ চারজনকে আটক করেন।

আটককৃতরা হলেন পটিয়া উপজেলার কুসুমপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আবুল কালামের স্ত্রী পারভীন আক্তার (৪০), ছেলে ইমরান হোসেন (২১) ও মেয়ে সেলিনা আক্তার (২৮) এবং কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মো. দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ ছুট্টো (২৭)।

আটকের পর ওইসময় উত্তেজিত লোকজন ঘটনাস্থলে চুরির অপবাদ দিয়ে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে তাদের মারধর করে। পরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম বিষয়টি জানার পর তার নির্দেশে কিছু যুবক ঘটনাস্থল থেকে তাদের রশি দিয়ে বেঁধে টানা হিচড়ে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসে।

অপরদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র দাবি করে, একই পরিবারের মা, মেয়ে, ছেলে ও তাদের এক আত্মীয়সহ চারজনকে পরিকল্পিতভাবে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে কোমরে রশি বেঁধে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসে চেয়ারম্যানসহ তার লোকজন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম মিরান বলেন, অভিযুক্তদের পরিষদের এনে মেরেছি বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সঠিক না। ওইদিন বিকেল তিনটার দিকে চট্টগ্রাম থেকে এলাকায় ফিরে আসি। পরে গরু চোর আটকের ঘটনাটি জানতে পারি। ঘটনাটি চকরিয়া থানা পুলিশ ও ইউএনওকে ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছি।

তিনি বলেন, সামনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন তাই বিরোধী পক্ষ ফাঁসানোর জন্য নানা ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছে।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মিজানুর রহমান বলেন, আটক চারজনের বিরুদ্ধে শুক্রবার রাতে গরু চুরির অভিযোগে হারবাং বৃন্দাবনখিল গ্রামের মৃত নুর আহমদের পুত্র মাহবুবুল হক (৬১) বাদি হয়ে মামলা করেন।

এর আগে ইউনিয়ন পরিষদ এবং এলাকার লোকজন আটক চারজনের সঙ্গে একটি গরুর বাছুর, ১টি সিএনজি চালিত অটোরিকশা, ১টি স্প্রে ও ১টি কসট্যাব পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।

তিনি বলেন, আটককৃতদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে শনিবার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নে ঘটনার জেরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে জেলা প্রশাসনের উপ-সচিব পদ মর্যাদার কর্মকর্তা শ্রাবস্তী রায়কে প্রধান করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ সামসুল তাবরীজ।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ঘটনারদিন বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জেনেছি। গরু চোরদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার নির্দেশ দিয়েছি।

তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। এতে উপ-সচিব শ্রাবস্তী রায়কে প্রধান করা হয়েছে। এই কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও একজন হারবাং ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসারকে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিজেই খতিয়ে দেখছি। অভিযুক্তরা যদি মনে করে তাদের অপমান বা হয়রানি করা হয়েছে তাহলে তাদের অভিযোগও আমলে নেয়া হবে।’