কার হাতে উঠছে শিরোপা

আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স ফাইনাল

সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক »

শিরোপা লড়াইয়ে আজ রোববার আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হবে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। লুসাইল স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায়। কোটি কোটি ফুটবল ভক্তদের চোখ থাকবে আজকের ফাইনাল ম্যাচে। মেসি নাকি এমবাপে কার হাতে উঠছে শিরোপা? দুই দলই তাকিয়ে নিজেদের তৃতীয় শিরোপা ঘরে তোলার দিকে। ফ্রান্সকে তো হাতছানি দিচ্ছে দারুণ এক কীর্তি। তৃতীয় দল হিসেবে টানা দুটি বিশ্বকাপ শিরোপা জেতার সুযোগ তাদের সামনে। এই অর্জন আছে আর কেবল ইতালি ও ব্রাজিলের। আর আর্জেন্টিনা মুখিয়ে আছে বিশ্বমঞ্চে তাদের ৩৬ বছরের শিরোপা খরা কাটাতে। সবশেষ শিরোপা তারা জিতেছিলে ১৯৮৬ সালে, কিংবদন্তি দিয়েগো মারাদোনার অসাধারণ নৈপুণ্যে।

দুই মহাদেশের লড়াইয়ে লাতিনরা ঢের এগিয়ে। বিশ্বকাপের ফাইনালে এ পর্যন্ত মোট ১০ বার মুখোমুখি লড়াই করেছে লাতিন ও ইউরোপ। যার মধ্যে সাতবারই শিরোপা ঘরে তুলেছে লাতিনরা। বিপরীতে ইউরোপের জয় মাত্র তিনটিতে। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের ফাইনাল হতে যাচ্ছে এই দুই মহাদেশের মধ্যকার ১১তম ফাইনাল। এবার কি লাতিনদের আরও একবার এগিয়ে যাওয়া নাকি ইউরোপের ব্যবধান কমানো?

লাতিন ইউরোপের মোট ১০বার দেখার মধ্যে ছয়বারই ফাইনালে খেলেছে ব্রাজিল। যার মধ্যে ব্রাজিল পাঁচবার শিরোপা ঘরে তুলেছে আর হেরেছিল একটিতে। অন্যদিকে আর্জেন্টিনা মোট চারবার বিশ্বকাপের ফাইনালে ইউরোপীয়দের বিপক্ষে খেলেছে। যার মধ্যে দুটিতে জিতেছে আর্জেন্টিনা আর হেরেছে বাকি দুটিতে। এবার পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে ইউরোপীয়দের বিপক্ষে লড়বে আলবেসিলেস্তেরা।

১৯৫৮ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে লড়াই হয়ে লাতিন-ইউরোপের। সেবার সুইডেনকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ব্রাজিল। ১৯৬২ সালে চেক প্রজাতন্ত্রকে হারিয়ে আবারও শিরোপা ঘরে তোলে ব্রাজিল। ১৯৭০ সালে ইতালিকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতে ব্রাজিল। ১৯৭৮ সালে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে প্রথম শিরোপা জেতে আর্জেন্টিনা। এরপর ১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনা জার্মানিকে হারিয়ে দ্বিতীয় শিরোপা জেতে। এরপর ১৯৯০ সালে এসে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো লাতিন ইউরোপ লড়াইয়ে ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে আসে জার্মানি। ১৯৯৪ সালে ইতালিকে হারিয়ে চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপ জেতে ব্রাজিল। ১৯৯৮ সালে আবারও ইউরোপের কাছে পরাজিত হয় লাতিন। সেবার ব্রাজিলকে হারায় ফ্রান্স। পরের বছর অবশ্য শোধ তোলে লাতিন। ২০০২ সালে জার্মানিকে হারিয়ে আবারও শিরোপা জেতে ব্রাজিল। এর ১২ বছর পর ব্রাজিল বিশ্বকাপে লাতিন-ইউরোপ ফাইনালের লড়াই। এবার আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে শিরোপা জেতে জার্মানি। আর ইউরোপ-লাতিন লড়াইয়ের ব্যবধান দাঁড়ায় লাতিনদের পক্ষে সাত জয় আর ইউরোপের পক্ষে তিন জয়।

এবার ২০২২ সালে আবারও বিশ্বকাপের ফাইনালে লাতিন-ইউরোপ লড়াই। এবার আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের লড়াই। এবার দেখার পালা লাতিন আরও এক ধাপ এগিয়ে যায় নাকি ইউরোপ সেই ব্যবধান কমায়।

আর্জেন্টিনার সম্ভাব্য একাদশ
অসাধারণ ফর্মে থেকে কাতারে পা দিয়েই অঘটনের শিকার হয় আর্জেন্টিনা, সৌদি আরবের বিপক্ষে বিব্রতকর হার। মাঝে আঘাত হানে আনহেল দি মারিয়া ও আলেহান্দ্রো গোমেসের চোট, কার্ডের খাড়ায় সেমি-ফাইনালে খেলতে পারেননি আরও দুজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়; মার্কোস আকুনিয়া ও গনসালো মনতিয়েল। তবে সব ধাক্কা কাটিয়ে টানা পাঁচ জয়ে স্বপ্ন ছোঁয়ার খুব কাছে পৌঁছে গেছে লিওনেল স্কালোনির দল।

বিশ্ব সেরার মঞ্চে ৩৬ বছরের শিরোপা খরা কাটানোর লক্ষ্যে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা। লুসাইল স্টেডিয়ামে আজ রোববার রাত ৯টায় শুরু হবে ফাইনাল। গণমাধ্যমের খবর, ফাইনালের জন্য পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন দি মারিয়া। নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্ত আকুনিয়া ও মনতিয়েলও।

প্রতিপক্ষ অনুযায়ী সব সময় দলে পরিবর্তন আনেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক লিওনেল স্কালোনি। বিশ্বকাপে ৪-৩-৩, ৪-৪-২, ৫-৩-২ ফর্মেশনে খেলিয়েছেন তিনি। ফ্রান্সের বিপক্ষে কেমন ফর্মেশন বেছে নেবেন, একাদশে কাকে রাখবেন সেটা সময়ই বলে দেবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স ফাইনালের সম্ভাব্য একাদশ নিয়ে লিখেছে।

এমিলিয়ানো মার্তিনেস
প্রথম ম্যাচে দুই গোল হজম করলেও এর পর থেকে পোস্টের নিচে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেস। নকআউট পর্বের প্রথম ধাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২-১ গোলে জেতা ম্যাচের শেষের দিকে তিনি দারুণ কিছু সেভ করেন। এরপর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে কোয়ার্টার-ফাইনালে টাইব্রেকারে ৩০ বছর বয়সী এই ফুটবলার ছিলেন নায়ক। ঠেকিয়ে দেন দুটি পেনাল্টি, দল জেতে ৪-৩ ব্যবধানে।

সেমি-ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে অবশ্য কোনো কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হয়নি তাকে। কার্টুন চরিত্র ‘দিবু’ ডাকনামে পরিচিত মার্তিনেসের পারফরম্যান্স ফাইনালে লাতিন আমেরিকার দেশটির জন্য মহাগুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

ক্রিস্তিয়ান রোমেরো
ফেভারিট হিসেবে বিশ্বকাপ শুরু করা আর্জেন্টিনাকে প্রথম ম্যাচেই চমকে দিয়ে ২-১ গোলে জিতেছিল সৌদি আরব। ওই ম্যাচে সেন্টার-ব্যাক ক্রিস্তিয়ান রোমেরোর পারফরম্যান্স ভালো ছিল না। তবে পরের পাঁচ ম্যাচের অজেয় যাত্রায় বড় অবদান রাখেন ২৪ বছর বয়সী এই ফুটবলার।

নিকোলাস ওতামেন্দি
সেন্ট্রাল ডিফেন্সে রোমেরোর সঙ্গী তার থেকে ১০ বছরের বড় নিকোলাস ওতামেন্দি। আসরে এখন পর্যন্ত দলের সফল যাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন বেনফিকার এই খেলোয়াড়।

প্রায় সব প্রতিযোগিতাতেই আর্জেন্টিনার রক্ষণ নিয়ে থাকে দুর্ভাবনা, তবে এবার তাদের রক্ষণ বেশ জমাট। যদিও সৌদি আরবের বিপক্ষে পাঁচ মিনিটে দুই গোল হজম করে ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচে নির্ধারিত সময়ের শেষের দিকে নড়বড়ে হয়ে পড়ে তারা।

নাহুয়েল মোলিনা
জাতীয় দলের হয়ে গত বছরের মাঝামাঝি অভিষিক্ত নাহুয়েল মোলিনা অল্প সময়ের মধ্যেই লিওনেল স্কালোনির দলে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে দলের প্রথম গোলটি করেছিলেন এই রাইট-ব্যাক, যা আর্জেন্টিনার হয়ে তার প্রথম।

নিকোলাস তাগলিয়াফিকো
দুটি হলুদ কার্ড দেখায় ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে সেমি-ফাইনাল মিস করেন মার্কোস আকুনিয়া। তার জায়গায় খেলা লেফট-ব্যাক নিকোলাস তাগলিয়াফিকো ক্রোয়াটদের বিপক্ষে ভালো খেলেন, রক্ষণে যোগ করেন দৃঢ়তা। তারপরও ফাইনালে স্কালোনি আক্রমণাত্মক কৌশল নিলে শুরুর একাদশে জায়গা হারাতে পারেন ৩০ বছর বয়সী তাগলিয়াফিকো, ফিরতে পারেন আকুনিয়া।

লেয়ান্দ্রো পারেদেস
চলতি বিশ্বকাপে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের ছয় ম্যাচের চারটিতে খেলেছেন মিডফিল্ডার লেয়ান্দ্রো পারেদেস। সেমি-ফাইনালেও ছিলেন শুরুর একাদশে। তবে ফাইনালে স্কালোনি পাঁচ ডিফেন্ডার নিয়ে দল সাজালে লিসান্দ্রো মার্তিনেস আসতে পারেন পারেদেসের জায়গায়। আবার আনহেল দি মারিয়া শুরুর একাদশে ফিরলেও বেঞ্চে বসতে হতে পারে ২৮ বছর বয়সী পারেদেসকে।

রদ্রিগো দে পল
স্কালোনির কৌশলে খুব গুরুত্বপূর্ণ ২৮ বছর বয়সী রদ্রিগো দে পল। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে কোয়ার্টার-ফাইনালে তিনি খেলেছেন চোট নিয়ে। ভক্তদের কাছে ২৮ বছর বয়সী এই ফুটবলার হয়ে উঠেছেন অধিনায়ক লিওনেল মেসির অনানুষ্ঠানিক ‘বডিগার্ড।’

আলেক্সিস মাক আলিস্তের
প্রিমিয়ার লিগে ব্রাইটন অ্যান্ড হোভ অ্যালবিয়নের হয়ে খেলা মিডফিল্ডার আলেক্সিস মাক আলিস্তেরের জাতীয় দলে অভিষেক ২০১৯ সালে। এরপর দল থেকে বাদ পড়েন তিনি এবং এই বছর স্কালোনির দলে ফেরার পর জায়গা করে নেন বিশ্বকাপের স্কোয়াডে। গ্রুপ পর্বে দ্বিতীয় ম্যাচে পোল্যান্ডের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে জয়ের ম্যাচে আর্জেন্টিনার জার্সিতে প্রথম গোল করেন ২৩ বছর বয়সী আলিস্তের।

এনসো ফের্নান্দেস
মেক্সিকোর বিপক্ষে গোল করে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা এখন এনসো ফের্নান্দেস। শেষ ষোলোয় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তার আত্মঘাতী গোলে শঙ্কায় পড়ে যায় আর্জেন্টিনা, শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি ২-১ গোলে জেতে তারা।

হুলিয়ান আলভারেস
চলতি মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দেওয়া হুলিয়ান আলভারেস কাতারে নিজেকে চেনাচ্ছেন নতুন করে। ক্লাব পর্যায়ে তারকা স্ট্রাইকার আর্লিং হলান্ডের জন্য সেভাবে পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে আসতে না পারা এই আর্জেন্টাইন বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত চার গোল করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে সেমি-ফাইনালের দুটি। লিওনেল মেসির সঙ্গে দারুণ জুটি গড়ে তুলেছেন ২২ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার।

লিওনেল মেসি
নিজের শেষ বিশ্বকাপে দেশকে তৃতীয়বারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করার মিশনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন লিওনেল মেসি। রেকর্ড সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী আছেন দারুণ ছন্দে। পাঁচ গোল করে ফরাসি ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপের সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ গোলের তালিকায় শীর্ষে আছেন তিনি।

দিদিয়ে দেশমের দলের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হবে মেসিকে সামলানো, আর আর্জেন্টিনার ভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করবে পিএসজি ফরোয়ার্ড কেমন করবেন, তার ওপর।

‘একটি পরিবর্তন’ নিয়ে নামতে পারে ফ্রান্স
করিম বেনজেমা, পল পগবার মতো তারকা ছাড়াই খেলতে হচ্ছে বিশ্বকাপ। তাতে কী, দলের বাকিরাও যে কম যান না তার প্রমাণ এরই মধ্যে দিয়েছে ফ্রান্স। কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো জায়গা করে নিয়েছে তারা ফাইনালে। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে শিরোপা লড়াইয়ের ম্যাচে নিয়মিত শুরুর একাদশ নিয়েই নামার সম্ভাবনা বেশি কোচ দিদিয়ে দেশমের।

তবে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা লিওনেল মেসির কথা মাথায় রেখে রক্ষণের শক্তি বাড়ানোর দিকে নজর দিতে পারেন তিনি। এক্ষেত্রে শুরুর একাদশে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারেন রাশিয়া আসরে ফ্রান্সকে দ্বিতীয় শিরোপা এনে দেওয়া এই কোচ।

উগো লরিস
সাধারণত বড় টুর্নামেন্টে সময় গড়াতে নিজেকে মেলে ধরা শুরু করেন উগো লরিস। বিশেষ করে, নকআউট পর্বে তার পারফরম্যান্স নজর কাড়ে সবার। ফ্রান্সের প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক তিনি। এক দশকের বেশি সময় ধরে দলটিকে দিচ্ছেন নেতৃত্ব। প্রথম অধিনায়ক হিসেবে দুটি বিশ্বকাপ জেতার অনন্য রেকর্ডের হাতছানি তার সামনে।

গোল পোস্টের নিচে বিশ্বের সেরাদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয় লরিসকে। যদিও, পেনাল্টি শুটআউটে তার রেকর্ড খুব একটা ভালো নয়। তাই ১২০ মিনিটের পর টাইব্রেকারে ম্যাচ গড়ানো কোনোভাবেই চাইবে না ফ্রান্স।

জুল কুন্দে
ক্লাব ফুটবলে বার্সেলোনার সেন্টার ব্যাক হিসেবে খেলেন কুন্দে। কিন্তু চোটের কারণে বিশ্বকাপে তাকে রাইট ব্যাক হিসেবে খেলাতে হচ্ছে দেশমকে। ওই পজিশন অবশ্য দারুণ উপভোগ করছেন কুন্দে, যা তার পারফরম্যান্সেই ফুটে ওঠে। রক্ষণে নিখুঁত কুন্দে যদিও এখন পর্যন্ত নিজেকে পুরোপুরি মেলে ধরতে পারেননি, তবে বিশ্বকাপে তার সামগ্রিক পারফরম্যান্স বেশ সন্তোষজনক।

রাফায়েল ভারানে
ফ্রান্স দলের সহ-অধিনায়ক ভারানে, রক্ষণ বিভাগের নেতা। আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হ্যামস্ট্রিং চোটে খেলতে পারেন নি তিনি। এরপর থেকে ক্রমাগত উন্নতি হয়েছে তার। লিওনেল মেসি এবং হুলিয়ান আলভারেসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে তার অভিজ্ঞতা ও ঠা-া মস্তিষ্ক চাবিকাঠি হতে পারে ফরাসিদের জন্য।

দায়দ উপেমেকানো
রক্ষণের সঙ্গে বল নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সামর্থ্যও আছে উপেমেকানোর। পাল্ট-আক্রমণে যেতে ফ্রান্সকে যেটা বেশ সহায়তা করবে। রক্ষণে নিখুঁত হওয়ার পরিচয় দিয়েছেন তিনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার-ফাইনালে। ম্যাচের শুরুর দিকে হ্যারি কেইনকে দারুণভাবে রুখে দিয়েছিলেন তিনি। একটু এদিক-সেদিক হলেই পেনাল্টি পেতে পারত ইংলিশরা।

ইব্রাহিমা কোনাতে
পরিবর্তনটা এখানেই করতে পারেন দেশম। ফাইনালে দায়দ উপেমেকানোর জায়গায় তিনি শুরুর একাদশে রাখতে পারেন ইব্রাহিমা কোনাতেকে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ভারানে না থাকায় সুযোগ পান কোনাতে এবং দারুণ পারফরম্যান্স উপহার দেন।

তিউনিসিয়ার বিপক্ষে ১-০ গোলে ফ্রান্স হারলেও নিজের দায়িত্ব বেশ ভালোভাবেই পালন করেন কোনাতে। অসুস্থতায় উপেমেকানো ছিটকে গেলে মরক্কোর বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে আরেকটি সুযোগ পান কোনাতে। নিজেকে মেলে ধরেন তিনি ওই ম্যাচেও। মরক্কোর দারুণ সব আক্রমণ প্রতিহত করতে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ফাইনালে তাকে খেলাতেই পারেন দেশম।

থিও এরনঁদেজ
থিও সুযোগ পান তার ভাই লুকা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে হাঁটুতে চোট পাওয়ায়। এখন পর্যন্ত আর মাঠেই নামতে পারেননি লুকা। সুযোগ দুই হাতে লুফে নিয়ে এখন ফ্রান্সের নিয়মিত সদস্য হয়ে উঠেছেন থিও। গোলের সুযোগ তৈরি করার ক্ষেত্রে বেশ ভয়ঙ্কর হতে পারেন তিনি। সেমি-ফাইনালে মরক্কোর বিপক্ষে প্রথমে দলকে এগিয়ে নিয়েছিলেন থিও।

অঁতোয়ান গ্রিজমান
এবারের বিশ্বকাপে নতুন এক গ্রিজমানকে দেখা যাচ্ছে। মূলত ফরোয়ার্ড হলেও তাকে মিডফিল্ডার হিসেবে খেলাচ্ছেন দেশম। আর দায়িত্বটি বেশ উপভোগ করছেন এই ফুটবলার।

বার্সেলোনায় বাজে সময় কাটানোর পর আতলেতিকো মাদ্রিদে গিয়ে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিতে ভুগছিলেন গ্রিজমান। তাকে উজ্জীবিত করে তোলেন দেশম। নতুন ভূমিকায় আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি। ফ্রান্সকে ফাইনালে তোলার পথে সবচেয়ে বড় অবদান তার। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার দুর্দান্ত ক্রস থেকেই ম্যাচ জেতানো গোলটি করেছিলেন অলিভিয়ে জিরুদ।

অহেলিয়া চুয়ামেনি
ফরাসিদের রক্ষণের সামনে মূল খেলোয়াড় তিনি। আক্রমণাত্মক মানসিকতার দলে তার ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, দলের ভারসাম্য ধরে রাখতে। আর সেই কাজ দারুণভাবে করে যাচ্ছেন তরুণ চুয়ামেনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৫ গজ দূর থেকে তার গোলই প্রমাণ করে, আক্রমণেও প্রতিপক্ষের জন্য হুমকি হতে পারেন তিনি।

আদ্রিওঁ রাবিও
মাঝমাঠে তার কার্যক্রম রক্ষণে এমবাপের সহযোগিতার অভাব পুষিয়ে দেয়। রাবিওর গতি ও নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার মানসিকতা বিশ্বকাপে তাকে ফ্রান্স দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ে পরিণত করেছে। মরক্কোর বিপক্ষে তার অনুপস্থিতি চোখে পড়ার মতো ছিল। প্রতিপক্ষের বক্সের বাইরে থেকেও বিপজ্জনক হতে পারেন তিনি।

উসমান দেম্বেলে
তার ড্রিবলিং সামর্থ্য ও গতি প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের জন্য রীতিমত দুঃস্বপ্নের মতো। প্রয়োজনের সময় রাইট ফ্ল্যাঙ্কে রক্ষণেও কার্যকর ভূমিকা রাখছেন তিনি। যদিও সময়ের সঙ্গে দেম্বেলে ম্লান হয়ে যাচ্ছেন। ফাইনালে তাকে জ্বলে ওঠতে দেখতে চাইবে ফ্রান্স।

অলিভিয়ে জিরুদ
বিশ্বকাপের আগ মুহূর্তে করিম বেনজেমা চোটে ছিটকে পড়ায় শুরুর একাদশে সুযোগ পান জিরুদ। নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়ে চলেছেন তিনি প্রতিটি ম্যাচে। চলতি বিশ্বকাপেই গড়েছেন ফ্রান্সের হয়ে সর্বোচ্চ গোল করার কীর্তি। কোয়ার্টার-ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো গোলটি ছিল তার। এমবাপের সঙ্গে তার বোঝাপড়া ফ্রান্স দলের আক্রমণভাগের মূল শক্তি। শেষ চারে মরক্কোর বিপক্ষে নিষ্প্রভ ছিলেন জিরুদ। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে তিনি জ্বলে উঠবেন, আশায় থাকবে ফরাসিরা।

কিলিয়ান এমবাপে
ফ্রান্স দলের তারকা এমবাপে। টুর্নামেন্টের শুরুটা ছিল তার দুর্দান্ত। প্রথম ৪ ম্যাচেই পেয়ে যান পাঁচ গোল। বিধ্বংসী গতি, ছোট জায়গায় ড্রিবল করার ক। ক্ষমতা এবং গতিময় শটের জন্য প্রতিপক্ষের ভয়ের কারণ তিনি।

ইংল্যান্ড ও মরক্কোর বিপক্ষে গোল করতে ব্যর্থ এমবাপে। তবে যেকোনো সময় যে ম্যাচের ভাগ্য বদলে দিতেন পারেন তিনি, প্রমাণ দিয়েছেন অনেকবারই। আগামী ২০ ডিসেম্বর তার ২৪তম জন্মদিন। দুই দিন আগে বিশ্বকাপ জিতে উপলক্ষটা যে রাঙাতে চাইবেন সময়ের সেরা ফরোয়ার্ডের একজন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।