সুপ্রভাত ডেস্ক »
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার প্রথম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিবনারায়ণ দাশের দান করা চোখের কর্নিয়ায় আলো দেখছেন মশিউর রহমান ও আবুল কালাম। চোখের দৃষ্টি ফিরে পেয়ে তারা এখন খুব খুশি।
গত ১৯ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) মারা যান শিবনারায়ণ দাশ। তার মৃত্যুর পর বিএসএমএমইউ ও সন্ধানী জাতীয় চক্ষু ডোনেশন সোসাইটি তার চোখ থেকে কর্নিয়া সংগ্রহ করে। পরে রংপুরের মশিউর রহমান ও চাঁদপুরের আবুল কালাম নামের দুজনের চোখে প্রতিস্থাপন করা হয় তার কর্নিয়া। ফলে দৃষ্টিহীন মশিউর ও কালাম ফিরে পেয়েছেন চোখের দৃষ্টি।
সোমবার (৬ মে) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানা যায়।
এ সময় বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক বলেন, দেশের মানুষের চোখের কর্নিয়া দান করার ব্যাপারে কুসংস্কার কাজ করে। মানুষ মনে করে, পুরো চোখ উঠিয়ে ফেলবে, চেহারা বিকৃত হবে, যা আত্মীয়স্বজন মেনে নিতে পারে না। কিন্তু বিষয়টা এমন নয়। চোখের কর্নিয়া সংগ্রহ করতে চেহারা বিকৃত হয় না। মাত্র ১০ মিনিট সময়ে কর্নিয়া সংগ্রহ করা হয়। তবে মানুষ এখন আস্তে আস্তে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।
উপাচার্য বলেন, ‘শিবনারায়ণ দাশ কর্নিয়া দান করে গেছেন। তার দেহও দান করে গেছেন। এক চোখের কর্নিয়া চাঁদপুরের মশিউর রহমানের চোখে প্রতিস্থাপন করেছি। অন্য চোখের কর্নিয়া রংপুরের আবুল কালামের চোখে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।’
দান করা চোখ থেকে কর্নিয়া সংগ্রহ করে প্রতিস্থাপন করেছেন বিএসএমএমইউর চিকিৎসক রাজশ্রী দাশ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, শিবনারায়ণ দেশকে একটি লাল-সবুজের পতাকা দিয়েছেন। মৃত্যুর পর দেহ ও চোখ দুটি দান করেছেন। মরণোত্তর চক্ষুদানে মহত্ত্ব আছে। তিনি ১৯ এপ্রিল মারা যান। তার কর্নিয়া সংগ্রহ করা হয় ১৯ এপ্রিল। পরের দিন ২০ এপ্রিল আমরা দুটি কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করি। মৃত্যুর ছয় ঘণ্টার মধ্যে কর্নিয়া সংগ্রহ করতে হয়। এতে সময় লাগে ১০ থেকে ১৫ মিনিট।
চোখের আলো ফিরে পেয়ে আপ্লুত মশিউর রহমান বলেন, আগের থেকে ভালো দেখতে পাচ্ছি। আমার চোখে সমস্যা ছিল জন্ম থেকেই। শিবনারায়ণ দাশের পরিবারকে ধন্যবাদ জানাই। চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক ভালো লাগছে। দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি ফিরে পেলে দেশের এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করবো।
কর্নিয়াপ্রাপ্ত আবুল কালাম বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে বাঁ চোখে দেখতাম না। কর্নিয়া লাগানোর পর এখন দেখতে পাই। আমার ভালো লাগছে খুব। অপারেশনের আগে চোখে নানা সমস্যা ছিল। এখন নেই। সন্ধানী চক্ষু হাসপাতালে অপারেশন হয়েছে আমার।
শিবনারায়ণ দাশের স্ত্রী গীতশ্রী চৌধুরী বলেন, মৃত্যুর পর তার (শিবনারায়ণ দাশ) শেষ ইচ্ছা পূরণ করা আমাদের দায়িত্ব। যদিও আমার আত্মীয়স্বজন এটা মেনে নিতে পারেননি। তারা মনে করেছিলেন হয়তো অর্থকষ্টে দেহ দান করে গেছেন। কিন্তু না, তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন মৃত্যুর পর দেহ ধূলিসাৎ হয়ে যাবে…। আমাদের ছেলে ও আমারও দেহ দান করার ইচ্ছা আছে।
তিনি আরও বলেন, আমি ৫৩ বছরের সাথিকে হারিয়েছি, আমি কিছু বলতে পারছি না। তিনি সারাজীবনই দেশের কল্যাণে কাজ করে গেছেন।
শিবনারায়ণ দাশের ছেলে অর্ণব আদিত্য দাশ বলেন, আমার বাবা বেঁচে থাকবেন মানুষের মাঝে। তার চোখের কর্নিয়ায় দুজন আলো দেখছেন, তাদের মধ্যে বাবা বেঁচে থাকবেন, এটা ভাবতে ভালো লাগে।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন