এস আই ছোটন শর্মার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

বায়েজিদ থানা

নিজস্ব প্রতিবেদক >
ছোটন শর্মা নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানায় উপপরিদর্শক (এস আই) পদে নিয়োজিত আছেন। পড়ালেখা শেষ করেছেন একই এলাকার চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে। সাধারণ মানুষকে নির্যাতন করে এবং মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে এ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে।
ছোটন শর্মার কবলে পড়া ভুক্তভোগী টেক্সটাইল এলাকার একটি গার্মেন্টস কারখানার মালিক মোহাম্মদ সুমন সুপ্রভাতকে বলেন, ‘আমি গত সোমবার (৩ মে) অফিস শেষে বিকাল সাড়ে ৪ টায় নিজের প্রাইভেট কারে বালুচরার বাসার উদ্দেশে রওনা দেই। অক্সিজেন মোড়ে একজন ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি থামানোর সংকেত দেন। গাড়ি থামানো হলে উল্টো দিক থেকে আসা একটি গাড়ি আমার গাড়িকে সজোরে ধাক্কা দেয়, এতে গাড়ি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমি ঐ গাড়িকে আটকাতে বললে দায়িত্বরত ট্রফিক পুলিশ হেসে ঐ গাড়িকে চলে যেতে বলেন। কেন ঐ গাড়িকে যেতে দেওয়া হলো এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি আমার ওপর চড়াও হন। অশ্লীল আচরণ করতে শুরু করেন। কয়েকবার ধাক্কাও দেন। তিনি ট্রফিক পুলিশ বক্সে যেতে বলেন। মানসম্মানের কথা ভেবে রাস্তায় এভাবে তর্ক না করে গেলাম ট্রাফিক বক্সের দিকে। এরমধ্যে ট্রাফিক পুলিশ আমাকে পেছন থেকে ধাক্কা মারতে থাকেন। এসময় পুলিশ বক্সে উপস্থিত ছিলেন বায়েজিদ বোস্তামী থানার এসআই ছোটন শর্মা। ড্রাইভারকে কল করে গাড়ি সাইড করার জন্য মোবাইল ফোনে কথা বলতে চাইলে এসআই ছোটন ফোন কেড়ে নেন এবং অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। কী অপরাধ করলাম জানতে চাইলে, তিনি পেটে পা দিয়ে খোঁচাতে থাকেন এবং পরে আরও বেশি উত্তেজিত হয়ে আমার শার্টের কলার চেপে ধরেন। পরবর্তীতে অশ্লীল গালিগালাজ করতে করতে তাদের গাড়িতে তুলে নেন। প্রায় আধঘণ্টা বসিয়ে রেখে একজন টিআইয়ের সাথে কথা বলতে দেন। এতে তিনি এ ব্যাপারে দেখছেন বলে জানান।’
তিনি আরও বলেন, ’ইফতারের কিছুক্ষণ আগে ছেড়ে দেওয়া হবে এই মর্মে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। যদি টাকা না দেওয়া হয় তবে পুলিশের গায়ে হাত দিয়েছে বলে চালান দিবে বলে জানান। তাদের এমন বেপরোয়া মনোভাব দেখে ৫ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে একটি কাগজে স্বাক্ষর দিয়ে বাসায় ফিরেছি। পরবর্তীতে এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রো পলিটন পুলিশ কমিশনার ও উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) বরাবর অভিযোগ জানিয়েছি।’
এ ব্যাপারে জানতে বায়েজিদ বোস্তামী থানার এসআই ছোটন শর্মার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা আসলে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমি সিনিয়র স্যারের রুমে আছি। পরবর্তীত যোগাযোগ করব।’ তবে তিনি আর যোগাযোগ করেন নি।
অন্যদিকে এপ্রিলের ৪ তারিখ ভোরে আরেক ঘটনা ঘটেছে এক পিকআপ চালকের সাথে। পিকআপ চালক রাহুল বড়ুয়া সুপ্রভাতকে বলেন, ‘গাড়ির পার্টস নিয়ে নয়ারহাট থেকে কক্সবাজারে যাচ্ছিলাম। বায়েজিদ বোস্তামী মাজারের সামনে পুলিশ গাড়ি দাঁড় করাতে বললে ওভারলোড থাকায় আমি কিছুদূর সামনে গিয়ে গাড়ি দাঁড় করাই। এতে তিনজন কনস্টেবল এসে আমাকে মারধর শুরু করেন। পরবর্তীতে গাড়িতে কী আছে জানতে চাইলে তা জানালাম। এসব অবৈধ মাল বলে আমাকে পুলিশের গাড়িতে তুলে নেয়। আমি জানালাম মাল ও গাড়ি থানায় নিয়ে যান। যারা অবৈধ মালের ব্যবসা করে তারা এসে নিবে যাবে। একথায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে যান। পরবর্তীতে আমাকে এবং হেলপারকে অক্সিজেনের নির্জন পাঠানপাড়া রোডে নিয়ে যায়। এবার শুরু হয় তাদের অত্যাচার।’
‘কনস্টেবল ইব্রাহিম মোবাইল কেড়ে নিয়ে চেক করতে থাকে। বন্ধুদের সাথে কথা বলার রেকর্ডিং শুনে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে। এ রেকর্ডিং দিয়ে চালান করে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখান। এরমধ্যে লাঠি দিয়ে পায়ে-হাতে মারছিলেন। হেলপার মামুনকেও বেশ মেরেছেন। তিনি মাথায় বন্দুকও তাক করেন। এসময় আমার কাছে থাকা সাড়ে ৬ হাজার টাকার মধ্যে ৫ হাজার টাকা নিয়ে মুচলেকা নিয়ে আমাদের ছেড়ে দেন। তাদের বিচার তো কেউ করবে না। তাই আল্লাহ্কে বিচার দিয়ে চুপ আছি। এ বিষয়ে কোথাও অভিযোগ জানাই নি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সুপ্রভাতকে বলেন, ‘থানায় এ ধরনের কোনো অভিযোগ আসে নি।’
একইু বিষয়ে উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মোকলেছুর রহমান সুপ্রভাতকে বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশের সাথে বাকবিতণ্ডা হয়েছিল। বিতণ্ডার কারণে হয়তো থানার অফিসার ডেকেছিল। তবে আমরা উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনবো। বায়েজিদ থানার ওসিকে এ বিষয়ে জানতে বলেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোন ধরনের অন্যায় করার সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।