ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও এমডির বিদেশযাত্রায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা

ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন। ছবি: ফেইসবুক থেকে নেওয়া

সুপ্রভাত ডেস্ক »

অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে দুদকের আবেদনে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।

৩৩৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে এর আগে গত ৮ জুলাই ইভ্যালির শীর্ষকর্তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়েছিল দুদক।

আদালতের নিষেধাজ্ঞার পর দুদকের প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের বলেন, “দুদক যখন জানল, তারা বিদেশ চলে যেতে পারেন, তখন দুদক ব্যবস্থা নেয়।

“তখন এখতিয়ার সম্পন্ন কোর্ট খোলা ছিল না। বৃহস্পতিবার এখতিয়ার সম্পন্ন কোর্ট থেকে নিষেধাজ্ঞার আদেশ এসেছে।”

দুদকের নিষেধাজ্ঞার খবর প্রকাশের পর ইভ্যালির এমডি রাসেল ফেইসবুকে লিখেছিলেন, তাদের বিদেশ যাওয়ার নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিকে তিনি ‘পজিটিভলি’ দেখছেন।

তবে সরকার ও দুদকের পদক্ষেপের পর ইভ্যালির কার্যালয়টি বন্ধ রয়েছে কিছু দিন ধরেই। হটলাইনে ফোন করেও কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা।

গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া অগ্রিম এবং মার্চেন্টের পাওনা ৩৩৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা ‘আত্মসাৎ ও পাচারের’ অভিযোগে ইভ্যালির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক।

দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী ও উপসহকারী পরিচালক মুহাম্মদ শিহাব সালামকে এই অনুসন্ধানের কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে।

সম্প্রতি দুদক চেয়ারম্যানকে দেওয়া এক চিঠিতে ইভ্যালির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

 মন্ত্রণালয়ের চিঠির সঙ্গে ইকমার্স প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাত পৃষ্ঠার একটি তদন্ত প্রতিবেদনও যুক্ত করে দেওয়া হয়।

সেই প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, “গত ১৪ মার্চ দেখা যায়, ইভ্যালি ডটকমের মোট সম্পদ ৯১ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার ৮৪৬ টাকা (চলতি সম্পদ ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা) এবং মোট দায় ৪০৭ কোটি ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৯৯৪ টাকা।

“উক্ত তারিখে ইভ্যালি ডটকমের গ্রাহকের নিকট দায় ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টের নিকট দায় ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকা। গ্রাহকের নিকট থেকে অগ্রিম হিসেবে গৃহিত ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টের নিকট থেকে ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকার মালামাল গ্রহণের পর স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির নিকট কমপক্ষে ৪০৩ কোটি ৮০ লাখ ১ হাজার ৯১৪ টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির নিকট সম্পদ রয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা ।”

দুদকে পাঠানো চিঠিতে আরও বলা হয়, “ইভ্যালি ডটকমের চলতি সম্পদ দিয়ে মাত্র ১৬ দশমিক ১৪ শতাংশ গ্রাহককে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে বা অর্থ ফেরত দিতে পারবে। বাকি গ্রাহক ও মার্চেন্টের পাওনা পরিশোধ করা উক্ত কোম্পানির পক্ষে সম্ভব নয়।

“তদুপরি গ্রাহক ও মার্চেন্টের নিকট হতে গৃহিত ৩৩৮ কোটি ৬২ লাখ ১৮ হাজার ১৭৮ টাকার কোনো হদিস খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে গ্রাহক ও মার্চেন্টের নিকট হতে গৃহিত ৩৩৮ কোটি ৬২ লাখ ১৮ হাজার ১৭৮ টাকা আত্মসাৎ কিংবা অবৈধভাবে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের আলোকে ইভ্যালির বিরুদ্ধে তদন্ত করে কোনো আর্থিক অনিয়ম পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠিতে দুদককে অনুরোধ করা হয়।