এবার নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিতে হবে

২০১৮ সালে নবায়নযোগ্য বিভিন্ন উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সংক্রান্ত একটি বছরভিত্তিক পরিকল্পনা করা হয়। ওই পরিকল্পনায় ২০১৮ সালকে ভিত্তি বছর ধরে পরবর্তী তিন বছরের (২০২১ পর্যন্ত) সম্ভাব্য অর্জনের একটি হিসাব করা হয়েছিল। অনুযায়ী নানা ধরনের প্রকল্পও গ্রহণ করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী, ২০১৮ সালে নবায়নযোগ্য বিভিন্ন উৎস থেকে মোট ৫৮৪ দশমিক ৭২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হওয়ার কথা ছিল। এরপর ২০১৯ সালে নতুন ৪৩২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট, ২০২০ সালে ৬০৪ দশমিক ৫ ও ২০২১ সালে ৫৫৫ দশমিক ৫ মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। অথচ এখনো নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে পাওয়া বিদ্যুতের পরিমাণ ৪ শতাংশেরও নিচে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, দক্ষ জনবল ও প্রযুক্তির অনভিজ্ঞতা এবং সৌরশক্তি ব্যবহারে প্রয়োজনীয় জমির সংকটই লক্ষ্যের তুলনায় পিছিয়ে রাখছে খাতটিকে।
বর্তমানে দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৩ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে। বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে অন্যসব জ্বালানির মতোই সমান গুরুত্ব পাওয়ার কথা ছিল নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের। যদিও নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে এখনো সন্তোষজনক কোনো অবস্থান অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ। সাসটেইনেবল রিনিউয়েবল এনার্জি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (¯্রডো) তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে মোটে ৬৫০ দশমিক ১৫ মেগাওয়াট, যা দেশে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ২-৩ শতাংশ। এর মধ্যে শুধু সৌরশক্তি থেকেই উৎপাদন হচ্ছে ৪১৬ দশমিক ২২ শতাংশ বা মোট নবায়নযোগ্য জ্বালানির ৬৪ শতাংশ। এছাড়া বায়ু থেকে আসছে ২ দশমিক ৯ শতাংশ, হাইড্রো থেকে ২৩০ মেগাওয়াট, বায়োগ্যাস থেকে দশমিক ৬৩ শতাংশ ও বায়োম্যাস থেকে দশমিক ৪ শতাংশ। তবে এর মধ্যে প্রকৃতপক্ষে কার্যকরীভাবে উৎপাদন বেড়েছে মাত্র ৩১৭ মেগাওয়াটের কাছাকাছি। সেক্ষেত্রে খাতটির অর্জন আসলে আরো কম।
অথচ সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে চলতি বছরের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ পৌঁছানোর কথা ছিল ২ হাজার ১৮৮ মেগাওয়াটে। নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এ পর্যন্ত মোট ৩৬টি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে, যার বেশির ভাগই গৃহীত হয়েছে ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশের ২৫ জেলায় স্থাপিত সোলার পার্ক থেকে মোট ২ হাজার ১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে। এর মধ্যে রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় ৭ দশমিক ৪ মেগাওয়াট, পঞ্চগড় সদর উপজেলায় আট, কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় ২০ ও জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার তিন মেগাওয়াট সক্ষমতার চারটি সোলার পার্কের কাজ শেষ হয়েছে। এর বাইরে ময়মনসিংহে নির্মিত এখন পর্যন্ত দেশের বৃহত্তম সোলার পার্কও এরই মধ্যে উৎপাদনে চলে এসেছে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পিছিয়ে থাকার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে প্রথমত অনভিজ্ঞতা, তারপর এটিকে ব্যবহারোপযোগী করতে কর্মপরিকল্পনায় দেরি হওয়া এবং এ জ্বালানির জন্য যে পরিমাণ জমি প্রয়োজন সেটির সংকট-এ সবকিছু মিলিয়েই নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ থেকে পিছিয়ে পড়তে হয়েছে। বিশে^র অন্যান্য দেশ নবাযনযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কয়েক দশক আগে। সে তুলনায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে কারণ এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াই হয়েছে মাত্র কয়েকবছর আগে। ফলে অভিজ্ঞতার ঘাটতির পাশাপাশি দক্ষ জনবলও তৈরি করা যায়নি দেশে। কাজেই সময় এসেছে এই খাতে সরকারের নজর দেওয়া।