এসডিজিতে পরিবেশ ইস্যু, ঝুঁকি ও করণীয়

সাধন সরকার »

বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো পরিবেশগত প্রেক্ষাপট ও জলবায়ু পরিবর্তন। ২০১৬ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরব্যাপী জাতিসংঘ কর্তৃক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজির সুনির্দিষ্ট ১৭টি অভীষ্টের আওতায় ১৬৯টি বৈশি^ক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ২৩২টি সূচক নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৭টি অভীষ্টের ৪ টিই (৬, ৭, ১৩ ও ১৪ নম্বর অভীষ্ট) সরাসরি পরিবেশের সাথে সম্পর্কযুক্ত। অভীষ্টসমূহ হলো- ৬. বিশুদ্ধ পানি ও পয়োনিষ্কাশন ৭. সাশ্রয়ী ও নবায়নযোগ্য জ¦ালানি ১৩. জলবায়ুবিষয়ক পদক্ষেপ ও ১৪. পানির নিচে প্রাণ। যদিও এসডিজি বা টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের ১৭ টি লক্ষ্যমাত্রার প্রত্যেকটি একটি অপরটির সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। একথাও ঠিক, চলতি বছরে করোনা মহামারির আঘাত বৈশি^ক প্রেক্ষাপটে প্রত্যেকটি দেশের এগিয়ে যাওয়া ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তছনছ করে দিয়েছে! যা হোক, এসডিজি অর্জনের পঞ্চম বছর শেষ হতে চললো। সে প্রেক্ষাপটে এসডিজিতে পরিবেশগত অভীষ্ট নিয়ে আলোকপাত করা প্রয়োজন।
বিশুদ্ধ পানি ও পয়োনিষ্কাশন
এসডিজির ৬ নম্বর অভীষ্ট হলো- বিশুদ্ধ পানি ও পয়োনিষ্কাশন। এখানে ৮ টি লক্ষ্যমাত্রার আওতায় ১১টি সূচক আছে। এর একটি লক্ষ্যমাত্রায় বলা হয়েছে, ‘২০২০ সালের মধ্যে পর্বত, অরণ্য, জলাভূমি, নদী, ভূগর্ভস্থ জলাধার (পানিস্তর) হ্রদসহ পানিসংশ্লিষ্ট বাস্তুতন্ত্রের সংরক্ষণ ও পুনরুজ্জীবন।’ এ লক্ষ্যের সাথে বর্তমান বাস্তবতার অবস্থাসহ সার্বিক প্রেক্ষাপট নিয়ে বলা প্রয়োজন। আর্সেনিকের দূষণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে লবণাক্ততার প্রভাবে দেশের বিশাল একটা জনগোষ্ঠী বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত। বিশ^ব্যাংক, বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৯৮ ভাগ মানুষের আওতার মধ্যে পানির কোনো না কোনো উৎস রয়েছে। কিন্তু এর সবটাই নিরাপদ পানি নয়। ইউনিসেফ ও বিশ^ব্যাংকের তথ্য মতে, নিরাপদ বা সুপেয় পানি পাচ্ছে বাংলাদেশের প্রায় ৮৭ ভাগ মানুষ। শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষ সুপেয় পানি থেকে বেশি বঞ্চিত। বিশ^ব্যাংকের এক গবেষণা বলছে, শহরের পানির পাইপলাইনের মধ্যে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) ২০১৯ সালের গুচ্ছ জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১১ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করে। সে হিসেবে দেশের ১ কোটি ৯৮ লাখ মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে। ২০১৬ সালে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা বিশে^র সবচেয়ে বড় ‘গণবিষের’ উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের আর্সেনিক পরিস্থিতিকে উল্লেখ করে। একই সালে বিশ^ব্যাংক থেকে তথ্য প্রকাশ করা হয় যে, আর্সেনিকের বিষে দেশে প্রতিবছর ৪৩,০০০ মানুষ মারা যায়। তথ্য মতে, দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৫৪ জেলার নলকূপের পানিতে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি আর্সেনিক পাওয়া গেছে। শহরের বস্তিবাসীদের প্রায় ৫০ ভাগ জনগোষ্ঠী বিশুদ্ধ পানি ও নিরাপদ স্যানিটেশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এখন যে হারে আর্সেনিক প্রশমন হচ্ছে বিশ^মান অনুযায়ী তা রোধ করতে কত সময় লাগবে সেটা সময়ই বলবে! তবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে আন্তর্জাতিক মানদ- বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়ার বিকল্প নেই।
এক সময়ের সমৃদ্ধ জনপদ আজ উপর্যপুরি দুর্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ও লবণাক্ততার কারণে ধুঁকছে। লবণাক্ততার প্রভাবে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য জেলাগুলোতে চাষাবাদে সমস্যা, সুপেয় পানির সংকটসহ জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। লবণাক্ততার কারণে কৃষিজমিতে ফলন কম হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে! আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় উপকূল অঞ্চলে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে সুপেয় পানির সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করে। এ ছাড়া নিরুপায় হয়ে লবণ পানি খাওয়ার কারণে শরীরে চুলকানি, চর্মরোগসহ নানাবিধ অসুখ দেখা দিচ্ছে। সম্প্রতি এক গবেষণার তথ্য মতে, সুন্দরবনের শিবসা, পশুর নদসহ অন্যান্য নদ-নদী ও খালে লবণাক্ততার পরিমাণ বাড়ছে।
তথ্য মতে, সুন্দরবন এলাকায় প্রতিবছর লবণাক্ততা বাড়ছে প্রায় ২ পিপিটি বা পার্টস পার ট্রিলিয়ন হারে। লবণাক্ততার ফলে বিরূপ প্রভাব পড়েছে মিঠা পানির মাছের ওপর। গবেষণায় বলা হয়েছে, মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে সুন্দরবনের প্রায় ২৭ প্রজাতির মাছ। ইতিমধ্যে খুলনা ও বাগেরহাটের নদী-নালা-খাল-বিল থেকে মিঠা বা স্বাদু পানির অনেক মাছ হারিয়ে গেছে। সুন্দরবন ও চারপাশের এলাকায় লবণাক্ততার পরিমাণ যত বাড়বে বনের প্রতিবেশ ব্যবস্থার ওপর তার বিরূপ প্রভাব পড়বে। শহরের খেটে খাওয়া গরিব মানুষ, বস্তিবাসী ও গ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই নিরাপদ স্যানিটেশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। যা পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ২০১৭ সালের সরকারি এক হিসেব বলছে, প্রায় ৭৬ শতাংশ মানুষ নিরাপদ স্যানিটেশন সুবিধা পাচ্ছে। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে পানি ও পয়োনিষ্কাশনের গুণ ও পরিমাণগত মান নিয়ে কাজ করতে হবে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নিরাপদ পানি ও পয়োনিষ্কাশনের আলাদা সেক্টর করা সময়ের দাবি।
সাশ্রয়ী ও নবায়নযোগ্য জ¦ালানি
এসডিজির সাশ্রয়ী ও নবায়নযোগ্য জ¦ালানি খাত বাস্তবায়নে ৫টি লক্ষ্যমাত্রার আওতায় ৬টি সূচক আছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশ অনেক সাফল্য দেখিয়েছে। কিন্তু প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচের দিক থেকে এখনো পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। সরকারি হিসেবে এখন পর্যন্ত ৯৭ ভাগ এলাকায় বিদ্যুতের সুবিধা পৌঁছেছে। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সৌরবিদ্যুতের প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে প্রায় ৫৫ লাখ পরিবার বিদ্যুতের সুবিধায় এসেছে। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য খাত থেকে ১০ শতাংশ ও ২০৩১ সালের মধ্যে ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন ২০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। এ অনুপাতে আগামী বছরের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হওয়ার কথা ২ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু এখন সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা মাত্র ৬৩ মেগাওয়াট।
জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান বাস্তবতায় জ¦ালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ কমােেনার অন্যতম উপায় হচ্ছে নবায়নযোগ্য জ¦ালানির ব্যবহার। নবায়নযোগ্যখাতে বাংলাদেশের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এ খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান তিনটি উপায় হচ্ছে সূর্য, পানি ও বায়ু। এছাড়া বর্জ্য থেকেও বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা কাজে লাগানো হচ্ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, পৃথিবীর অন্যান্য পাশর্^বর্তী দেশ যে গতিতে নবায়নযোগ্য শক্তিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ তাদের চেয়ে পিছিয়ে আছে! সোলার প্যানেলের দাম ও খরচ বেশি, আবার সক্ষমতাও কম। সরকারের পক্ষ থেকে এক্ষেত্রে ভর্তুকি দেওয়া দরকার। বিশে^র বিভিন্ন দেশ সবুজ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এই ব্যবস্থাপনার দিকে ঝুঁকছে। কারণ এতে পরিবেশ ক্ষতির সম্মুখীন হয় না। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে সৌরবিদ্যুৎতের ব্যবহার বাড়ানো গেলে তা সার্বিক পরিবেশের জন্যও ভালো হবে। গ্যাস দিন দিন ফুরিয়ে আসছে! দেশের উন্নতি করতে হলে শিল্পকলকারখানা লাগবে। যার ফলে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েই চলেছে। এ ছাড়া আবার দেখা দিচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রকৃতির ধ্বংসাত্মক রূপ। প্রয়োজনে কিংবা পরিস্থিতি বিবেচনায় জ¦ালানি হিসেবে নবায়নযোগ্য জ¦ালানিকে গুরুত্ব দিতেই হবে। পরিবেশগত বিপর্যয়, টেকসই উন্নয়ন ও আর্থসামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়নে নবায়নযোগ্য সবুজ জ¦ালানির বিকল্প নেই।
জলবায়ুবিষয়ক পদক্ষেপ
এখানে ৫ টি লক্ষ্যমাত্রার আওতায় ৮টি সূচক আছে। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় জলবায়ু পরিবর্তন। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে দেশে দেশে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি ‘জলবায়ু সপ্তাহ-২০২০’ উপলক্ষে গবেষণা সংস্থা গ্লোবস্ক্যান নামের বৈশি^ক জরিপে এমনটি ওঠে এসেছে। করোনা মহামারির সমস্যা ও সংকট খালি চোখে দেখা গেলেও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। করোনা ভাইরাস রুখে দেওয়ার মতো টিকা হয়তো দ্রুতই চলে আসবে কিন্তু বৈশি^ক উষ্ণতা বৃদ্ধি ঠেকানোর মতো টিকা কারও হাতে নেই তা মোটামুটি সবারই জানা। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর উদ্যাপন চলছে।
জাতিসংঘ অধিবেশনের সাইডলাইনে জলবায়ুসংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ের ভার্চ্যুয়াল গোলটেবিল বৈঠকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে পৃথিবীতে বাঁচাতে পাঁচ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন। বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে এটার গুরুত্ব অনেক। জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে যেসব উপকূলীয় দেশ অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে সেসব দেশের প্রথম সারিতে রয়েছে বিশে^র বৃহত্তম বদ্বীপ বাংলাদেশ। সম্প্রতি গবেষণায় ওঠে এসেছে, ২০১৯ সালে ‘বৈশি^ক জলবায়ু ঝুঁকি সূচকে’ বাংলাদেশের অবস্থান নবম। গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৯৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ৭ নম্বরে। এ সময়ে দেশে প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রত্যেক দেশ কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উপকূলীয় দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এর জন্য দায়ী উন্নত দেশসমূহের মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নির্গমণ।
সম্প্রতি ‘জাতিসংঘ শিশু তহবিল’ (ইউনিসেফ) কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ঘূর্ণিঝড়, বন্যাসহ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশের প্রায় দুই কোটি শিশু। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তসরকার সংস্থা ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল ফর ক্লাইমেট চেঞ্জের (আইপিসিসি) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বাড়লে বাংলাদেশের প্রায় ১৭ ভাগ উপকূলীয় স্থলভূমি পানিতে তলিয়ে যাবে। ফলে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ জলবায়ু-উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে (প্রতি সাত জনে একজন)। ক্ষতিগ্রস্ত উন্নয়নশীল ও উপকূলীয় দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোকে প্রতিবাদ করার, রুখে দাঁড়াবার, ক্ষতিপূরণ চাওয়ার এখনই সময়। পাশাপাশি বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহকে নিজেদের মতো করে ক্ষতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে হবে। সাম্প্রতিক এক তথ্য মতে, বাংলাদেশে এখন ৮৩ লাখ জলবায়ু উদ্বাস্তু বসবাস করছেন। জলবায়ু উদ্বাস্তু সংখ্যার দিক দিয়ে শীর্ষে ওঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। সব ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলাসহ পানি ব্যবস্থাপনা, কৃষি, মৎস্য, খাদ্য নিরাপত্তা, শিল্প, বনায়ন, টেকসই নদী ব্যবস্থাপনাসহ সংশ্লিষ্ট সব বিষয় বিবেচনায় রেখে দেশে শত বছরব্যাপী ‘বদ্বীপ পরিকল্পনা’ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশসহ পুরো বিশ^কে কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবতে হবে। নবায়নযোগ্য শক্তির (সৌরশক্তি, পানিশক্তি, বায়ুশক্তি) দিকে প্রতিটি দেশকে অগ্রসর হতে হবে। উপকূলীয় এলাকাসহ দেশব্যাপী সবুজায়ন বাড়াতে হবে। জলবায়ুসংশ্লিষ্ট সকল প্রকল্প ও কর্মকা-ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
পানির নিচে প্রাণ
এসডিজির ১৪ নম্বর লক্ষ্য পানির নিচে প্রাণ। এখানে ৮টি লক্ষ্যমাত্রার আওতায় ১০টি সূচক আছে। এ অভীষ্টে সাগর, মহাসাগর ও সামুদ্রিক সম্পদের সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সমুদ্র সম্পদ আহরণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে যেতে পারে। সীমিত পর্যায়ে কিছু পরিমাণ তেল-গ্যাস এবং মৎস্য সম্পদ আহরণ করা হলেও তার পরিমাণ বঙ্গোপসাগরের অফুরন্ত সম্পদের তুলনায় খুবই নগণ্য। বিশাল অঞ্চলব্যাপী সমুদ্রের মৎস্য সম্পদ আহরণ করা সম্ভব না হলে তা হাতছাড়া হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে! সমুদ্রও এখন আগের মতো নেই। জলবায়ু পরিবর্তন আর প্লাস্টিক দূষণের কারণে সাগর-মহাসাগরে সব ধরনের প্রাণি ও উদ্ভিদের স্বাভাবিক জীবনাচরণ এখন হুমকির মুখে। সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বাড়ছে, অম্লতা বাড়ছে। ফলে সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যের জন্য ঝুঁকি আগের থেকে অনেক বেশি। সমুদ্র সম্পদ সংরক্ষণে অতি বেশি গুরুত্ব দেওয়ার সময় হয়েছে। তবে সমুদ্র থেকে কিছু পেতে হলে সমুদ্রে যেতে হবে। এ ছাড়া বিশাল সমুদ্রের বাংলাদেশ অংশকে সবার আগে নিরাপত্তা দিতে হবে।
বঙ্গোপসাগরের ‘সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড’ সমুদ্রের বিশাল জীববৈচিত্র্যময় ও সম্ভাবনাময় এলাকা। এখানকার সমুদ্র সম্পদ সম্পর্কে সরকারি-বেসরকারি আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের জীববৈচিত্র্য সম্মেলনেও জীববৈচিত্র্য রক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সর্বোপরি বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষার্থে সমুদ্রের প্রতিটি প্রাণ সংরক্ষণ করতে হবে। সমুদ্রের প্লাস্টিক দূষণ রোধে বাংলাদেশসহ সব দেশকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে আসন্ন ২০২৫ সালের মধ্যে সমুদ্রের দূষণ রোধের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না।
পরিবেশ সুরক্ষায় বাংলাদেশ বৈশি^ক সূচকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। সামনে বাংলাদেশের জন্য আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ! কেননা বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের পরিবর্তিত বাস্তবতায় সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রকৃতি-পরিবেশের সাথে সম্পর্কিত সব ধরনের অনুষঙ্গ ভালো রাখতে হবে। একটি অভীষ্ট অপরটির সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত ১৭ টি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন করতে এবং সবার জন্য নিরাপদ পৃথিবী গড়তে সব দেশকে পরিবেশ সুরক্ষায় একত্রে কাজ করতে হবে।
লেখক : পরিবেশকর্মী
সদস্য, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)
ংধফড়হংধৎশবৎ২০০৫@মসধরষ.পড়স