এবার আরেক জটিলতায় হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল

সালাহ উদ্দিন সায়েম :
নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য নগরীর বেসরকারি হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে গত শনিবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় চালু করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হাসপাতালটি চালু করা নিয়ে আবার জটিলতা দেখা দিয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হাসপাতালটি চালু করার জন্য শর্ত দেওয়া হয়েছে, স্থানীয়ভাবে সকল ধরনের জনবল সংযুক্ত করে হাসপাতালটি পরিচালনা করতে হবে। এজন্য জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের অধীনে একজন সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তা নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
মন্ত্রণালয়ের শর্ত নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা
জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথ বলছেন, ‘সহকারী পরিচালক মন্ত্রণালয় কিংবা চট্টগ্রাম বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক নিয়োগ দেবেন। আর হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালটি ব্যবস্থাপনার সমন্বয় করবেন স্বাস্থ্য পরিচালক। আমি জেনারেল হাসপাতাল থেকে গিয়ে হলি ক্রিসেন্ট তো পরিচালনা করতে পারবো না। আর মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে হলি ক্রিসেন্ট পরিচালনা করতে কোনো নির্দেশনা দেয়নি। যিনি সহকারী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনিই হাসপাতালটির সবকিছু দেখভাল করবেন।’
চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলছেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী হলি ক্রিসেন্ট সরকারি ব্যবস্থাপনায় জেনারেল হাসপাতালের ইউনিট হিসেবে পরিচালিত হবে। তাই জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কই হাসপাতালটি পরিচালনা করবেন। সহকারী পরিচালক তার অধীনেই থাকবেন। আমি কেবল ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য কর্মচারী নিয়োগ দেবো।’
জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথ বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে হলি ক্রিসেন্টকে জেনারেল হাসপাতালের ইউনিট হিসেবে পরিচালনার কথা বলা হয়নি। জেনারেল হাসপাতালের অর্থনৈতিক কোডের অধীনে হলি ক্রিসেন্টের কেবল ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য কর্মচারীর বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব করার কথা বলা হয়েছে।’
শয্যা অনুপাতে ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারী মিলছে না
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হলি ক্রিসেন্টে আইসোলেশন শয্যা স্থাপন করা হয়েছে ৩০টি আর আইসিইউ শয্যা বসানো হয়েছে ৮টি।
জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথ বলেন, ‘৩৮ শয্যার অনুপাতে অন্তত ২৪ জন চিকিৎসক, ৭২ জন নার্স ও ৭২ জন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী প্রয়োজন। কিন্তু এই মুহূর্তে এতো চিকিৎসক, নার্স কোথায় পাওয়া যাবে? আর করোনা সংক্রমণের ভয়ে চতুর্থ শ্রেণীর কোনো কর্মচারী কাজ করতে রাজি হচ্ছে না।’
একই চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, সরকার সম্প্রতি যেসব চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছে সেখান থেকে কয়েকজন চিকিৎসক হলি ক্রিসেন্টের জন্য নিয়ে আসার চেষ্টা করছি।
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সহকারী পরিচালক পাওয়া না গেলে একজন সিনিয়র চিকিৎসককে হাসপাতালটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার চিন্তা করছি।
চট্টগ্রামে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে গত ৪ এপ্রিল নগরীর বেসরকারি ১২ টি ক্লিনিক নির্বাচন করে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক। কিন্তু ক্লিনিকগুলো করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এরপর ক্লিনিক মালিকদের সংগঠন প্রাইভেট ক্লিনিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন নগরীর খুলশী জাকির হোসেন সড়কের পরিত্যক্ত হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে সংস্কার করে করোনার চিকিৎসার জন্য চালুর উদ্যোগ নেয়। চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিল্পগ্রুপ ও ক্লিনিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের অর্থায়নে হাসপাতালটি সংস্কার করে গত ২৫ মার্চ প্রস্তু করা হয়।
কিন্তু হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা নিয়ে টানাপোড়েন দেখা দেয়। এই ক্লিনিকটি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের অধীনে পরিচালনার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য পরিচালক। কিন্তু এই ক্লিনিকটি পরিচালনা করতে অপারগতা প্রকাশ করে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জেনারেল হাসপাতালের অধীনে একজন সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তার মাধ্যমে ক্লিনিকটি চালু করার নির্দেশ দেয়।