আওয়ামী লীগ প্রার্থী সালাহউদ্দিনের প্রার্থিতা বাতিল

কক্সবাজার ১ আসন

নিজস্ব প্রতিনিধি, চকরিয়া

কক্সবাজার ১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জমা দেওয়া মনোনয়নপত্র বাছাইকালে গত ৩ ডিসেম্বর ব্যাংক ঋণখেলাপির অভিযোগে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপির প্রার্থিতা বাতিল ঘোষণা করেন কক্সবাজারস্থ রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান।

রির্টানিং কর্মকর্তার বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আপিল আবেদন জমা দেন সালাহ উদ্দিন আহমদ। কিন্তু গতকাল শুক্রবার ১৫ ডিসেম্বর চূড়ান্ত শুনানিতে সালাহউদ্দিন সিআইপির বাতিল হওয়া প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেয়নি নির্বাচন কমিশন।
গতকাল সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) পঞ্চম দিনের মতো মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও বাতিলের বিরুদ্ধে করা আপিল আবেদনের শুনানিতে কক্সবাজার ১ আসনের আওয়ামী লীগের সালাহ উদ্দিনের প্রার্থিতা বিষয়ে এ আদেশ দেওয়া হয়।
তার আগে ঋণখেলাপির বিষয়ে বুধবার সালাহ উদ্দিন আহমদ বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি ও জনতা ব্যাংকের করা দুটি রিট পিটিশনের নিষ্পত্তি করতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির আপিল বেঞ্চে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

শুনানি শেষে আগামী ৬ সপ্তাহের মধ্যে দুটি রিটের নিষ্পত্তিতে হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের একক বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন প্রধান বিচারপতি। এতে সিআইপিতে থাকা সালাহ উদ্দিন আহমদের নাম ঋণখেলাপির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া অর্থঋণ আদালতের আদেশে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশই বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

সূত্র জানায়, ৩ ডিসেম্বর প্রার্থী যাছাই-বাছাইয়ের দিনে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহম্মদ শাহীন ইমরান খেলাপির অভিযোগে আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপির মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। এরপর সালাহ উদ্দিন আহমদ ইসিতে আপিল করেন। এর আগে ১০ ডিসেম্বর আপিল শুনানি শেষে গতকাল ১৫ ডিসেম্বর রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন ইসি।
৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের ডাটাবেজ ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) ঋণখেলাপির তালিকা থেকে সালাহ উদ্দিন আহমদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিন্নাত হকের বেঞ্চে একটি রিট দায়ের করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি শেষে বেঞ্চটি ঋণখেলাপির তালিকা থেকে সালাহউদ্দিন সিআইপিকে বাদ দেওয়ার জন্য আদেশ দেন।

১১ নভেম্বর অর্থঋণ যুগ্ম জেলা জজ আদালত চট্টগ্রাম সালাহ উদ্দিন আহমদকে ঋণখেলাপি থেকে অব্যাহতি দিয়ে একটি আদেশ দেন। ৭ ডিসেম্বর ওই আদেশের বিরুদ্ধে জনতা ব্যাংক চট্টগ্রাম লালদীঘি শাখার পক্ষ থেকে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঋণ যুগ্ম জেলা জজ আদালত চট্টগ্রামের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেন হাইকোর্ট।

উভয় পক্ষ রিটের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। আপিল বিভাগের বিচারপতি এম এনায়েত রহিম দুটি রিটের নিষ্পত্তিতে প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়ে দেন। ১৩ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৫ সদস্য বিশিষ্ট বিচারপতিরা শুনানি শেষে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন। আগামী ৬ সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের একক বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।
রায়ের বিষয়ে কক্সবাজার-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমি ঋণখেলাপী নই। সেটি জনতা ব্যাংকের মামলা থেকে অর্থঋণ আদালত কর্তৃক আমাকে অব্যাহতি দেওয়ার মাধ্যমে প্রমাণিত। এরই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইপি তালিকা থেকেও আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তারপরও কতিপয় মহলের চক্রান্তে আমাকে হয়রানি করার জন্য পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমি আশাবাদী মামলায় বিজয়ী হবো। আমি নৌকার মনোনয়ন সমুন্নত রাখতে শেষ পর্যন্ত আইনি লড়াই করবো। ইনশাআল্লাহ আমার মনোনয়ন বৈধ হবে।’

কক্সবাজার ১ চকরিয়া পেকুয়া আসনে বর্তমানে ৮ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষিত হয়েছে। তারা হলেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বর্তমান সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলম, জাতীয় পার্টির (এরশাদ) হোসনে আরা আরজু, জাতীয় পাটি মঞ্জুর এএইচ সালাহউদ্দিন মাহমুদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পাটির হাজি আবু মোহাম্মদ বশিরুল আলম, বাংলাদেশে কল্যাণ পাটির মহাসচিব আবদুল আউয়াল মামুন, ইসলামী ফ্রন্টের বেলাল উদ্দিন ছিদ্দিকী ও এ আসনের এমপি জাফর আলমের ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী তানভীর আহমেদ ছিদ্দিকী তুহিন।