বাঁশখালীতে ৪ কর্মকর্তা গ্রেফতার, ৬ লাখ টাকা উদ্ধার
নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁশখালী :
বাঁশখালীতে ভুয়া এনজিও পল্লী সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা (পিএসডিও)’র ৪ কর্মকর্তাকে আটকের পর থানা পুলিশে সোপর্দ করেছে জনতা। তাদের কাছ থেকে ৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
এছাড়া আরও ১২ জন কর্মকর্তা শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে কমপক্ষে ৪৭ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে সোমবার রাত ১০টায় জ্ঞাত ৯ জন এবং অজ্ঞাত আরও ৭ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কালীপুর ইউনিয়নের পালেগ্রামের মৃত মনির আহমদের পুত্র মো. মনির হাছান নামের এক ব্যক্তি বাদি হয়ে বাঁশখালী থানায় এবং গতকাল মঙ্গলবার কাথরিয়া ইউনিয়নের কাথরিয়া গ্রামের মাহমুদুল হকের পুত্র শহীদুল্লাহ বাঁশখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পৃথক দুইটি মামলা করেন।
আটককৃতরা হলেন, ফেনীর সোনাগাজী এলাকার মৃত আবু বক্কর ছিদ্দিকের পুত্র ফানা উল্লাহ বাহার, এম সাইফুর রহমানের স্ত্রী নাসিমা খান, আবুল কালামের পুত্র মো. বাহার উদ্দিন আবেদ, মিজানুর রহমানের পুত্র ফখরুদ্দিন।
জানা গেছে, বাঁশখালীর কালীপুরের পূর্ব কোকদণ্ডী গ্রামের আঞ্জুমারার ভাড়া বাড়িতে সাইবোর্ডবিহীন অবস্থায় এক সপ্তাহ আগে মানিকগঞ্জ, ঘিওর, বানিয়াজুরী বাজার এলাকার পল্লী সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা নাম দেখিয়ে এনজিও’র কার্যক্রম শুরু করেন। এরপর দ্রুত তাদের কার্যক্রম বাঁশখালীর কালীপুর, বাহারছড়া, সাধনপুর, বৈলছড়ি, কাথরিয়া ইউনিয়ন, পৌরসভার জলদীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে ছড়িয়ে দেন। সদস্য সংগ্রহ করে তাদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ শুরু করে। গ্রামে গ্রামে প্রচার করে ৫ হাজার টাকা জমা করলে ৫০ হাজার টাকা, ১০ হাজার টাকা জমা করলে ১ লাখ টাকা ঋণ দেবে এ প্রতিশ্রুতিতে ২ শতাধিক লোকের কাছ থেকে ৫, ১০, ২০, ৩০ হাজার টাকা করে জমা রাখতে থাকে। তাদের মধ্যে কিছু লোককে ঋণ বই দিলেও অধিকাংশ লোককে হাতের লেখা কাগজ ধরিয়ে দেয়। তাতে সন্দেহ শুরু হলে গ্রামবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে কালীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আ ন ম শাহাদত আলম বিষয়টি তদন্ত করেন। তিনি বিভিন্নস্থান থেকে এ চক্রের ৪ সদস্যকে আটক করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তারের কার্যালয়ে হাজির করেন। সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও বিভিন্নস্থানে খবর নিয়ে পল্লী সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার নামে তালিকাভুক্ত কোন সংগঠনের খদিস না পেয়ে আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের কাছে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে ৫ লাখ ৯৫ হাজার ৬৫০ টাকা উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে বাঁশখালীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আরো অনেক টাকা প্রদানকারী সদস্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে ভিড় জমায়। পরে উদ্ধারকৃত টাকা কিছু সদস্যের ঋণ বই দেখে তাদের প্রদান করা হয়। অপরদিকে আটককৃত খবর পেয়ে বাঁশখালীর বিভিন্ন ইউনিয়নে কর্মকর্তা ভুয়া এনজিও কর্মকর্তারা গ্রাহকের টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। শতাধিক গ্রাহকের নেয়া ওই টাকা কমপক্ষে ৪৭ লাখ টাকা হবে বলে গ্রামবাসী জানিয়েছেন। বাঁশখালীর চেচুরিয়া গ্রামেও ভুয়া পল্লী মঙ্গল সমিতি নামে একটি এনজিও কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
বাঁশখালীর কালীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আ ন ম শাহাদাত আলম ও কাথরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘বাঁশখালীতে কর্মরত প্রত্যেক এনজিওগুলোর তালিকা ইউনিয়ন পরিষদে দেয়া হলে ভুয়া এনজিও’র প্রতারকরা এভাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঠকাতে পারবে না।’
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, ‘পল্লী সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার নামে কোন এনজিও বাঁশখালীতে কর্মরত নেই। এটা একটি ভুয়া এনজিও।
বাঁশখালী থানার এস আই নাজমুল হক বলেন, ভুয়া এনজিও’র প্রতারক ৪ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে চালান দেয়া হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে বাঁশখালী থানায় ও আদালতে দুই ভুক্তভোগী মামলা দায়ের করেছেন।