সুপ্রভাত ডেস্ক »
ধর্ম অবমাননার অভিযোগে একটি মামলায় উনিশ দিন কারাভোগের পর মুন্সীগঞ্জের বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে জামিন দিয়েছে আদালত।
রবিবার দুপুরে সংক্ষিপ্ত শুনানির পর পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় আদালত জামিন মঞ্জুর করেন।
গতকালই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে আটকের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছিল।
হৃদয় মণ্ডলের মুক্তির দাবীতে সামাজিক মাধ্যম ছাড়াও ঢাকা ও বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার শিক্ষকদের নেটওয়ার্ক একটি বিবৃতিতে তার মু্ক্তি চেয়ে বলেছিল, হৃদয় মণ্ডলের মতো একজন শিক্ষককে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করা প্রয়োজন, সেখানে রাষ্ট্র তাকে বন্দী করে রেখেছে।
স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষার একটি ক্লাসে একজন শিক্ষার্থীর প্রশ্নের জবাবে ধর্ম আর বিজ্ঞানের পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।
সেটা গোপনে ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার পর ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঐ শিক্ষককে গত ২২শে মার্চ গ্রেপ্তারের পর গত সপ্তাহে স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দুই দফায় তার জামিনের আবেদন নাকচ করেছে।
হৃদয় মণ্ডলের ঘটনার পর বাংলাদেশে বিজ্ঞান শিক্ষা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হতে পারে কিনা, জানতে চাওয়া হলে বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ”একজন শিক্ষক বৈজ্ঞানিক জ্ঞান এবং তথ্যের ভিত্তিতে একটা বিষয়কে ব্যাখ্যা করবেন। সেখানে তাকে এমন একটা প্রশ্নের সম্মুখীন করা হয়েছে, যার সঙ্গে বিজ্ঞান শিক্ষা বা ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একটা আলোচনা সৃষ্টি করে বিতর্ক করার জন্য এবং পরিস্থিতির শিকার করার জন্য আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে,” তিনি বলছেন।
মহিবুল হাসান চৌধুরী শনিবার বিবিসিকে বলেন, ”তবে একটা বিষয় থাকতে পারে, এটাকে পুঁজি করে, এই বিষয়টাকে সামনে এনে এবং সাংঘর্ষিক একটি পরিস্থিতি তৈরি করে একটা মহল দীর্ঘদিন ধরে চাইছে একটা সাম্প্রদায়িক সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য এবং ধর্মে ধর্মে এক ধরনের সংঘাত তৈরি করার জন্য। যে রাজনৈতিক শক্তিগুলো বাংলাদেশকে পাকিস্তানে পরিণত করতে চায়, কট্টর একটা সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তাদের পক্ষ থেকে এটা একটা অপচেষ্টা। সেটার বিষয়ে আমরা অবগত আছি।”
পাকিস্তানে এ ধরণের নানা ঘটনায় সহিংসতা, অপদস্থ করার উল্লেখ করে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মহিবুল আলম চৌধুরী বলছেন, ”আমাদের দেশে যাতে এই ধরণের কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, সেজন্য আমি মনে করি আমাদের পুলিশ প্রশাসন ও বিচার প্রশাসনকে একটা বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে যে, কে কি বললো, কে কি শুনল, সেটার ওপর ভিত্তি করে মামলা গ্রহণ করা, আবার সেটার ওপর ভিত্তি করে জামিন না দেয়া, এগুলো সঠিক বলে আমার কাছে মনে হয় না।”
তবে তিনি বলেন, ”এটা যদি একটা উদাহরণ হিসাবে সৃষ্টি হয়ে যায়, তাহলে কিন্তু সমূহ বিপদ অপেক্ষা করছে”।
সূত্র : বিবিসি বাংলা