খাগড়াছড়িতে স্কুলের গেট ভেঙে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

তদন্ত কমিটি গঠন

নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি »

খাগড়াছড়ি জেলা সদরের খবংপড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ প্রধান গেট ভেঙে বুধবার সকালে শ্রাবণ দেওয়ান (৬) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। সে জেলা সদরের খবংপড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থী। শ্রাবণ দেওয়ান খাগড়াছড়ি পৌর শহরের নারানখাইয়া এলাকার বাসিন্দা প্রণয় দেওয়ান ও বাসনা চাকমা’র ছেলে।

এ ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে জেলা পরিষদ। বুধবার বিকালে তিন সদস্যের এ কমিটি করার কথা জানান খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের জনসংযোগ কর্মকর্তা চিংলামং চৌধুরী। চিংলামং চৌধুরী জানান, জেলা পরিষদ সদস্য ও প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের আহ্বায়ক নিলোৎপল খীসাকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াসমিনকে সদস্য সচিব ও পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিমকে সদস্য করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

স্থানীয়রা জানান, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে নির্মিত বিদ্যালয়ের প্রধান গেটটি দীর্ঘদিন ঝুঁকিপূর্ণ থাকলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ মেরামতের কোন উদ্যোগ নেননি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এর দায় এড়াতে পারে না।

খাগড়াছড়ি এলজিইডি’র সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী বেলাল হাসান জানান, সীমানা প্রাচীর ও গেট নির্মাণ শেষে সরকারি নিয়মে স্কুল কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে অনেক আগেই। শুনেছি পাবলিক হেলথ থেকে ওই স্কুলে একটি ওয়াশ ব্লক নির্মাণের সামগ্রী ঢুকানোর জন্য গেটের একাংশ ঠিকাদারের লোকজন কেটে ফেলেছে। এবং কাটা অংশটি ঠিকভাবে মেরামত না করে গাছ দিয়ে রেখেছিল।

তিনি দাবি করেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ বা ডিপিএইচই থেকেও এলজিইডিকে জানানো হয়নি। তবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রেবেকা আহসান জানিয়েছেন, এলজিইডি নির্মিত গেট কেটে নির্মাণ সামগ্রী পৌঁছানোর খবর তার জানা নেই।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক ঝিনু চাকমা মানসিকভাবে বির্পযস্ত থাকায় ফোন ধরেননি। ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক ইলি চাকমা জানান, স্কুলের গেটটি কবে কখন কী হয়েছে কিংবা বিদ্যালয়ে ওয়াশ ব্লক নির্মাণের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

এসএমসি সভাপতি সুমিত চাকমা জানান, মাত্র দু’মাস আগে দায়িত্ব নিয়েছেন। স্কুলে কোথায় কী সমস্যা তা এখনো ভালো করে জানা হয়নি।
এ ঘটনার জন্য এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনরাও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন। স্কুল সংলগ্ন স্বনির্ভর বাজারের ব্যবসায়ী কলিন চাকমা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে গেটটি ভাঙা ছিল। শিক্ষার্থীরা আসা যাওয়ার সময় গেট ধরে খেলা করত। তারপর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গেটটি সরিয়ে না নিয়ে বাঁশের খুঁটি দিয়ে লাগিয়ে রেখেছিল। এটা বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনার সমস্যা।

নিহতের বাবা প্রণয় দেওয়ান বলেন, গেট নির্মাণ সঠিকভাবে করা হয়েছে কিনা যাচাই করা হোক। যাতে তার ছেলে (শ্রাবণ দেওয়ান) এর মতো কাউকে জীবন দিতে না হয়। কোন বাবা মা যেন সন্তান হারা না হয়।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে পুলিশের এ এসআই গোবিন্দ চন্দ্র রায় জানান, স্কুলের গেটটি দীর্ঘ দিন ধরে নড়েবড়ে অবস্থায় ছিল। গেটটি গাছে খুটি দিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল।কিন্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থায় না নেওয়ায় এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে।

ঘটনার পর পর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াছমিন, খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিনিয়া চাকমা ও খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সদস্য প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের আহ্বায়ক নিলোৎপল খীসা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং তদন্ত কমিটি গঠন করে আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম জানান, সকালে মায়ের সাথে বিদ্যালয়ে প্রবেশকালে বিদ্যালয়ের নবনির্মিত লোহার গেটটির পাল্লার একাংশ হঠাৎ ভেঙে তার শরীরের উপরে পড়ে। সেখান থেকে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

খাগড়াছড়ির প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন বলেন, ঘটনার পরপর বিদ্যালয় পরিদর্শন করা হয়েছে। এ ঘটনায় শিক্ষক বা অন্য কারো কোন দায় আছে কিনা তা তদন্তে কমিটি করতে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা প্রশাসক বরাবরে চিঠি দেয়া হচ্ছে।

খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আরিফুর রহমান জানান, স্বজনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে না। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।