হিরো আলমের ওপর হামলা

ঢাকা-১৭ আসনে উপ-নির্বাচন

সুপ্রভাত ডেস্ক »

ভোটের শেষ মুহূর্তে ঢাকা-১৭ আসনে উপ-নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিকালে সোয়া ৩টার দিকে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে তিনি এ হামলার মুখে পড়েন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা এই হামলার পেছনে জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন হিরো আলমের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মো. ইলিয়াস।

তিনি বলেন, হামলার শিকার হওয়ার পর একতারা প্রতীকের প্রার্থী রামপুরার বেটার লাইফ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ঢোকার আগে স্কুলের মাঠে কয়েকজনের সঙ্গে সেলফি তোলেন হিরো আলম। তখন হামলাকারীদের কয়েকজন এসে তাকে ঘিরে ধরেন এবং বলেন, ‘এটা টিকটক ভিডিও বানানোর জায়গা না।’

হিরো আলমকে ধাওয়া শুরু করেন।

তখন কেন্দ্রটির দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা হিরো আলমকে ঘিরে ধরে স্কুলের গেইটের দিকে নিয়া যান।

ভিডিওতে দেখা গেছে, স্কুলের থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ সদস্যরা কেন্দ্রে ফিরে যায়, আর এই সুযোগে ধাওয়াকারীরা হিরো আলমকে ধাক্কা দিয়ে সড়কের ওপর ফেলে দেন।

এরপর চলে একতারা প্রতীকের প্রার্থীর ওপর লাথি, কিলঘুষি, ধস্তাধস্তি। নৌকার ব্যাজ পরা হামলাকারীদের কয়েকজনের হাতে লাঠিসোঁটাও ছিল। মারধরের মুখে দৌড়ে পালান হিরো আলম।

বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সোয়া ৩টার দিকে বনানীর বিদ্যানিকেতেন কেন্দ্রে কিছু ইউটিউবার নিয়ে ঢোকেন হিরো আলম। সেখানে বাধা পেয়ে তিনি কেন্দ্রের বাইরে এলে সেখানকার লোকজনের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি বাধে। একপর্যায়ে বহিরাগতরা তাকে ধাওয়া করে।
এ বিষয়ে ঢাকার অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ বলেন, হিরো আলমের ওপর হামলা হয়েছে-এ ধরনের একটা বিষয় আমরা শুনেছি। এখনও এ বিষয়ে লিখিত কোনও অভিযোগ আমরা পাইনি।

এই সরকারের অধীনে আর ভোটে যাব না
কন্টেন্ট ক্রিয়েটর থেকে ভোটের রাজনীতিতে নেমে আক্রান্ত হয়ে চলছেন হিরো আলম; তবে এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে আর নির্বাচন করবেন না তিনি।

সোমবার ঢাকা-১৭ উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণের শেষ মুহূর্তে হামলার শিকার হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে এসে ভোটের ফল প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছেন স্বতন্ত্র এই প্রার্থী।

বগুড়ার আশরাফুল আলম কেবল টিভি অপারেটর থেকে ইউটিউব-ফেইসবুকে কন্টেন্ট তৈরি করে আলোচিত হয়ে ওঠার পর নিজের এলাকায় দুই দফা নির্বাচন করেন। সেখানেও হামলার শিকার হতে হয়েছিল তাকে।

সর্বশেষ ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে প্রার্থী হন তিনি। বিএনপিসহ অধিকাংশ দলের বর্জনের মধ্যে নিরুত্তাপ এই নির্বাচনে একতারা প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী কিছুটা হলেও উত্তাপ ছড়াচ্ছিলেন।

প্রার্থী হলেও এই আসনে ভোটার না হওয়ায় তার ভোট দেওয়ার সুযোগ ছিল না। তবে সকাল থেকে ভোট কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন তিনি।

সকালেও এক কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের কাছে অনিয়মের অভিযোগ দিয়েও বলেছিলেন, ‘ফলাফল মেনে নেব কি-না, সেটা পরের হিসাব। কিন্তু ভোটের লাস্ট সময় পর্যন্ত থাকব মাঠে।’

‘কারণ, আমরা দেখতে চাই, তারা কতটা আমার উপর অত্যাচার করে, কতটা আমার এজেন্টদের বের করে দেয়। যদি জোর করে সিল মারে, দেশের জনগণ দেখবে, আপনারাও দেখবেন আমার উপর কত অন্যায়-অত্যাচার করে তা দেখা পর্যন্ত থাকব,’ নিজের অবস্থানের পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছিলেন তিনি।

তবে দুপুরের পর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে হামলার শিকার হন হিরো আলম। তাকে বেধড়ক পেটান হয়। আর হামলার অভিযোগ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

এরপর বেসরকারি একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে রামপুরায় এক বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেন, ‘আমার উপর যে আঘাত এটা প্রথম না, ২০১৮ সালেও আঘাত করেছে। আমাকে আঘাত করে মেরে ফেলার পরিকল্পনা তারা করেছিল।

বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের বাইরে ঢাকা ১৭ উপ নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম কিলঘুষি, লাথি ও ধস্তাধস্তির শিকার হন।
‘(আজ) কীভাবে আমার উপর আঘাত করেছে, পুরো জাতি দেখেছে। ওখানে মূলধারার গণমাধ্যম ছিল। আমার উপর আঘাতেই বোঝা যায়, এই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে না হয়নি।’

ভোটের ফল প্রত্যাখ্যানের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আর কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।

এই হামলা নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রেসহ বিদেশি সংস্থাগুলোকে চিঠি দিয়ে হামলার ঘটনা জানাবেন বলে জানান হিরো আলম।

হামলার ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ওরা সকাল থেকেই পরিকল্পনা করছিল, কখন অ্যাটাক করা যায়। সেই সুযোগ খুঁজছিল। সারাদিন বিভিন্ন কেন্দ্রে তারা আমার গায়ে হাত দেয় নাই, লাস্টে যখন কেন্দ্রে আমরা গেলাম, দেখলাম, ওরা ব্যালটে সিল মারতেছিল।

‘এই জায়গাটায় আমরা যখন ধরতে যাচ্ছিলাম, তখন আমাকে বের করে দিল। পুলিশ সামনেই ছিল, পুলিশকে আমি বললাম, আমাকে তো ওরা ঢুকতেই দিল না।’

তিনি বলেন, ‘আমি যখন গেইট থেকে বের হয়ে আসলাম, তখন একজন আমাকে ধাক্কা দিল। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আমাকে ধাক্কা মারলেন কেন? এরপর আমাকে আমার এজেন্টকে মারধর করা শুরু করল। মারতে মারতে আমি যখন রাস্তায় পড়ে গেলাম, তখন আমাকে ইচ্ছামত লাত্থি-গুতা-কিল মারতে থাকল। মাথায় আঘাত করল। ওঠার পর মারতে মারতে আমাকে দৌড়ায় নিয়ে গেল। তাহলে আপনারা দেখেন, একটা নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু?’

ইউটিউবারদের নিয়ে কেন্দ্রে ঢুকেছিলেন- ইসি কর্মকর্তাদের এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওখানে পুলিশ তো তিন-চারজনকেই ঢুকতে দেয় না। তাহলে আমরা কখন ঢুকলাম?’