আন্দামানের লঘুচাপ রূপ নিতে পারে ঘূর্ণিঝড়ে

ভারতের বিশাখাপত্তম ও ভুবনেশ্বরের মধ্যবর্তী উপকূলে আঘাত হানতে পারে মঙ্গলবার

ঝড়টি পর্যবেক্ষণে রাখছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর

ভূঁইয়া নজরুল »

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আন্দামান সাগরের দূরত্ব ১২৯৯ কিলোমিটার। এই দূরত্বে সৃষ্টি হওয়া একটি লঘুচাপ ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির ধারাবাহিক প্রক্রিয়া সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ ধাপ পার হতে হবে। এসব ধাপ পার হতে হতে উপকূল থেকে দূরত্বও কমে আসবে এবং কোথায় তা আঘাত হানবে সেই সম্পর্কে সঠিক পূর্বাভাস দেয়া সম্ভব। তাই বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এটিকে পর্যবেক্ষণে রেখেছে। অপরদিকে ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর ইতোমধ্যে একটি গতিপথও প্রকাশ করেছে। সেই গতিপথ অনুযায়ী এটি রোববার মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে এবং মঙ্গলবার তা ভারতের বিশাখাপত্তম ও ভুবনেশ্বরের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে উপকূলে আঘাত হানতে পারে।

শুধুমাত্র ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর নয়, আবহাওয়াবিষয়ক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট উইন্ডি একই পূর্বাভাস দিয়েছে। তারাও বলছে লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির ধারাবাহিক প্রক্রিয়া শেষে ১০ মে (মঙ্গলবার) ভারতের ভুবনেশ্বর উপকূলে আঘাত হানতে পারে। যেখানে ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর ও উইন্ডি বলছে তা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিবে। সেখানে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এলার্ট মেসেজ দিয়েছে। দক্ষিণ আন্দামান সাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে এবং তা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

সুস্পষ্ট লঘুচাপে রূপ নিয়েছে ঝড়টি

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ঢাকা অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় লঘুচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। তবে এটি এত দূরে অবস্থান করায় এখনই কোনো মন্তব্য করার সময় আসেনি।

এটি কি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে?

আবহাওয়া বিষয়ক ওয়েবসাইট ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এছাড়া এপ্রিল-মে এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর হলো বঙ্গোপসাগরে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সময়। বর্ষাকাল শুরুর আগে এবং শীতকাল শুরুর আগের সময় বায়ুচাপের তারতম্যের কারণে ক্রান্তীয় এই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়ে থাকে। এ বিষয়ে কথা হয় আবহাওয়া অধিদপ্তর পতেঙ্গা কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ শেখ হারুনুর রশিদের সাথে। তিনি বলেন, ‘লঘুচাপটি বাংলাদেশ উপকূল থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে। এটি ধীর গতিতে উত্তর উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। অতীত অভিজ্ঞতা বলে উপকূলের কাছাকাছি না এলে সঠিক পূর্বাভাস করা যায় না।’
কিন্তু ভারতীয় অধিদপ্তর এবং অন্যান্য কিছু ওয়েবসাইটের পূর্বাভাস বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা পূর্বাভাস দিলেও আমরা আমাদের অবস্থান থেকে যে পূর্বাভাস বিগত সময়গুলোতে দিয়ে এসেছি তা কিন্তু যথার্থ ছিলো। তাই এটি আদৌ ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হবে কিনা, কিংবা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে কোথায় আঘাত হানবে তা নিয়ে এখনই বলা সম্ভব নয়।’
ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড়টি

লঘুচাপটি রোববার মধ্যরাতের পর ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর ও উইন্ডি বলেছে। একইসাথে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তাও এমনটা জানিয়েছেন। তবে অফিশিয়ালি তা এখনই তিনি বলতে নারাজ। এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর নাম হবে ‘আশানি’। ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপাত্ত অনুযায়ী ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে ঝড়টি উপকূলে আঘাত হানতে পারে। বিশাখাপত্তম ও ভুবনেশ্বরের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে তা উপকূলে উঠতে পারে।
তবে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে এটাই শেষ কথা নয়। উপকূলের কাছাকাছি আসার পর ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ প্রায়ই পরিবর্তন হয়। সেক্ষেত্রে বিশাখাপত্তম ও ভুবনেশ্বরের কাছাকাছি আসার পর যদি তা উত্তর-পূর্ব দিকে বাঁক নেয় তাহলে আমাদের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলে কিংবা সোজা উত্তর দিকে অগ্রসর হলে তা খুলনা উপকূলে আঘাত হানতে পারে।

উল্লেখ্য, আন্দামান সাগরে সৃষ্ট হওয়া ঝড়গুলো ফানেল আকৃতির বঙ্গোপসাগরে প্রবেশের পর বেশিরভাগ ঘূর্ণিঝড় ভারতের উড়িশ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত করে থাকে। তবে গতিপথ পরিবর্তন হলে তা বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত করে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাস বেশি হলে ভারতীয় উপকূলে আগাত করলেও এর প্রভাব আমাদের উপকূলীয় এলাকায় দেখা যায়।