কী গ্যান্ট্রি ক্রেনে পরিপূর্ণ হলো চট্টগ্রাম বন্দর

প্রতি ঘণ্টায় শুধু গ্যান্ট্রি ক্রেনেই কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করা যাবে ৫৪০টি

বাড়বে হ্যান্ডেলিং, বাঁচবে দেশের রাজস্ব : চবক চেয়ারম্যান

ভূঁইয়া নজরুল »

২০০৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মাত্র চারটি ‘কী গ্যান্ট্রি ক্রেন’ ছিল চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে। পরবর্তী চার বছরে আরো ১৪টি ক্রেন যুক্ত হলো। আর এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি ও এনসিটি কনটেইনার টার্মিনাল পরিপূর্ণ হলো কী গ্যান্ট্রি ক্রেন দিয়ে। ১৮টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন একযোগে অপারেশন করলে প্রতি ঘণ্টায় ৫৪০ একক কনটেইনার হ্যান্ডেলিং সম্ভব।

গতকাল চীন থেকে আসা নতুন করে দুটি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন নেমেছে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে। এর আগে গত ৭ মে এসেছিল আরো দুটি। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে মোট কী গ্যান্ট্রিক্রেনের সংখ্যা হলো ১৮টি। ২০০৫ সালে চারটি দিয়ে শুরু করার পর ২০১৮ সালে ৩৪৫ কোটি টাকায় দুই দফায় এসেছে ছয়টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন।

পরবর্তীতে ২০১৯ সালে ২৩৮ কোটি ৬১ লাখ টাকায় এসেছে আরো চারটি। সর্বশেষ ২৪২ কোটি টাকায় চলতি বছরে দুই দফায় এলো আরো চারটি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন। ৪০ টন ধারণক্ষমতার এসব গ্যান্ট্রি ক্রেন ১৫ সারি পর্যন্ত পণ্য উঠা-নামা করাতে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডেলিং কাজে নিয়োজিত সাইফ পাওয়ার টেকের ক্যাপ্টেন তানভির হোসাইন বলেন,‘কী গ্যান্ট্রিক্রেন দিয়ে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩০টি কনটেইনার হ্যান্ডেলিং সম্ভব। নতুন করে গতকাল আরো দুটি গ্যান্ট্রি ক্রেন আসায় ১৮টি গ্যান্ট্রি ক্রেন দিয়ে আমরা চাইলে ঘন্টায় ৫৪০টি কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করতে পারবো একযোগে। সেহিসেবে আমরা দ্রুত পণ্য আনলোডিং ও লোডিং শেষ করতে পারবো। পণ্য আনলোডিং করতে সময় কম লাগলেও অফডক থেকে সঠিকসময়ে কনটেইনার আসে না বলে লোডিং করতে সময় বেশি লাগে।’এদিকে বিদ্যমান গ্যান্ট্রি ক্রেনগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি কনটেইনার টার্মিনালে ৪টি রয়েছে এবং বাকিগুলো এনসিটি টার্মিনালে।

গ্যান্ট্রি ক্রেন বাড়ায় লাভ কি হবে?

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেন,‘একসময় চট্টগ্রাম বন্দরের বহিনোর্ঙ্গরে কিংবা সিঙ্গাপুরে কনটেইনার নিয়ে জাহাজগুলোকে বসে থাকতে হতো। এতে আমদানিকারকগণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতো। কিন্তু এখন আর জাহাজ নিয়ে বাইরে থাকতে হবে না। দ্রুত ইয়ার্ডে ভিড়তে পারবে এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আনলোডিং ও লোডিং সম্পন্ন করে জাহাজগুলো চলে যেতে পারবে।’

এতে দেশের রাজস্ব বাঁচবে উল্লেখ করে রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘কনটেইনার নিয়ে বেশি সময় জাহাজে থাকতে হবে না বলে জাহাজ ভাড়া বাঁচবে। একইসাথে কম সময়ে দ্রুত কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করা গেলে কনটেইনারের সংখ্যা বাড়বে এবং দেশের অর্থনীতিতে গতি আসবে।’
চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডেলিং এ কাজ করে আসছে সাইফ পাওয়ার টেক। বন্দরের প্রবৃদ্ধিও সাথে এই অপারেটরের ভূমিকাও কম নয়। সব জেটিতে গ্যান্ট্রি ক্রেন যুক্ত হওয়ায় কনটেইনার হ্যান্ডেলিং এ গতি আসবে উল্লেখ করে সাইফ পাওয়ার টেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিন বলেন, ‘জেটিতে যতো আধুনিক ইকুইপমেন্ট ব্যবহৃত হবে কনটেইনার হ্যান্ডেলিং কার্যক্রম ততো দ্রুত হবে। আর দ্রুত হলে খরচও কমে আসবে এবং লাভবান হবে দেশের অর্থনীতি।’

জাহাজ ভাড়া কমে আসার কথা স্বীকার করে দীর্ঘদিন শিপিং লাইনে কর্মরত থাকা আবদুল্লাহ জহির বলেন,‘ চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে জাহাজগুলোর গড় অবস্থান সময় কমে এলে জাহাজের ভাড়াও কমে আসবে। এতে দেশের রাজস্ব বাঁচবে। একইসাথে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ আসার সংখ্যাও বেড়ে যাবে।’

জেটিতে আর গ্যান্ট্রি ক্রেন যুক্ত করার সুযোগ নেই

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘ বন্দরের জেটিতে আর কোনো গ্যান্ট্রি ক্রেন যুক্ত করার সুযোগ নেই। এখন বন্দরের সক্ষমতা আরো বাড়বে।’

তিনি আরো বলেন, দৃষ্টি এখন পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে (পিসিটি)। আমরা আগামীতে পিসিটি চালু করে সেখানে পণ্য হ্যান্ডেলিং বাড়াতে চাই।’
কিন্তু পিসিটির তো এখনো কোনো ইকুইপমেন্ট কেনা হয়নি। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘ বন্দরের নিজস্ব ইকুইপমেন্ট দিয়ে ইকুইপমেন্ট দিয়ে পিসিটি চালু হবে। বিপরীতে জাহাজ থেকে পণ্য নামাতে জাহাজের ক্রেন ব্যবহার হবে।’

এ বিষয়ে বিভিন্ন শিপিং কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি ও এনসিটি টার্মিনালের সবগুলো ইয়ার্ডে যেহেতু কী গ্যান্ট্রি ক্রেন যুক্ত হয়ে গেছে তাই সেখানে গিয়ারলেস জাহাজ (ক্রেনবিহীন জাহাজ) ভিড়বে। গ্যান্ট্রি ক্রেন দিয়ে জাহাজে পণ্য লোডিং ও আনলোডিং করা হবে। অপরদিকে পিসিটিতে গিয়ারড (ক্রেন রয়েছে এমন জাহাজ) জাহাজ পিসিটিতে ভেড়ানোর সুযোগ দেয়া হবে। এতে জাহাজের নিজস্ব ক্রেন দিয়ে পণ্য লোডিং ও আনলোডিং করা যাবে। বর্তমানে সিসিটি ও এনসিটি টার্মিনালে গ্যান্ট্রি ক্রেন থাকলেও জিসিবিতে ( জেনারেল কার্গো বার্থ) গিয়ারড জাহাজ দিয়ে পণ্য লোডিং ও আনলোডিং করা হয়ে থাকে।

প্রয়োজন এখন বে টার্মিনাল ও মাতারবাড়ি বন্দর

দেশের অর্থনীতি যে গতিতে এগুচ্ছে সেই গতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ছে না উল্লেখ করে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন,‘ বে টার্মিনাল ও গভীর মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর দ্রুত চালু করা প্রয়োজন। অন্যথায় বাধাগ্রস্ত হবে দেশের উন্নয়নের গতি।’

বে টার্মিনালের কথা দেশের ব্যবসায়ী সমাজসহ বন্দর ব্যবহারকারী সকলে বলে আসছে। এই টার্মিনালটি চালু করা গেলে আমদানি রপ্তানিতে আরো গতি আসবে। কিন্তু তা খুব ধীরলয়ে চলছে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের ৯২ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম হয়ে থাকে। প্রতি বছর বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডেলিং পরিমাণ বাড়ছে।