ক্রিম মেখে মুখে ফোঁড়া!

বাজারে ভেজাল প্রসাধনীতে সয়লাব

নিজস্ব প্রতিবেদক »

নারীরা ত্বকের যত্ন নিয়ে খুব সচেতন। এরপরও তাদের সচেতনতা ভেজাল প্রসাধনীর কাছে কখনও কখনও হেরে যায়। নগরের পশ্চিম মাদারবাড়ির এইচএসসি শিক্ষার্থী বিবি জয়নাব প্রাঙ্গণ। বাজার থেকে ক্রিম কিনে তা ব্যবহারের পর তার মুখ ভর্তি ফোঁড়া ওঠে। এ ফোঁড়া নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে তিনি জানতে পারেন ভেজাল ক্রিম ব্যবহারের বিষয়টি। ভেজাল পণ্যের ভিড়ে যখন বাজার সয়লাব, তারপরও টনক নড়ছেনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

ফোঁড়ার প্রসঙ্গে বিবি জয়নাব প্রাঙ্গণ বলেন, ‘আমি গত দুবছর ধরে শীতকালে ‘ভিটামিন ই’ নামে একটি ক্রিম ব্যবহার করি। প্রতিবারের মতো এবার নিউমার্কেটের একটি দোকান থেকে ক্রিমটি কিনে আনি। বাসায় এসে রাতে ক্রিম মেখে ঘুমিয়ে পড়ি। সে সময় হালকা চুলকানি হয়েছিলো, তবে তেমন কিছু বুঝতে পারিনি। কিন্তু সকালবেলা ঘুম ভাঙতেই দেখি মুখের চারপাশে হালকা ফোঁড়া ওঠেছে। দুপুরের দিকে তা আরও বাড়তে থাকে। একদিন পর মুখের সম্পূর্ণ অংশে ফোঁড়া ছড়িয়ে পড়ে। চিকিৎসকের কাছে গেলে জানতে পারি ক্রিমটি নকল হওয়ায় পাশর্^প্রতিক্রিয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে কিছু ওষুধ এবং ক্রিমটি ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হয়।’

পরবর্তীতে ওই দোকানে আবার যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এরপর আমিও আমার মা ওই দোকানে যাই। কিন্তু দোকানদার ক্রিমটি যে নকল, তা মানতে রাজি হননি। উল্টো আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। এসব প্রশাসনের দেখার কথা হলেও তারা দেখে না বলেই আমাদের এমন সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়।’

অভিযোগের বিষয়টির সত্যতা জানতে ওই দোকানসহ নিউমাকের্ট ও রিয়াজউদ্দিন বাজারের বেশ কয়েকটি দোকান সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, অসংখ্য দেশি-বিদেশি প্রসাধনী দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে দোকান। ৫০ টাকা থেকে হাজার টাকার পণ্যও পাওয়া যাচ্ছে দোকানগুলোতে। লোশনের মধ্যে আছে জনসন, নিভিয়া, ভ্যাসলিন, মাস্ক লোটাসহ অনেক ক্রিম। এসব ক্রিমে তারিখ থাকলেও বেশ কিছু পণ্যের তারিখ দেখে মনে হয় তা আলাদা কাগজে লাগানো।

বিশেষ করে অভিযুক্ত দোকানে দেখা যায়, আঙ্গুল দিয়ে ঘষলেই ওঠে যাচ্ছে তারিখ। আবার বডি স্প্রের মধ্যে ইমপেরিয়াল লেডিতে নির্দিষ্ট করে তারিখ উল্লেখ নেই। হট ওমেন নামে আরেকটি ক্রিমেও নেই। একই সাথে ‘লাফস’ বডি স্প্রেতে ২/২২ নামে একটি সংখ্যা লক্ষ করা যায়। কিন্তু তা উৎপাদনের তারিখ নাকি মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ তা স্পষ্ট নয়। তবে এই তারিখ থেকে ৩৬ মাস ব্যবহার করা যাবে বলে দাবি করেন দোকানটির কর্মচারী। সাধারণ চোখে মোড়ক দেখে বোঝার সাধ্য নেই, কোনটি আসল ও কোনটি নকল।

এ প্রসঙ্গে বিএসটিআই’র সহকারী পরিচালক (সিএম) মোস্তাক আহমেদ বলেন, আমরা নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি। দেশীয় এবং বিদেশি পণ্যের উৎপাদনের তারিখ এবং মেয়াদোর্ত্তীণের তারিখ থাকা বাধ্যতামূলক। সেটা অবশ্যই থাকতে হবে। বিদেশি আমদানিকৃত পণ্যটির কোটা ছোট হলেও পণ্যের নাম-ঠিকানা, মেয়াদ উৎপাদন এবং উত্তীর্ণের তারিখ, কোন দেশের আমদানি তা অবশ্যই থাকতে হবে। সেই সাথে বাংলাদেশের টাকায় কত টাকা এবং বিএসটিআইয়ের লোগো থাকতে হবে। আমরা সম্প্রতি ভিআইপি টাওয়ার, লাকি প্লাজা ও অ্যাপলোতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি এবং তা অব্যাহত আছে।’

তার কাছে নগরীর নিউমার্কেট, রিয়াজউদ্দিন বাজার, স্যানমারে কবে অভিযান পরিচালিত হয়েছে জানতে চাইলে তিনি তা জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালিত করে চট্টগ্রামে ১৬টি পণ্য বিক্রি একেবারে বন্ধ করে দিই। সেগুলো হলো গৌরি, চান্ডি, নিউ ফেইস, ডিউ, নুর হেল্ট বিউটি ক্রিম, নুর গোল্ড ক্রিম, গোল্ডেন পার্ল, হোয়াইট র্পাল প্লাস, ফাইজা, ফ্রেস এন্ড হোয়াইট, ফেইস লিফট , ফেইস ফ্রেস, ড. রাসেল নাইট ক্রিম, ফোরকে প্লাস, আনেজা গোল্ড, গোল্ড ক্রিম বিক্রি এবং বন্ধের নির্দেশনা দিই। কারণ সেখানে অতিরিক্ত মার্কারি এবং হাইড্রোকুইন পাওয়া যায়। যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। তবে এ মার্কেটগুলোতে কবে অভিযান পরিচালনা করেছি, তা এখন বলতে পারছি না।

তবে অভিযোগের বিষয়টি আমলে নেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অভিযোগটি আমলে নিচ্ছি। আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং মোবাইল কোর্টকে জানিয়ে দিচ্ছি। শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একই প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আনিসুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এমন সমস্যার সম্মুখীন হলে একজন ভোক্তা সরাসরি অফিসে এসে অভিযোগ জানাতে পারবে। একই সাথে ই-মেইলের মাধ্যমেও অভিযোগ জানাতে পারবেন। অভিযোগ পেলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেবো।