অন্ধকার সাগরে হারিয়ে গেছে স্বজনরা পরিবারের শোক

সুপ্রভাত ডেস্ক »

ডুবোযান টাইটানে চড়ে পাঁচজন ১৯১২ সালে ডুবে যাওয়া টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে নিজেরাই ইতিহাস হয়ে গেছেন। গভীর সাগরে ডুবোযানটির ‘বিপর্যয়কর বিস্ফোরণ’-এর শিকার হয়ে এই পর্যটকরা মারা যান। শুক্রবার তাদের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোকার্ত তাদের স্বজন ও সহকর্মীরা। খবর বিডিনিউজের।

পর্যটকদের মৃত্যুতে এ ধরনের অভিযানের নিরাপত্তা বিধি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন।

ডুবোযানটি রোববার থেকে নিখোঁজ ছিল। আন্তর্জাতিক পরিসরে কয়েকদিন ধরে খোঁজার পর বৃহস্পতিবার টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছের একটি এলাকায় কিছু ভাঙা বস্তুর সন্ধান মেলে।

এদিন এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ডের রিয়ার অ্যাডমিরাল জন মগার জানান, সমুদ্রতলে টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষের কাছে যেসব ভগ্নাংশ পাওয়া গেছে, সেগুলো টাইটান সাবমার্সিবলের অংশ।

বিপর্যয়কর বিস্ফোরণে ডুবোযানটি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। ঘটনাটি নিয়ে বিশ্বজুড়ে ছিল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। নিখোঁজ স্বজনদের ফিরে পাওয়ার আশায় ছিল পরিবারগুলো। কিন্তু তা আর হল না।

টাইটানের ক্যাপসুলে পাঁচ পর্যটকের মধ্যে ছিলেন, ওশেনগেইট এক্সপেডিশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টকটন রাশ। এই ওশেনগেইটই সবমার্সিবল পরিচালনা করেছিল এবং টাইটানিক দেখতে নিয়ে যাওয়ার জন্য পর্যটকদের প্রতিজনের কাছ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার নেওয়া হয়েছিল।

রাশ ছাড়াও ডুবোযানটিতে আরও ছিলেন, ব্রিটিশ ধনকুবের, বিমান সংস্থা অ্যাকশন এভিয়েশনের চেয়ারম্যান হামিশ হার্ডিং (৫৮), পাকিস্তানের এংরো করপোরেশনের ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাদা দাউদ (৪৮)ও তার ছেলে সুলেমান দাউদ (১৯), ফরাসি পর্যটক পল অঁরি নারজিলে (৭৭)।

ওশেনগেইট বলেছে, ‘এই মানুষেরাই সত্যিকারের অনুসন্ধানী। তাদের অভিযানে যাওয়ার একটা আলাদা স্পৃহা আছে। বিশ্বের মহাসাগরের তলদেশের সন্ধান এবং এর সুরক্ষার জন্য গভীর তাগিদ অনুভব করেন তারা।’

শাহজাদা দাউদের পরিবারের পক্ষ থেকে ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্ট এর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “গভীর দুঃখের সঙ্গে আমরা শাহজাদা ও তার ছেলে সুলেমানের অপূরণীয় ক্ষতির জন্য শোক প্রকাশ করছি। তারা আটলান্টিক মহাসাগরের গভীরে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাত্রা করেছিলেন।’

ওদিকে, নারজিলের মৃত্যুতে একটি বিবৃতি দিয়ে তার পরিবার বলেছে, ‘আমরা তাকে সবচেয়ে বেশি মনে রাখব তার বিশাল হৃদয়, তার হাস্যরসাত্মক মনোভাবের জন্য। সে তার পরিবারকে অনেক ভালোবাসত।’

ব্রিটিশ ধনকুবের হামিশ হার্ডিংয়ের পরিবার তাকে ‘একজন নিবেদিতপ্রাণ বাবা’ অভিহিত করে বলেছে, ‘এই মর্মান্তিক ঘটনা থেকে আমাদের সামান্য সান্ত¡না এটুকুই যে, আমরা তাকে হারিয়েছি সেইখানে, যে জায়গা তার পছন্দ ছিল।’

টাইটানের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল অনেক আগেই। ২০১৮ সালে সাবমার্সিবল বিশেষজ্ঞদের একটি সিম্পোজিয়ামে। ওশেনগেইটের এক সাবমেরিন বিশেষজ্ঞ ওই বছর টাইটান ডুবোযানটির নিরাপত্তা সমস্যা নিয়ে সতর্ক করেছিলেন বলে জানা যায় যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের নথি থেকে।

কিন্তু ওশেনগেইট এর জবাবে ওই বিশেষজ্ঞকে বরখাস্ত করেছিল। গোপন তথ্য ফাঁস করার অভিযোগে কোম্পানি তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। তবে পরে মামলাটির নিষ্পত্তি হয়।