আজ চট্টলবীর মহিউদ্দিন চৌধুরীর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী

নিজস্ব প্রতিবেদক :

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও তিন বারের মেয়র চট্টলবীর এবি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ মঙ্গলবার । ২০১৭ সালের এইদিনে চট্টগ্রামের তথা বাংলাদেশের এই মহান নেতা মৃত্যুবরণ করেন। শুধু চট্টগ্রাম নয়, দেশের নানা রাজনৈতিক সংকটে, আন্দোলনে, সংগ্রামে তিনি ছিলেন আলোচিত রাজনীতিবিদ।
তাঁর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচি পালন করবে।
পাঁচ দশকেরও বেশি সময় নানা রাজনৈতিক সংকটে সম্ভাবনায় চট্টগ্রামের মানুষের পাশে থেকে এই আওয়ামী লীগ নেতা হয়ে উঠেছিলেন ‘চট্টল বীর’। তাঁর মৃত্যুতে প্রশংসা ঝরেছিল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কণ্ঠেও। দল মত নির্বিশেষে সকলের নেতা হয়ে উঠেছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। বিশেষ করে চট্টগ্রামের স্বার্থ ও সংকটের তাঁর অবদান চট্টলবাসী চিরদিন মনে রাখবে। প্রিয় নেতা মৃত্যুর খবর শুনে ২০১৭ সালের এইদিনে শোকের ছায়া নেমে এসেছিল চট্টলার পুণ্যভূমিতে। তাঁর জানাজায় হাজির হয়ে শেষ বিদায় জানিয়েছিল লাখো জনতা। দল মত নির্বিশেষে লাখো মানুষের অংশগ্রহণে সেদিনের জানাজা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল।
রাজনীতিবিদ মহিউদ্দিন চৌধুরীর জন্ম ১৯৪৪ সালের ১ ডিসেম্বর রাউজানের গহিরা গ্রামের বক্স আলী চৌধুরী বাড়িতে। বাবা রেল কর্মকর্তা হোসেন আহমদ চৌধুরী এবং মা বেদুরা বেগম।
ছাত্রাবস্থায় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া মহিউদ্দিন ১৯৬২ সালে এসএসসি, ১৯৬৫ সালে এইচএসসি এবং ১৯৬৭ সালে ডিগ্রি পাস করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ এবং পরে আইন কলেজে ভর্তি হলেও শেষ করেননি। জড়িয়ে পড়েন ছাত্র আন্দোলনে।
১৯৬৮ ও ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা মহিউদ্দিন একাত্তরে গঠন করেন ‘জয় বাংলা’ বাহিনী। গ্রেফতার হন পাকিস্তানি সেনাদের হাতে। পাগলের অভিনয় করে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে পালিয়ে যান ভারতে। সম্মুখ সমরের যোদ্ধা মহিউদ্দিন স্বাধীনতার পর শ্রমিক রাজনীতিতে যুক্ত হন। যুবলীগের নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদ পান। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে মহিউদ্দিন চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের শীর্ষ পদে ছিলেন।
চট্টগ্রামে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, বন্দর রক্ষা আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনেও তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন।
পাঁচ দশকের রাজনৈতিক জীবনে অনেক অর্জন থাকলেও ১৯৯৪ সালে প্রথমবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী হয়েই মহিউদ্দিন চৌধুরী বিজয়ী হন। ২০০০ সালে দ্বিতীয় দফায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং ২০০৫ সালে তৃতীয় দফায় মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। তিন তিনবার নির্বাচিত হয়ে টানা ১৭ বছর তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে ছিলেন। তাঁর আমলে নগরের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা সেবা এখনো চট্টলবাসী ভুলতে পারে না। ২০১৫ সালে আবার মেয়র প্রার্থী হলেও দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে তিনি মেয়র প্রার্থী থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন। তবে বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য চট্টলবীর মহিউদ্দিন চৌধুরী মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। যে মাসে তাঁর জন্ম, সে বিজয়ের মাসে এই মহান বীরের মৃত্যু এখনো চিরস্মরণীয় হয়ে আছে চট্টলবাসীর মনে।