কর্ডলাইনে আশার আলো!

ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াতে সময় ও অর্থ সাশ্রয়

শুভ্রজিৎ বড়ুয়া »

সময় ও অর্থ উভয় দিক থেকে রেলকে আরো সাশ্রয়ী করতে চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে কর্ডলাইন বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছে রেলওয়ে। এতে ঢাকা থেকে টঙ্গী ঘুরে না এসে সরাসরি লাকসাম স্টেশনে হয়ে চট্টগ্রাম আসার দূরত্ব ৩২১ কিলোমিটার থেকে কমে ২৩০ কিলোমিটার হবে। পাশাপাশি ঢাকা থেকে কক্সবাজার চলাচলে শহরের অভ্যন্তরে চট্টগ্রাম স্টেশনে ট্রেন না এনে কর্ডলাইনের মাধ্যমে পাহাড়তলী থেকে ট্রেন সরাসরি কক্সবাজার নেওয়ার জন্যও কাজ শুরু করছে রেলওয়ে।
জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথকে গতিশীল করার পরিকল্পনা প্রায় ৫৪ বছরের পুরানো। এ পরিকল্পনায় নারায়ণগঞ্জ থেকে লাকসামে একটি কর্ডলাইন বসানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসতে টঙ্গী, নরসিংদী, ভৈরববাজার, আখাউড়া, কুমিল্লা স্টেশন আর ঘুরতে হবে না। ফলে দূরত্ব কমবে প্রায় ৯১ কিলোমিটার। ১৯৬৯ সালের এ পরিকল্পনাটির পুনরায় সাম্ভাব্যতা যাচাই করা হলেও পুরানো লাইনটি মিটার গেজের পাশাপাশি ব্রডগেজ করতে সময় নিচ্ছে সংস্থাটি।
কর্ডলাইন প্রসঙ্গে রেলের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের কর্ডলাইনটি স্থাপনের সাম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ প্রায় শেষ। ইতোমধ্যে আখউড়া থেকে লাকসামের রেললাইন ব্রডগেজের কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে ডুয়েলগেজ (মিটারগেজ ও ব্রডগেজ) লাইনে রেল চলছে। পুরো রুটের কাজ কখন শেষ হতে পারে- এ তথ্য মেলেনি।
অন্যদিকে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাতায়াতের জন্য প্রাথমিকভাবে আপাতত চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে কিছু সময়ের জন্য ট্রেন রেখে ইঞ্জিন ঘুরিয়ে কক্সবাজার অভিমুখে যাত্রা করলেও পরবর্তীতে পাহাড়তলী থেকে ঝাউতলা পর্যন্ত আরেকটি কর্ডলাইন বসিয়ে সরাসরি ট্রেন নেওয়ার কথা ভাবছে সংস্থাটি। এতে করে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে গিয়ে ইঞ্জিন ঘুরিয়ে আনা পর্যন্ত অপেক্ষার ভোগান্তি হবে না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
জানা গেছে, ঢাকা-কক্সবাজার রুটের পাহাড়তলী থেকে ঝাউতলা কর্ডলাইন বসানোর সাম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ করে এ কাজ শুরু করা হবে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে কথা হয় রেল মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব শেখ সাকিল উদ্দিন আহমদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কর্ডলাইনের পুরো প্রকল্পের কাজে অর্থায়ন করবে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। এরমধ্যে পাহাড়তলী থেকে ঝাউতলা কর্ডলাইনের কাজের বাজেট এখনো নিশ্চিত হয়নি। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে এ প্রকল্পের বাজেট করে ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে। এ প্রকল্পটি শেষ হতে বেশ সময়ের প্রয়োজন হবে। তাই এ কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম স্টেশনে কিছু সময় বিরতি দিয়ে ইঞ্জিন পরিবর্তন করে কক্সবাজারের উদ্দেশে ট্রেন ছাড়বে।’
নারায়ণগঞ্জ থেকে লাকসামের কর্ডলাইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে লাকসামের কর্ডলাইনের বিষয়টি পুরানো হলেও এখনো সাম্ভাব্যতা যাচাইয়ের আপগ্রেডেশন ছাড়া তেমন কোনো কাজ শুরু করা হয়নি। ওটাও দ্রুত সময়ে করার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি মিটারগেজের লাইনগুলো ব্রডগ্রেজ করার কাজ চলছে। কর্ডলাইন তৈরি হলে রেলপথের দুরত্ব কমবে এবং ব্রডগেজ হলে গতিও বাড়বে। এ কারণে রেলে যাতায়াত বাড়বে, আয়ও বাড়বে। বলা যায়, কর্ডলাইনগুলো চালু হলে রেলের আমূল পরিবর্তন আসবে।’
জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, বর্তমান সরকার রেল উন্নয়নে আমূল পরিবর্তন আনছে। আমরা রেলকে অত্যাধুনিকভাবে সাজাতে একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের পথে আছি। এর মাঝে হাইস্পিড রেল লাইনের একটি পরিকল্পনাও এসেছে। কিন্তু ওটাতে বেশ কিছু জটিলতা আছে। যেমন কার্বন নিঃসরণ ও মালবাহী ট্রেন চালাতে না পারা। এরচেয়ে বড় আরেকটি সমস্যা হলো- এটির অর্থায়ন প্রায় অনিশ্চিত। তাই ঢাকা-লাকসাম কর্ডলাইনের কোনো বিকল্প নেই। এটি নির্মাণে আমরা বিশেষভাবে কাজ করছি। এছাড়া এটি অর্থায়নে আমাদের সহযোগিতা করবে এডিবি (এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক)।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৯ সালে ঢাকা-লাকসাম কর্ডলাইন নির্মাণে পরিকল্পনা ও সমীক্ষা সম্পন্ন হয়। তবে এ কাজ নিয়ে দীর্ঘদিন তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। সর্বশেষ ২০০৬ সালে পুনরায় এ কর্ডলাইন নির্মাণ সমীক্ষা সম্পন্ন করে এসএম এএমইসি ইন্টারন্যাশনাল পিটি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এ কর্ডলাইন নির্মাণে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে জানা যায়।