আগামী বছরের শুরুতে চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের ভিত্তিপ্রস্তর : তথ্যমন্ত্রী

সার্কিট হাউসের সম্মেলনকক্ষে বক্তব্য রাখছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

নিজস্ব প্রতিবেদক »

চলতি বছরের মধ্যে চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশনা দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাতে আগামী বছরের শুরুতে চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পারেন, সে জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ এ বছরেই শেষ করতে হবে।

‘চট্টগ্রাম মহানগরীর পরিবহন মাস্টারপ্ল্যানসহ মেট্রোরেলের সমীক্ষার প্রিলিমিনারি সার্ভে কাজ–সংক্রান্ত’ মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মেলনকক্ষে আজ মঙ্গলবার দুপুরে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

দক্ষিণ কোরিয়ার উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা কোইকা চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করবে। এতে ৭৭ কোটি টাকা ব্যয় হবে।

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধানরা নগরীর কিছু কিছু স্থানে মেট্রোরেল মাটির নিচ দিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তথ্যমন্ত্রী বলেন, পুরোনো চট্টগ্রাম শহরের সদরঘাট, চকবাজার, বহদ্দারহাট ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এখানে মেট্রোরেল আন্ডারগ্রাউন্ডে করা যেতে পারে। হয়তো খরচ তিন গুণ বেশি। তবে এটাই প্রাধান্য দেওয়া উচিত। অন্য এলাকায় ওপর দিয়ে তা করা যেতে পারে।

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, বে টার্মিনালসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে আগামী ১০ বছরে চট্টগ্রামে মানুষ দ্বিগুণ হবে বলে সভায় জানান হাছান মাহমুদ।

মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেদিন চট্টগ্রামের মেট্রোরেলের বিষয়ে ঘোষণা দিয়েছেন সেদিন তিনি দুইটি বিষয় উল্লেখ করেছেন। একটি হচ্ছে বঙ্গবন্ধু টানেল থেকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মেট্রোরেল যেতে পারে। যেহেতু সেখানে শাটল চলাচল করে। এছাড়া মেট্রোরেল করার সময় বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরকে মাথায় রাখার জন্য তিনি বলেছেন।

তিনি বলেন, নদীর ওপারে যেহেতু প্রচুর শিল্পায়ন হচ্ছে, টানেল হয়ে গেছে, তাই নদীর ওপারে কীভাবে মেট্রোরেল নিয়ে যাওয়া যায় এসব বিষয় মাথায় রেখে পরিকল্পনা করা উচিত।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামে মেট্রোরেল করার বিষয়ে সাধারণ জনগণের কোনো দাবি ছিল না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী দুই-আড়াই বছর আগে এ বিষয়ে আলাপ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ভবিষ্যৎ দেখতে পান। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি আশা করব দ্রুততার সঙ্গে কাজ হবে। এ কাজের জন্য কোরিয়ান সরকার যে এগিয়ে এসেছে এটি অসাধারণ।

মেট্রোরেলের সম্ভাব্য সমীক্ষা করতে সব সেবা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমীক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান আলাদা আলাদা বসবে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে আলাদা বসার পরিকল্পনা হয়েছে। রেলওয়ে, ওয়াসা, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সবার সঙ্গে আলাদা বসার পর একটি পরিকল্পনা নিতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, দেশ ছোট তাই জায়গার মাল্টিপল ব্যবহার করতে হবে। এটা আমার জায়গা এটা কাউকে ব্যবহার করতে দেব না। এ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মেট্রোরেল বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও এসব বিষয় আসবে। সেটি থেকে আমাদের সরে আসতে হবে।

সভায় চট্টগ্রামে সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাট, আন্দরকিল্লা, চকবাজার, নিউমার্কেট এলাকায় মেট্রোরেল উপর দিয়ে নেওয়া খুব কস্টসাধ্য হয়ে যাবে। তাই সেসব এলাকাসহ নগরীর কিছু কিছু এলাকায় মেট্রোরেল মাটির নিচ দিয়ে নিয়ে যেতে পারি তাহলে  সবচেয়ে উত্তম হবে বলে মনে করি।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, যেহেতু আমরা আগামী ১০০ বছরের চিন্তা করছি তাই মেট্রোরেল প্রকল্প মাটির নিচ দিয়ে করলে ভালো হবে। মেট্রোরেল আন্ডার গ্রাউন্ডে নিয়ে যেতে পারলে অনেক লোকের যাতায়াত নিচে দিয়ে চলে যাবে, ফলে উপরের যানজট অনেকটা কমে যাবে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন উন্নয়নকাজে সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার বিষয়টি তুলে ধরেন। মেট্রোরেল নির্মাণে তা পরিহারের অনুরোধ জানান তিনি।

সভায় কোইকার ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর থে নিয়াং কিম বলেন, ‘উন্নত বিশ্ব গড়তে কোইকা নানা উন্নয়নকাজে সহযোগিতা করছে। চট্টগ্রামের উন্নয়নকাজেও আমরা অংশীদার হতে চাই।’

সভা শেষে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. মাহবুবের রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা মহানগরীতে যেহেতু আমরা গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু করেছি, তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা হলো চট্টগ্রামেও ঢাকার মতো গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এজন্য কোরিয়ান সরকার আমাদের ৬ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিবে। সে টাকা দিয়ে আমরা প্রাথমিকভাবে স্টাডিগুলো করব। সকল সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে জনগণের চলাচলকে সহজ করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।

তিনি বলেন, মেট্রোরেলের ফিজিবিলিটি স্টাডিজের কাজ খুব দ্রুত শুরু হচ্ছে। ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তারা সকলের কাছ থেকে তথ্য নেবে। এরপর আরেকটি টিম এসে ওয়ান টু ওয়ান কথা বলবে। এরপর তারা আমাদেরকে একটা ফাইনাল রিপোর্ট দেবে৷ ফিজিবিলিটি স্টাডিজ কাজ এক বছরে মধ্যে শেষ করার জন্য সরকারের একটা নির্দেশনা আছে। প্রাথমিক সমীক্ষা করার জন্য আমাদের ৭৭ কোটি টাকা বাজেট। এর মধ্যে কোরিয়ান সরকার ৫১ কোটি টাকা অনুদান দেবে, বাকি টাকা সরকার দেবে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের সঞ্চালনায় এতে মতামত দেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুল মালেক, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়াল অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর।