আনোয়ারায় প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যের সবজি স্কোয়াশ চাষ

জাহিদ হাসান হৃদয়, আনোয়ারা »

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় প্রথম বারের মতো মধ্যপ্রাচ্যের সবজি স্কোয়াশ চাষ করে সাড়া ফেলেছে রুহুল আমিন নামে এক কৃষি উদ্যোক্তা। ফলন ভালো হলে অধিক লাভের আশা করছেন তিনি। এতে করে উপজেলার কৃষিতে যোগ হলো আরেকটি নতুন সবজি স্কোয়াশ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বৈরাগ ইউনিয়নের গুয়াপঞ্চক ৫ নং ওয়ার্ডের কমলার বাড়ী ক্ষেতে কৃষি উদ্যোক্তা রুহুল আমিনসহ ২ জন লোক স্কোয়াশ ক্ষেতে পরিচর্যা করছে। কথা বলে জানা যায়, ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জমিতে ব্যবহার করা হয়েছে মালচিং পেপার। ফসলের ক্ষতিকর পোকা দমনে হলুদ ফাঁদ ব্যবহার করা হয়েছে।

স্কোয়াশ চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, জমিকে প্রথমে কালো রঙের মালচিং পলিপেপার দিয়ে বেড তৈরি করা হয়, এরপর পলি পেপারে গোলাকৃতির ছিদ্র করে বীজ বপন করা হয়, পরে বীজ অঙ্কুরিত হলে গাছের বৃদ্ধির সাথে সাথে উপযোগী মাচা তৈরি করে গাছগুলোকে তার ওপর ছড়িয়ে দেওয়া হয়, এই পদ্ধতির চাষাবাদে গাছের শিকড় পলি পেপারের নিচে ঢাকা থাকে, ফলে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হয়। এ ছাড়া মালচিং পেপার ভেদ করে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি মাটিকে স্পর্শ করতে পারে না বিধায় মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে। পাশাপাশি বেড তৈরিসহ বিভিন্ন সময় যে সার দেওয়া হয় তা মালচিং পেপারে আবৃত থাকার কারণে বৃষ্টিতে সহজে ধুয়ে যায় না, এ কারণে জমিতে আগাছা হয় না। মাটির রস অক্ষণœœ থাকে দীর্ঘদিন। সব মিলিয়ে এই পদ্ধতির চাষাবাদ মাটি ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ভালো। তাছাড়া উৎপাদন খরচও বেশ সাশ্রয়ী।

কৃষি উদ্যোক্তা রুহুল আমিন বলেন, ‘শখের বশে কৃষির সাথে যুক্ত হয়েছি। এর মধ্যে ৪ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। বিষমুক্ত ফসল ও শাক-সবজি উৎপাদন করার লক্ষে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছি। এবার ২ বিঘা জায়গা আধুনিক পদ্ধতিতে স্কোয়াশ চাষ করেছি। শুরু থেকে ২ জন লোক নিয়মিত কাজ করছে ক্ষেতে। প্রতিদিনের নাস্তা-খাবারসহ প্রতিজনকে ৬ শত টাকা করে কাজের মজুরি দিতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে, আরো ১২ হাজার টাকার মতো লাগতে পারে। ফসল যদি ভালো হয় এবং বাজারের ভালো মূল্য পেলে ১ বিঘা থেকে দেড়লক্ষ টাকার মতো লাভবান হবো বলে আশা করছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমজান আলী জানান, ‘স্কোয়াশ বিদেশি সবজি। বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক অগ্রগামী কৃষক স্কোয়াশ চাষ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নে আমাদের কিছু কৃষক স্কোয়াশ চাষ করছে। এটা একটি ভিটামিন এ সমৃদ্ধ শীতকালীন সবজি। বিদেশি সবজি চাষাবাদের ব্যাপারে কৃষকদের কারিগরী ও প্রযুক্তিগত ধারণা না থাকায় আমরা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সহযোগিতা করছি।

আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে প্রত্যক্ষভাবে এ বিষয়ে কাজ করছেন। তাছাড়া বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি চাষ করতে যে প্রযুক্তি আছে সেগুলো মাঠে ব্যবহার করার জন্য কৃষকদের বলছি। তারা সেভাবেই কাজ করছেন। বিশেষ করে স্কোয়াশ, শসা, তরমুজসহ যে ফসলগুলো মাটিতে চাষাবাদ হয় সেগুলোর ক্ষেত্রে মালচিং পেপার ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছি। পাশাপাশি স্কোয়াশ যেহেতু কুমড়া জাতীয় সবজি, তাই এগুলোতে মাছিপোকা, ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ বেশি। তা দমন করার জন্য পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি ব্যবহার করতে কৃষকদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

স্কোয়াশ মূলত উত্তর আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চাষ হয়ে থাকে। স্কোয়াশ অনেকটা দেখতে শশা আকৃতির। এটি শশার মতো লম্বা হলেও রং মিষ্টি কুমড়ার মতো। উচ্চ ফলনশীল জাতের এ সবজি ভাজি, মাছ ও মাংসের তরকারিতে রান্নার উপযোগী, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর।