এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল : মান অর্জনে চাই সুচিন্তিত পদক্ষেপ

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। দেশের ৯ বোর্ডের অধীন ১১ লক্ষ পঁয়তাল্লিশ হাজার ৩২৯ জন পরীক্ষার্থীর সবাই উত্তীর্ণ হয়েছে। করোনাকালীন বিশেষ পরিস্থিতি সামনে রেখে এবার এইচএসসির সব পরীক্ষার্থীই পাস করেছে। বলতে গেলে, করোকালীন পরিস্থিতি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সবকিছুকে এলোমেলো করে দিয়েছে। গত ১০ মাসে একে-একে বাতিল করা হয়েছে সকল পরীক্ষা। ২০২০ সালের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষা তারই একটি। মুক্তিযুদ্ধের পর এত দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষা না-হওয়ার নজির নেই।
বস্তুত, করোনাকালীন চলমান সময়টা এখনো যুদ্ধকালীন সময়ের অনুরূপ। এই যুদ্ধ ভাইরাসের বিরুদ্ধে, জীবন বাঁচানোর সপক্ষে। তবে অদৃশ্য ভাইরাসের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধের ধরনধারণ একেবারেই ভিন্নমাত্রার। এখানে সহায়-সম্বল ও আর্থিক ও পারিপার্শ্বিক সামর্থ্যরে কোনোই প্রয়োগযোগ্যতা নেই। হাত-পা গুটিয়ে ঘরে বসে থাকা তথা ভাইরাসের ছোবল থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখাই এই যুদ্ধের প্রধান হাতিয়ার ও কৌশল। ফলে জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের অনুরূপ শিক্ষা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সচলতাও স্থবির হয়ে পড়ে এ সময়ে। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখতে হয় সকল ধরনের শিক্ষাপ্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমও। এই বাস্তবতা অস্বীকার করা যায় না। সরকারও তাই করেছে। দফায়-দফায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ রেখেছে। এভাবেই স্থগিত হয়ে যায় ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা।
প্রকাশিত ফলে দেখা যাচ্ছে, ১১ লাখ ৪৫ হাজার ৩২৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ -৫ পেয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬১৪ জন, যা মোট পরীক্ষার্থীর ১৩ শতাংশের বেশি। এতে উচ্চশিক্ষার পর্যায়ে একটা সংকট দেখা দেবার আশংকাও দেখা দিয়েছে বলে অভিজ্ঞমহলের অভিমত। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সবাই উচ্চশিক্ষার্থে ভর্তি হতে পারেবে কিনা, এ আশংকা মোটেও অমূলক নয়। নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে মোট উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবার ১৩ লক্ষ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যাই ১ লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তথ্যমতে উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হবার মতো আসন আছে সাড়ে ১১ লাখের মতো। এর ফলে পাস করা সকল পরীক্ষার্থীর ভর্তির সুযোগ হবে না। এ সকল সংকট-সমস্যার বিদ্যমান বাস্তবতা শিক্ষাব্যবস্থাকে নিঃসন্দেহে বিপুল চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। আবার অনেকে এই বাস্তবতার উপলব্ধি ব্যতিরেকে সমালোচনার তির ছুঁড়ছেন। এই প্রেক্ষিতে সরকার প্রধানের উক্তিটি সবিশেষ গুরুত্ববহ। তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, ঘোষিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল নিয়ে যেন বিরূপ মন্তব্য প্রকাশ থেকে বিরত থাকা হয়।
কারণ, এতে উত্তীর্ণদের মনে হীনন্মন্যতাবোধের সৃষ্টি হতে পারে। কথাটা সত্য। করোনাভাইরাসের ভয়াবহকালে নিপতিত না-হলে নিশ্চয়ই এ ধরনের সমাধানের কথা ভাবতে হতো না।
শিক্ষার্থীরা তাদের সবধরনের প্রস্তুতি নিয়েই পরীক্ষার মুখোমুখি হতো। সমস্যাটি জাতীয় সংকটের অবয়ব ধারণ করেছে। কাজেই এখানে সুচিন্তিত অভিমত ও তার ভিত্তিতে সমাধানের পথ খুঁজতে সবাইকে ধৈর্যশীল হতে হবে।