অযত্ন-অবহেলায় চকরিয়ার ৩ মৎস্য অবতরণকেন্দ্র

এম. জিয়াবুল হক, চকরিয়া »

২৮ হাজার একর আয়তনের হাজারো মৎস্য ঘের থেকে উৎপাদিত মাছ নিদিষ্ট সময়ের জন্য সংরক্ষণের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার তিনটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র তিন যুগের বেশি সময় ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। দীর্ঘ বছর ব্যবহার না হবার কারণে অনেকটা জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে কেন্দ্রগুলো। এতে প্রতিবছর বিপুল টাকার রাজস্বও হারাচ্ছে সরকার। অপরিকল্পিতভাবে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রগুলো নির্মাণ করায় অযতেœ অবহেলায় অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।

চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ফারহান তাজিম বলেন, মৎস্য অধিদপ্তরের যে উদ্দেশ্য নিয়ে অবতরণ কেন্দ্র গুলো তৈরি করেছিল, তা পূরণ হয়নি। ওই সময় নির্মিত অবতরণ কেন্দ্রগুলোর স্থান নির্ধারণ অনেকটা ভুল ছিল অথবা নির্মাণের জন্য ভূমি সংকট ছিল। তিনি বলেন, মুলত চকরিয়া উপজেলার মৎস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত রামপুর চরণদ্বীপ ও বহলতলী বদরখালী পশ্চিম বড় ভেওলা।

এ অঞ্চলে উৎপাদিত চিংড়িসহ অন্যান্য প্রজাতির মাছ মানসম্মতভাবে প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাত করার জন্য মৎস্য অধিদপ্তর তিনটি মৎস্য অবতরণ ও সার্ভিস সেন্টার নির্মাণ করে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার উপকূলের সুন্দরবন খ্যাত চরণদ্বীপ, রামপুর, বহলতলী মৌজায় প্রায় ২৮ হাজার একর জমির প্যারাবন উজাড় করে ১৯৮৫-৮৬ সালের দিকে সরকার ১০, ১১ ও ৩০ একর বিশিষ্ট আয়তনের মৎস্য ঘের বন্দোবস্ত দেয়। সেই থেকে এসব মৌজায় ব্যাপকভাবে চিংড়িসহ অন্য প্রজাতির মৎস্য চাষ শুরু হয়। মুলত মৎস্যজোন এলাকার উৎপাদিত মাছ মানসম্মতভাবে বাজারজাত করার জন্য ওইসময় উদ্যোগ নেয় মৎস্য অধিদপ্তর।

এরই অংশ হিসেবে চকরিয়া উপজেলার শাহারবিল ইউনিয়নের চৌয়ারফাঁড়ি, চিরিংগা ইউনিয়নের পালাকাটা, মাছঘাট ও ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাট এলাকায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি মৎস্য অবতরণ ও সার্ভিস সেন্টার নির্মাণ করা হয়।

স্থানীয় মৎস্য চাষিদের দাবি, এসব কেন্দ্র মৎস্য উৎপাদন এলাকা থেকে অনেক দূরে। এ কারণে অতিরিক্ত পরিবহন ব্যয়ে এসব অবতরণ কেন্দ্রে চিংড়িসহ অন্যান্য মাছ বিক্রি করতে আগ্রহী হননি তারা। তাই কেন্দ্রগুলো অব্যবহূত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কেন্দ্রগুলো সংস্কার বা রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে রাষ্ট্রীয় অনেক কাজে ব্যবহার করা যেত বলে স্থানীয় মৎস্য চাষি ও জনপ্রতিনিধিদের অভিমত।

চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা ইউনিয়নের পালাকাটা মাছঘাট অবতরণ কেন্দ্রটি স্থানীয় বেলাল উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি মৎস্য বিভাগ থেকে ইজারা নিয়ে টমটম গ্যারেজ ও বিভিন্ন মালামালের গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছেন। অপর দুটি কেন্দ্র অদ্যবদি তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

রামপুর চিংড়ি ঘের মালিক সমিতির সভাপতি সেলিম উল্লাহ দাবি করে বলেন , ১৯৮৬ সালের দিকে চিংড়ি চাষ শুরু হলে মৎস্য অধিদপ্তর তিনটি অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণ করে। দূরবর্তী এলাকায় কেন্দ্রগুলোর অবস্থান হওয়ায় ঘের এলাকায় উৎপাদিত মাছ বিক্রি করে দিচ্ছে। এ কারণে কেন্দ্রগুলো কাজে আসছে না।

চকরিয়া উপজেলার বৃহত্তর চিংড়ি ও কাঁকড়া ব্যবসায়ী কক্সবাজার জেলা পরিষদের সদস্য আবু তৈয়ব বলেন, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রগুলো সংস্কার করা হলে চকরিয়া উপজেলার ২৮ হাজার চিংড়িজোন থেকে আহরিত মাছ নিদিষ্ট সময়ের জন্য প্রতিবছর সংরক্ষণ করা যেত। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করে বিপুল টাকা রাজস্ব আয়ও করা সম্ভব হতো। কিন্তু নির্মাণের পর থেকে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বন্ধ থাকার কারণে জনগণের কোনধরনের উপকার হচ্ছে না।

চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রগুলো মৎস্য অধিদপ্তর চাষিদের কল্যাণের জন্য নির্মাণ করলেও স্থান নির্ধারণ ভুল থাকায় অব্যবহূত অবস্থায় নষ্ট হচ্ছে। এসব কেন্দ্র সংস্কার করে জনস্বার্থে রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহার উপযোগী করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

বিষয়টি প্রসঙ্গে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র সরকারের সম্পদ। এসব কীভাবে সংস্কার করে রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহার করা যায়, সেই বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে।

জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বদিউজামান বলেন, চকরিয়া উপজেলায় অবস্থিত ৩টি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বর্তমানে ব্যক্তিপর্যায়ে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। মুলত তারাই এখন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র গুলো রক্ষণাবেক্ষণ করছেন।