কাজে ধীরগতি, ভাঙা সড়কে দুর্ভোগ

কক্সবাজারে পৌরসভা সড়ক

অবৈধ টমটমে বাড়ছে যানজট

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »
কক্সবাজার পৌরসভার সড়কের উন্নয়ন কাজের ধীরগতিতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন পর্যটক ও স্থানীয় জনসাধারণ। বৃষ্টির পানি সড়কে জমাটের ফলে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। এদিকে অবৈধ টমটমের দখলে মহাসড়ক, বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা।
জানা গেছে, কাজের ধীর গতির কারণে চরম আকার ধারণ করেছে সড়কগুলো। হাঁটার কোন জায়গা নেই। এছাড়া বৃষ্টির পানি সড়কে জমাটের ফলে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। সংস্কারকাজে ছোট বড় গর্তের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি। পানি জমে গেলে সড়কের কোথায় গর্ত আর কোথায় সমতল তা বুঝার উপায় নেই। যার ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা। সবে মাত্র শুরু বর্ষাকালের। পুরো বর্ষা মৌসুম কিভাবে কাটাবেন পৌরবাসী! এমন প্রশ্ন অনেকের।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এখন শহরের সড়ক-উপ সড়কে ড্রেনের কাজ প্রায় শেষ হলেও সেখানে দখল করে বসেছে ফুটপাত ব্যবসায়ীরা। তাদের কাছ থেকে প্রতিদিন পৌরসভার কতিপয় কর্মচারী ও সরকার দলীয় কথিত নেতা-কর্মীরা চাঁদা নেন। সূত্র জানায়, পা-দিয়ে চালিত রিকশা-ভ্যানের সঙ্গে মোটর যুক্ত করে তাকে বানানো হয়েছে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, অটোভ্যান। বিদ্যুতে চার্জ হওয়া এসব অটোরিকশা, অটোভ্যান এখন চষে বেড়াচ্ছে পুরো শহর। একইভাবে পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা ছেয়ে গেছে ইজিবাইকে। অবৈধ এসব পরিবহন বন্ধে নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে এর কোন প্রতিফলন নেই। দুর্ঘটনায় পতিত হলে গাড়িটি আইনগতভাবে আটক করার তেমন সুযোগ নেই। বলতে গেলে পৌর কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় কর্ণপাত নেই অটোরিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইকের মালিক, চালকদের। আগত পর্যটক ও স্থানীয়দের চাপের মুখে মাঝেমধ্যে পৌরসভা ও প্রশাসন নামেমাত্র অভিযান চালালেও এর স্থায়ী কোন সমাধান নেই বললেই চলে।
কক্সবাজার শহরের লিংকরোড, বাসটার্মিনাল, কলাতলি, বাজারঘাটা, গোলদীঘিপাড়, পৌরসভা চত্বর, বৈদ্যঘোনা, ঘোনারপাড়া, কালুরদোকান, আলীরজাহাল, লালদীঘিপাড়সহ সকল এলাকাতেই দেখা মিলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা এবং অবৈধ টমটমের।
কক্সবাজার শহরে একাধিক সড়ক থাকলেও প্রধান সড়কটিই একমাত্র যানবাহন চলাচলের কিছুটা উপযোগী। এদিকে কক্সবাজার-সমিতিপাড়া সড়কে বড় বড় গর্তের কারণে যানবাহন চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। অথচ এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার শুঁটকি, মাছ ইত্যাদি যাচ্ছে দেশের বিভিন্নস্থানে। এছাড়াও শহরের সড়ক উন্নয়নের গাড়িগুলোও বিভিন্ন মালামাল নিয়ে চলছে এই সড়ক দিয়ে। বর্তমানে এই সড়কের বেহাল অবস্থা।
শহরের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো দখল বেদখলে ভরপুর। তাই প্রধান সড়কেই চাপ পড়ে সব ধরনের যানবাহনের। কক্সবাজার শহরকে যানজটমুক্ত করতে পৌর কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসন শহরে বড় যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করলেও রহস্যজনক কারণে ঢুকে পড়ে বিভিন্ন পণ্য পরিবহনের ট্রাক ও কুরিয়ার সার্ভিসের বড় বড় গাড়িগুলো। তবে ছোট যানবাহন চলাচলের সুযোগে টমটম নামের ইজিবাইকগুলো দখল করে নেয় কক্সবাজার শহরের রাস্তা-ঘাট। ধোয়ামুক্ত পরিবেশ সম্মত হওয়ায় প্রশাসন শহরে ইজিবাইকগুলোর চলাচল পারমিট করে। কিন্তু এই সুযোগে শহরে প্রয়োজনের চার গুণ বেশী ইজিবাইক চলাচলের কারণে সৃষ্টি হয় নতুন করে টমটম জট।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কক্সবাজার শহরে যে পরিমাণ টমটমের প্রয়োজন তার চার গুণ বেশি টমটম চলাচল করছে। এসব টমটম ২ হাজার ৫০০ শত এর মত অনুমতি থাকলেও অন্য গুলোর কোন অনুমতি নেই কোন কর্তৃপক্ষের। তার পরেও ১০ হাজারের অধিক টমটম নির্বিঘ্নে চলাচল করছে শহরে এমন অভিযোগ পৌরবাসীর।
কক্সবাজারস্থ দুর্নীতি দমন কমিশনের পিপি অ্যাডভোকেট মো. আবদুর রহিম জানান, অধিকাংশ টমটম চালক আনাড়ি ও অপরিপক্ক। চালকদের অনেকেই সাগরে মাছ ধরার কাজ করত, সেখানে মন্দা দেখা দেয়ায় শহরে এস টমটম চালানো শুরু করে। আবার কেউ ছিল রিকশা চালক, এখন হয়ে গেছে টমটম চালক। অথচ কারো কোন প্রশিক্ষণ এবং অভিজ্ঞতা নেই। তাই রাস্তায় দেখা যায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা। এছাড়াও এসব হাজার হাজার টমটম প্রতিদিন অবৈধ সংযোগে বিদ্যুৎ চুরি করে শহরবাসীর বিড়ম্বনা বাড়ালেও যেন দেখার কেউ নেই। অধিকাংশ ফিটনেসবিহীন টমটমের লাইট জ¦লেনা। রাতের বেলায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়েও ঘটে দুর্ঘটনা। কত মানুষ যে এই টমটমের কারণে অকালে প্রাণ হারিয়েছে ও পঙ্গুত্ব বরণ করেছে তার কোন হিসেব নেই।
কক্সবাজার সরকারি কলেজের অনার্স পড়ুয়া ছাত্র অরূপ আক্ষেপ করে বলেন, প্রতিনিয়ত টমটমের হয়রানি আর জটলা অসহ্য হয়ে গেছি। অপরদিকে সড়কের অবস্থাও বেহাল।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা রিদুয়ানুল করিম জানান, অনেকবছর পর কক্সবাজার বেড়াতে এসেছি। এসে খপ্পড়ে পড়লাম টমটম চালকের। বাস থেকে কলাতলি মোড়ে নেমে কোন ভাড়া দিতে হবে না বলে গাড়িতে তুলে একটি নিম্ন হোটেলে নিয়ে গিয়ে রুম প্রতি ২৫০০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
বাসটার্মিনাল থেকে জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা করতে আসা টেকনাফের মো. আলী বলেন, সড়ক ঠিক না হওয়া পর্যন্ত কক্সবাজার আসব না। তার স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে কাদা মাখা সড়কে আসতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লেগেছে। এভাবে হয়রানি হলে মানুষ তো এমনিতেই কক্সবাজার আসবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ট্রাফিক বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, কক্সবাজার পৌরসভায় আড়াই হাজার মত টমটম চলাচলের সুযোগ থাকলেও এখন আসলে কত টমটম চলাচল করে তা তিনি জানেন না। পৌর কর্তৃপক্ষ এগুলোর অনুমোদন কর্তৃৃপক্ষ হলেও শহরে চলাচলকারী অসংখ্য টমটম হচ্ছে লাইসেন্সবিহীন। তবে ট্রাফিক পুলিশ অবৈধ টমটমের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, শহরে ৬/৭ হাজার মত টমটম চলাচল করলেও পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমতি আছে আড়াই হাজারের মত। তবে অবৈধ চলাচলকারী টমটমের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়ে থাকে। এই পরিমাণ অবৈধ টমটমের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার জন্য পৌরসভা ও জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত রয়েছে।