একটি প্রতিষ্ঠানের ২৭ লাখ টাকাসহ ধরা চোরচক্রের তিন সদস্য

নিজস্ব প্রতিবেদক >
মনির হোসেন সুচতুর একজন ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী। তার সাথী মাহফুজ। পেশায় সিএনজি অটোরিকশা চালক। রাত হলে তারা অটোরিকশায় চষে বেড়ায় নগর। তাদের মূল টার্গেট নগরের আগ্রাবাদসহ বাণিজ্যিক এলাকাগুলো। সুযোগ পেলে টার্গেটে থাকা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে জানালার গ্রিল ভেঙে মিনিট কয়েকের মধ্যে লুটে নেন নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। ডিজিটালাইজেশনের যুগে এ চক্রটি আরো বেশি ডিজিটাল। অফিসে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরা এড়াতে ডিভিআর মেশিন চুবিয়ে রাখতেন বালতির পানিতে। তবে এবার তাদের কৌশলে হয়েছে ভুল। ডিভিআর মেশিন ভেবে বালতিতে চুবিয়েছে ডিস কানেকশন মেশিন। এতেই খেয়েছে ধরা। চুরি করা ২৭ লাখ টাকাসহ ধরা পড়েছে পুলিশের হাতে। এভাবেই গত সাত বছরে প্রায় ৩শ’ চুরি সম্পন্ন করেছে চক্রটি। তবে হাতের কাছে যা পান তাই চুরি করে নিয়ে জমা রাখতেন স্ত্রীর হাতে।
গতকাল শনিবার সকালে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন ঘটনার বর্ণনা দেন উপপুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) বিজয় বসাক।
গ্রেফতার আসামিরা হলেন- চাদঁপুরের কচুয়া থানাধীন বজুরীখোলা বড় বাড়ির মৃত মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে মো. মনির হোসেন (৪০)। বর্তমানে আকবরশাহ বিশ্বকলোনি কাঁচা বাজার টাংকি পাহাড় এলাকার শান্তিনগর জি-ব্লকে বাস করেন। মনির হোসেনের স্ত্রী খুকু মনি প্রকাশ খুকি বেগম (২৮) এবং চাঁদপুরের একই থানাধীন চাঁনপাড়া আনাজি বাড়ির মো. আজিজের ছেলে মো. মাহফুজ (৩০)। পেশায় তিনি সিএনজি অটোরিকশা চালক। বর্তমানে খুলশী থানাধীন লালখান বাজার তুলা পুকুরপাড়ে ব্যাচেলর বাসায় থাকেন।
বাংলাদেশ সাপ্লাইয়ার্সের স্বত্বাধিকারী কাইজার আবুওয়াল বলেন, ‘গত ১৮ মে সন্ধ্যা ৭টায় অফিস বন্ধ করে বাসায় চলে যাই। পরদিন সকাল ১০টায় জানতে পারি ভবনের ৩ তলার মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের গ্রিল কেটে চোর প্রবেশ করেছে। দ্রুত সেখানে উপস্থিত হই। এতে ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, কিছু নিয়ে যায়নি। এরপর ৪ তলায় আমার অফিসে উঠে দেখি লোহার সিন্দুকের ভেতর থাকা কাগজপত্র সব অগোছালো। জানালার গ্রিল কাটা। সিন্ধুকে রাখা সাড়ে ২৭ লাখ টাকা উধাও। এতে পুলিশকে ঘটনা সম্পর্কে জানানো হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে বিজয় বসাক বলেন, ‘গত ১৮ মে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের জুবলী রোড শাখার অফিসে গ্রিল কেটে চুরির চেষ্টা করা হয় এবং একই ভবনের ৪র্থ তলার বাংলাদেশ সাপ্লাইয়ার্সের অফিসের গ্রিল কেটে ঢুকে লকার ভেঙে চুরি হয় সাড়ে ২৭ লাখ টাকা। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ এলে শুরু হয় অভিযান। গত ২১ মে পুরাতন রেল স্টেশন এলাকা থেকে ৫ হাজার টাকাসহ মাহফুজকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তার সিএনজিচালিত অটোরিকশায় দুটি চাপাতি পাওয়া যায়। চুরিতে ধরা পড়লে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাঁচার জন্য রাখা হয়েছে চাপাতি। ড্রাইভার মাহফুজ দিনে ঘুমাতেন আর রাত হলে বেরিয়ে পড়তেন চুরির মিশনে। তার দেয়া তথ্যমতে, ২২মে ভোররাতে আকবরশাহ বিশ্বকলোনি কাঁচা বাজার টাংকি পাহাড় এলাকার শান্তিনগর জি-ব্লকে খুকি বেগমের বাসায় অভিযান চালানো হয়। এতে চুরি করা ২৭ লাখ ৫ হাজার টাকাসহ মনির হোসেন ও খুকিকে গ্রেফতার করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি কোতোয়ালী থানার নজির আহমদ রোডের একটি বেসরকারি অফিস থেকে ২০ হাজার টাকা চুরি হয়েছে। জামালখান এলাকার একটি কম্পিউটার একাডেমি থেকে ল্যাপটপ চুরি, রাজাপুর লেইনের ৩টি কাগজের গোডাউন থেকে ৫০ হাজার টাকা, চকবাজারের একটি রেস্টুরেন্ট থেকে ৩৬ হাজার টাকা, ১টি এলইডি মনিটর, ১২ কেজি দুধের প্যাকেট, ১৩ প্যাকেট ঘি, এবং আগ্রাবাদের একটি অফিস থেকে মূল্যবান জিনিসসহ অনেক চুরির ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো চুরির সময় সিসিটিভি ক্যামেরা এড়িয়ে যাওয়া।
গত ১৮ মে চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ সাপ্লায়ার্সের অফিসে ডিভিআর মেশিন অন্য জায়গায় থাকায় মনিরকে চিহ্নিত করা সহজ হয়েছে। তবে তারা রমজান মাসে চুরি করেন না বলেও জানিয়েছে।’
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘চুরির পাশাপাশি নগরের বিশ্বকলোনি শাপলা গ্যাস লাইন এলাকায় মনিরের ভাঙ্গারি দোকানে চোরাই মালামাল বিক্রি হতো। তাছাড়া তার বড় ভাই আমির ছিলেন আন্তঃজেলা চোর। গত ফেব্রুয়ারিতে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়। তাদের এ কাজের মালামাল গচ্ছিত রাখার দায়িত্বে ছিলেন মনিরের স্ত্রী খুকু মনি। তাদের কাছ থেকে নগদ ২৭ লাখ ৫ হাজার টাকা, চুরির কাজে ব্যবহৃত ২টি চাপাতি ও একটি রেঞ্জ উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে মনির পাইপ বেয়ে চার তলায় উঠতে গিয়ে তিন তলার ব্যাংকে ঢুকে গিয়েছিল। তবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এ চক্রের আরও নতুন তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।’
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, কোতোয়ালি জোনের এসি মো.মুজাহিদুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ কবির হোসেন, পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মো.জাবেদ উল ইসলাম প্রমুখ।