এবার ফাঁসলেন ১৭ জন

এনআইডি জালিয়াতি

দুদকের দুই মামলায় আসামি নির্বাচন কর্মকর্তা, কাউন্সিলর, ইউপি চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন কর্মচারী

নিজস্ব প্রতিবেদক »
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও পাসপোর্ট পাইয়ে দেওয়ার মামলায় এবার ফাঁসলেন আরো ১৭ জন। এই ১৭ জনের মধ্যে রয়েছে কাউন্সিলর, ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং নির্বাচনী কর্মকর্তা, জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রস্তুতকারী ও নির্বাচনী কর্মচারীগণ।
এনআইডি জালিয়াতির দুই মামলায় তাদের আসামি করে দুটি মামলা দায়ের করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দীর্ঘদিন তদন্ত করে গতকাল মঙ্গলবার দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা দুটি দায়ের করা হয়। এর আগে সোমবার এনআইডি জালিয়াতির আরো এক মামলায় একজন কাউন্সিলরসহ ছয়জনকে আসামি করে আরো একটি মামলা দায়ের করেছিল দুদক।
জানা গেছে, জালিয়াতির মাধ্যমে দুর্ধর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাত নূর আলম (পরবর্তিতে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত) ও তার স্ত্রীকে জন্ম নিবন্ধন ও এনআইডি কার্ড পাইয়ে দেওয়ায় নির্বাচনী কর্মকর্তাসহ ৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে দুদক। এই মামলার বাদি হয়েছেন দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সুভাষ চন্দ্র দত্ত। মামলায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সরফরাজ কাদের রাসেলকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। এছাড়া একই ওয়ার্ডের জন্ম নিবন্ধন সহকারী ফরহাদ হোসাইন, ডবলমুরিং নির্বাচন অফিসের সাবেক ডাটা এন্ট্রি অপারেটর শাহ জামাল, পাঁচলাইশ থানা নির্বাচন অফিসের প্রুফ রিডার উৎফল বড়ুয়া, একই পদের রন্তু বড়ুয়া ও সাবেক পাঁচলাইশ থানা নির্বাচন অফিসার এবং বর্তমানে পাবনার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখকে আসামি করা হয়েছে।
অপরদিকে রোহিঙ্গা নারী লাকী আক্তারকে এনআইডি পাইয়ে দেওয়ার ঘটনায় অপর মামলায় বাদি হয়েছেন চট্টগ্রাম অঞ্চল-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। তিনি সেই মামলায় ১১ জনকে আসামি করেছেন। মামলার এজাহারে উল্লেখিত আসামিরা হলেন ডবলমুরিং থানা নির্বাচন অফিসের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীন, চট্টগ্রাম সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসের অফিস সহায়ক মো. নূর মোহাম্মদ, হাটহাজারী উপজেলার নির্বাচন অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মো. সাইফু উদ্দিন চৌধুরী, নির্বাচন অফিসের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট সত্য সুন্দর দে, ৩ নম্বর মির্জাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আবছার, ইউনিনের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য নুরুল ইসলাম, ৩ নম্বর মির্জাপুর জন্মসনদ প্রস্তুতকারী মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন, হাটহাজারীর দালাল মোহাম্মদ আজিজুর রহমান ও তার পিতা মো. আ. ছালাম, রোহিঙ্গা নাগরিক লাকী আক্তার (তার প্রকৃত নাম রমজান বিবি) ও নজির আহম্মেদ।
মামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুদক চট্টগ্রাম অঞ্চল-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই মাসের মধ্যে জালিয়াতির মাধ্যমে এনআইডি দেয়া হয়েছিল। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তদন্ত শেষে তা উদঘাটন করি এবং কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে দুদক আইনে মামলা দায়ের করা হয়। এনআইডি ও পাসপোর্ট জালিয়াতির এধরনের ঘটনা আরো রয়েছে, সেগুলোও পর্যায়ক্রমে মামলায় রূপান্তর হবে।’
অপরদিকে রোহিঙ্গা ডাকাত নূর আলমকে এনআইডি দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে। এই সময়ের মধ্যে জন্মনিবন্ধন সনদ, এনআইডি কার্ড ও পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা প্রবেশের পর বিভিন্ন সময়ে জেলা নির্বাচন কার্যালয় ও ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলের সহায়তায় রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে দেশের বাইরেও চলে গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে গত কয়েকবছর ধরে সরকারের পক্ষ থেকে এনআইডি প্রদান ও পাসপোর্ট তৈরিতে কঠোরতা অবলম্বন করা হয়েছে।