সুপ্রভাত ডেস্ক »
চার মামলায় সাজার রায় মাথায় নিয়ে ‘পালিয়ে থাকা’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা বাস্তবায়ন করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের এক সভায় তিনি বলেন, ‘মুচলেকা দিয়ে গেছিল সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আমি ব্রিটিশ সরকারের সাথে যোগাযোগ করব, তারেক জিয়াকে বাংলাদেশে ধরে এনে সাজা বাস্তবায়ন করব। আমেরিকা… তারা খুনি পালতেছে একটা, আবার কানাডা পালে আরেকটা, পাকিস্তানে আছে দুইটা। সবার কাছে বলব- এই খুনিদের ফেরত পাঠাতে হবে।’ খবর বিডিনিউজের।
‘আর ব্রিটিশ সরকারকে বলব তারেক জিয়াকে দেশে ফেরত পাঠাতে। কারণ সে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তারা (বহির্বিশ্ব) মানবতার কথা বলে, দুর্নীতির কথা বলে, আবার সেই খুনিকে, দুর্নীতিবাজকে তাদের দেশে আশ্রয় দেয়। কাজেই তাকে বাংলাদেশের কাছে হ্যান্ডওভার করতে হবে। এই দেশে নিয়ে এসে সাজা আমি বাস্তবায়ন করব।’
বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর এই সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘যেসব দেশ আমাদের দেশের গণতন্ত্রের কথা বলে, তাদের দেশের অবস্থাতো আমরা জানি। প্রতিদিন মানুষ খুন হয়, ভোটের সময় ভোট চুরি হয়েছে বলে তাদের ক্যাপিটলেও আক্রমণ হয়, পাঁচ-ছয় জন গুলি করে মারে, আর তাদের কাছ থেকে আমার গণতন্ত্রের ছবক নিতে হবে! আমরা বাংলাদেশ, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে যখন আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হল, আমি তখনই দেশে চলে আসছি। ওর বাপও (জিয়াউর রহমান) তো আমাকে ঠেকাতে পারেনি। তারেক জিয়ার বাপও আমাকে ঠেকাতে পারেনি। আবার যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, তখনও পারেনি। এতই নেতৃত্ব দেওয়ার শখ, দেশের বাইরে পালিয়ে থেকে কেন? ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি, সেই সুযোগে ডিজিটালি কথা বলে।’
‘বসে বসে আর মার খাওয়া যাবে না’
একসময় বিএনপি নেতার্কমীদের হাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতনের অভিযোগ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরা (বিএনপি) কীভাবে অত্যাচার করেছে, সেটা তুলে ধরতে হবে। বিএনপির অপকর্ম তুলে ধরতে হবে। আমাদের যে নেতাকর্মীরা বিএনপির হাতে ছেঁচা-মার খেয়েছে তাদের বসে থাকলে তো চলবে না। মানুষকে জানাতে হবে ওরা কী করতে পারে, কী করে। বসে বসে আর মার খাওয়া যাবে না, এটাও ঠিক।’
‘আগুন দিয়ে সহিংস কর্মকা- চালানোর’ বিষয়ে হুঁশিয়ার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অগ্নি সন্ত্রাসীদের, স্বাধীনতাবিরোধীদের আর ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবে না, এটা স্পষ্ট কথা। ওরা আমাদের উৎখাত করবে? ওরা পকেট থেকে এসেছে আবার পকেটেই থাকবে। গণতন্ত্রের কথা ওদের মুখে মানায় না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এবার যেন আর কোনো বিআরটিসির বাস পোড়াতে না পারে। যেটা পোড়াতে যাবে, এখন তো সবার হাতে ক্যামেরা ভিডিও ফুটেজ দেখে যেই হাতে আগুন দেবে, সেই হাত সঙ্গে সঙ্গে পুড়িয়ে দিতে হবে। কোনোদিন বলিনি, এখন বলব। আর মার খাওয়ার সময় নাই।’
‘নেতাকর্মীদের মাঠে থাকতে হবে’
পাড়া মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ‘সতর্ক অবস্থান’ নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই পঁচাত্তর থেকে একুশ বছর শুধু মার খেয়েছি। ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত শুধু মার খেয়েছি। এবার যে হাত দিয়ে মারবে, সেই হাত ভেঙে দিতে হবে। যে হাত দিয়ে মানুষকে আগুন দিতে আসবে, সেই হাত আগুনে পোড়াতে হবে। পোড়ার যন্ত্রণাটা তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে। এখনও পোড়া মানুষগুলোর অবস্থা দেখলে চোখে পানি আসে। মা দেখে চোখের সামনে স্বামী-সন্তান পুড়ে যাচ্ছে। এদের কীসের ক্ষমা, এদের আর ক্ষমা নাই।’
নেতাকর্মীদের ‘মাঠে থাকার’ নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ‘ছিনিমিনি খেলতে’ দেওয়া হবে না, এটা আমার স্পষ্ট কথা। প্রত্যেকটা এলাকায় নেতাকর্মীদের মাঠে থাকতে হবে। আর আমাদের যতগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে, তাদেরকে বলতে হবে তারা কী শান্তিতে থাকতে চায়? নাকি আবার অশান্তিকে জায়গা দিতে চায়। তাদের সিদ্ধান্ত দিতে হবে। জ্বালাও পোড়াও হত্যা-খুন-মানি লন্ডারিং এদেরে বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের শান্তিকে বিনষ্ট করতে দেওয়া হবে না।’
দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই প্রস্তুত থাকবেন, বাংলাদেশের কোনো মানুষের একটা ক্ষতিও যেন করতে না পারে। দোকানপাট সবাইকে বলে দেবেন তারাও যেন প্রতিবাদ করে। এর আগে বহু যন্ত্রণা দিয়েছে তারা। আমরা অনেক সহ্য করেছি। এইভাবে আমার কৃষক শ্রমিক আমাদের নেতা কর্মী কারও গায়ে হাত দিলে আর ক্ষমা নাই।’
‘গুণে গুণে অত্যাচারের জবাব দিতে পারতাম’
বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না। ২০০১ সালের নির্বাচনের পরপরই একেকজনে বাড়ি দখল করে রাতারাতি পুকুর কেটে কলাগাছের বাগান করেছে। মেয়েদের উপর পাশবিক অত্যাচার। ছয় বছরের মেয়ে থেকে শুরু করে ৬০ বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। সেই পূর্ণিমা ফাহিমা শুরু করে সারা বাংলাদেশের কত নাম বলব- সবার চিকিৎসা করতে হয়েছে। অনেকে লজ্জায় নাম প্রকাশ করেনি।
‘২০০১ সালে যে অত্যাচারটা আমাদের নেতাকর্মীদের উপর করেছে আমরা ২০০৯-এ ক্ষমতায় আসার পর গুণে গুণে সেই অত্যাচারের জবাব দিতে পারতাম, সেই ক্ষমতা আওয়ামী লীগ রাখে। কই আমরা তো করি নাই। আমরা তো তাদের উপর এইভাবে অত্যাচার নির্যাতন করতে যাইনি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘তারা আগুনে পুড়িয়ে মারা শুরু করল। খুব বড় গলায় বলে- তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, তারা তাদের কোনো ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে পেরেছে? বাস্তবায়ন করতে পারেনি, এটা হচ্ছে বাস্তবতা।’
আওয়ামী লীগকে ‘মাটি ও মানুষের’ সংগঠন দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর বিএনপির জন্ম কোথায়? জিয়াউর রহমানের উর্দি পরা পকেটে। পকেট থেকে কাগজ বের হয়েছে এমন সংগঠন। আওয়ামী লীগ কারও পকেটের সংগঠন না। এটা তাদের মাথায় রাখা উচিৎ। পকেটের সংগঠন, সেই কারণে তাদের মাটিতে কোনো শেকড় নাই।’
‘তারা হল স্বর্ণলতার মত, যে গাছে উঠে সে গাছ খেয়ে শেষ করে দেয়, এটা হল বিএনপি। যে গাছের উপরে স্বর্ণলতা উঠে সে গাছে আর কোনো ফল ধরে না, বিএনপি দেশের উপর উঠেছিল সেই দেশটাকে খেয়ে ফেলেছে। আওয়ামী লীগ আসার পরে দেশের উন্নতি হয়েছে। কারণ উন্নতি করার জন্য একটা মানসিকতা থাকা দরকার। আওয়ামী লীগ মানুষকে দিতে এসেছে।’
‘কত তেল আছে দেখব’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সবাই ‘আরাম-আয়েশে’ ব্যবসা করছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে সমস্ত মিডিয়া এখন ধর্ণা দিচ্ছে, এত টেলিভিশন এ তো আমারই দেওয়া। আমি যদি উন্মুক্ত না করে দিতাম, এত মানুষের চাকরিও হত না, এত মানুষ ব্যবসাও করতে পারত না। আর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সে বিএনপির ব্যবসায়ীই হোক বা আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ী হোক, সবাই কিন্তু শান্তিতে ব্যবসা করেছে।’
‘হাওয়া ভবনও আমরা খুলি নাই, খাওয়া ভবনও আমরা খুলি নাই বরং ব্যবসা করার সুযোগ করে দিয়েছি। আবারও হাওয়া ভবন আসলে, এখন আসলে আরেকটা নাম দিবে। আবারও চুষে চুষে খাবে। শান্তিতে ব্যবসা করতে হবে না।’
সংবাদকর্মীদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে যারা তেল মারছে, আমরা তাদেরও হিসাব করব। আওয়ামী লীগের সময় আরাম-আয়েশ করে ব্যবসা করে খাচ্ছে তো, কারও ব্যবসায় আমরা বাধা দিইনি তো। সবাইকে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা করতে দিয়েছি।’
তার ভাষায়, ‘বিএনপির আমলে তো এত আরামে ব্যবসা করতে পারেনি। এই মিডিয়া একটা উল্টা পাল্টা লিখলেই তো মারত। তারপরেও এত আহ্লাদ কিসের? এত তেল মারা কিসের? আমি তো জানি না। কত তেল আছে আমি দেখব।’