তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আমরা গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতায় বিশ^াস করি, হাইকোর্টের নির্দেশ পেলে আলজাজিরার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাইকোর্ট যদি কোন আদেশ দেন এটিকে বন্ধ করার জন্য, সেক্ষেত্রে হাইকোর্টের আদেশ আমাদের মানতে হবে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় তথ্যমন্ত্রীর চট্টগ্রাম নগরীর বাসায় সমসাময়িক বিষয়ে ব্রিফিংকালে হাইকোর্ট তথ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছিল আল জাজিরার রিপোর্টটা ইউটিউব এবং অন্যান্য চ্যানেল থেকে বাদ দেয়ার জন্য এটা বাদ দিচ্ছেন না কেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা চাইলে আলজাজিরার সম্প্রচার আমাদের দেশে বন্ধ করতে পারতাম, অনেক দেশে বন্ধ করা হয়েছে, এবং বন্ধ রয়েছে। এমনকি ভারতেও কিছুদিনের জন্য বন্ধ ছিল। এখনো ৬-৭টি দেশে আলজাজিরার সম্প্রচার বন্ধ আছে। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার যেহেতু গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতায় বিশ^াস করে তাই আমরা সেই উদ্যোগ নিইনি।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার যেমন দরকার, দায়িত্বশীলতারও প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতা মানে এই নয়, ভুল, মিথ্যা, পক্ষপাতমূলক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অপরের স্বাধীনতা হরণকারী সংবাদ পরিবেশন করা। এটা কোনভাবেই সমীচীন নয়। আলজাজিরার রিপোর্ট একটি মিথ্যা বানোয়াট, কিছু কাট পেস্ট করে রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয়েছে।
করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে বিএনপি নেতারা অনেক ধরনের বিরোধিতা করে আসছিল, এখন তারাও ভ্যাকসিন নিচ্ছেন সাংবাদিকরা এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপি নেতারা করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে অনেক অপপ্রচার চালিয়েছেন, তারা প্রথমে বলেছে সরকার ভ্যাকসিন সময়মতো আনতে পারবে না, যখন সময়মতো চলে আসলো তখন বললেন এটি নিলে কোন কাজ হবে না। এই ভ্যাকসিন দিয়ে বিএনপি নেতাদের মেরে ফেলতে চাচ্ছেন এ ধরনের কথাও বলেছেন তারা।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, নানা ধরনের প্রশ্ন তুলে, দায়িত্বহীন অনেক কথা বলে শেষ পর্যন্ত বিএনপির অনেক নেতা করোনা ভ্যাকসিন নিয়েছেন, এবং নেওয়ার পক্ষে কথাও বলেছেন, সেজন্য তাদের সাধুবাদ জানাই। কথা আছেনা ‘গাধা জল ঘোলা করে খায়’, করোনা ভ্যাকসিন নেয়ার ক্ষেত্রে বিএনপির ভূমিকাও সেরকমই ঘটেছে।
আমরা চাই তারা ভ্যাকসিন নিয়ে সুস্থ ও সবল থাকুক।
জিয়াউর রহমানের খেতাব প্রত্যাহার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমানের ভূমিকা আসলে কি ছিল সেটি নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। মুক্তিযোদ্ধার ছদ্মাবরণে তিনি প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছিলেন। তার খেতাব বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ততো হয়নি এখনো। এটা নিয়ে জামুকাতে আলোচনা হয়েছে মাত্র।
বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপিতো বিরোধী দল, তারা বিক্ষোভ করতেই পারে। কিন্তু চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনসহ অন্যান্য যেসমস্ত ইস্যুতে তারা বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন তা হাস্যকর।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ কিংবা পাশ^বর্তী দেশে যে ধরনের স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয় সেই নিরিখে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন একটা ভালো নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে কিন্তু কার্যত মাঠে ছিলনা। ভোটেরদিন তাদের কাউকে দেখা যায়নি।
তথ্যমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে বিএনপির মহাসচিব কি চট্টগ্রাম এসেছিল? তিনি কি নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছিলেন? একটা মিটিং করেছেন? অথচ তাদেরতো প্রচারণা চালাতে কোন অসুবিধা ছিলনা।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, নির্বাচন কমিশনের নানা বিধিনিষেধের কারণে আমাদের দলের এমপি এবং মন্ত্রীদের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা ছিল। মির্জা ফখরুল সাহেবসহ তাদের দলের নোতারা যারা প্রতিদিন নয়াপল্টনে কথা বলেন, তাদেরতো কোন সমস্যা ছিলনা। তারা কিন্তু আসে নাই। অর্থাৎ তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, কিন্তু মাঠে ছিলনা, এটি তাদের ব্যর্থতা এবং দলীয় দুর্বলতা, এ কারণেই তারা নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৪ সালে আমাদের প্রয়াত নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখন থেকেই বিএনপির পরাজয় শুরু। মাঝখানে একবার আওয়ামী লীগ থেকে মঞ্জুরুল আলম মঞ্জুকে হায়ার করে নিয়ে গিয়ে তারা জয় লাভ করেছিল। তারা কখনোই এই শহরে জয়লাভ করেনি, বরাবরই আওয়ামী লীগই জয়লাভ করেছে। কারণ এটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি, সুতরাং এই নিয়ে বিক্ষোভ করে কোন লাভ নেই। বিজ্ঞপ্তি