উৎফুল্ল শিক্ষার্থীরা

দেড় বছর পর খুলল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক »
একাদশ শ্রেণিতে পড়ি। ২০২০ সালে এই স্কুল থেকেই মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হয়েছি কলেজে। সেই নার্সারি থেকে এই স্কুলের পড়তে পড়তে চেনা হলেও কলেজ ভর্তির পরে একদিনও বসা হয়নি শ্রেণিকক্ষে। দেখা মেলে না সখাদের। বহুদিন পরে দেখা হলেও হয়নি আলিঙ্গন। পৃথিবীকে গ্রাস করেছে এক অশুভ ভাইরাস। এই থেকে বাঁচতে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। এমন আবেগ উৎকন্ঠা নিয়ে কথা বলছিলেন বাংলাদেশ মহিলা সমিতি কলেজের শিক্ষার্থী জেসি বড়ুয়া।
করোনাভাইরাসের কারণে দেড় বছর সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও বন্ধ ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ ৫৪৩ দিন পরে আবারো প্রাণ ফিরে পেয়েছে বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। শিক্ষার্থীদের কলরবে আবারও ফিরে এলো প্রাণচাঞ্চল্য। এতে অনন্দিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
সরেজমিনে নগরের বিভিন্ন স্কুলে দেখা যায়। অলি-গলি পাড়া-মহল্লায় স্কুল ড্রেস পড়া হাজারো স্কুলগামী শিক্ষার্থী। সকলের মুখে মাস্ক, কাঁধে স্কুল ব্যাগ। দেখে মনে হচ্ছে এ নগর আবারো ফিরে পেয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য। রঙ বেরঙের স্কুল পোশাকে নগর সেজেছে নতুন সাজে। স্কুল গেইটে শিক্ষার্থীদের অভ্যর্থনায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী। মাস্ক, হ্যান্ড স্যনিটাইজার ও তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে একদল কর্মচারী। প্রতিটি শিক্ষার্থী প্রবেশের সময় মাপা হচ্ছে শরীরের তাপমাত্রা। স্যানিটাইজ করে প্রবেশ করছে শ্রেণিকক্ষে।
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল নজর কাড়ার মতন। কক্ষেও মানা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। তিন ফুটের প্রতি বেঞ্চে বসানো হয়েছে একজন করে শিক্ষার্থী। তবে স্কুলের ফটকে অভিভাবকের ভিড় ছিল। যা ইতিপূর্বে নিষেধ করেছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।
তবে অভিভাবকরা স্কুল শিক্ষার্থীদের করোনা টিকা দেওয়ার বিষয়ে সরকারের কাছে আহ্বান জানান। করোনা টিকা নিশ্চিত না করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলায় সংক্রমণের শঙ্কা থেকে যায়। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন তারা।
খাস্তগীর স্কুলের শিক্ষার্থী মাহিয়া জান্নাত বলেন, ‘বহুদিন পরে স্কুল খুলেছে, এতে আমি অনেক বেশি আনন্দিত। শিক্ষকদের মুখ ও শরীরের ভঙ্গিমা দেখে অনেক কিছু শেখার আছে। যা অনলাইন ক্লাসে হয়ে উঠে না। স্কুল খোলার প্রথম দিনে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে সচেতনতা ও নিজেদের বন্ধের দিনের আলোচনায় খুব সুন্দর কেটেছে।’
কাপাসগোলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনোয়ারা জাহান বেগম সুপ্রভাতকে বলেন, ‘প্রথমদিনে কলেজে ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। কলেজে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে শিক্ষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গঠন করা হয়েছে কমিটি। এতে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা হয়েছে।’
কাজেম আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সানজিদা মোক্তার তানজিন বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল ও কলেজে শিক্ষার্থী পাঠদান চলেছে। প্রথমদিনে উচ্চ মাধ্যমিকের ২০২১ সালের পরীক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল ৩৩ শতাংশ এবং ২০২২ সালের পরীক্ষার্থী ছিল ২২ শতাংশ। মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ছিল ২০২১ সালের পরীক্ষার্থী ২৬ শতাংশ এবং ২০২২ সালের পরীক্ষার্থী ছিল ৬৮ শতাংশ। ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ছিল ৫৮ শতাংশ।’

খাস্তগীর স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শাহেদা আক্তার বলেন, ‘প্রথম দিনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস হয়েছে।সকালের শিফটে ৮১৫ জন ছাত্রীর মধ্যে উপস্থিতি ছিল ৭৪৬ জন। তবে আগামীদিন থেকে উপস্থিতির সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে।’
অপর্ণাচরণ স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জারেকা বেগম বলেন, ‘আমাদের দুই শিফটে স্কুলে ক্লাস চলেছে। এতে মর্নিংয়ে উপস্থিতি ছিল ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং ডে’তে ছিল ৭৬ শতাংশ।