হরতাল ডেকে ভাঙচুর করলে ব্যবস্থা : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

শোক দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সভা

‘বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। ১৯৭১ সালে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবনবাজি রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন। তার জন্ম না হলে আমরা আজ স্বাধীন দেশ পেতাম না।’

শুক্রবার বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নগর ও জেলা ইউনিট কমান্ডের যৌথ উদ্যোগে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে নগরীর আন্দরকিল্লাস্থ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন চত্বরে আয়োজিত আলোচনা সভার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উদ্বোধকের বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি জাতীয়, শোক ও সাংগঠনিক পতাকা উত্তোলন এবং মোমবাতি প্রজ্বলনের মাধ্যমে ৫-১০ আগস্ট পর্যন্ত ৬ দিনব্যাপী শোক দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতা বিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠরোধ করতে চেয়েছিল। খুনি জিয়া-মোস্তাকসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে যারা সহ্য করেনি তারাই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করেছে। এর মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কময় অধ্যায় যুক্ত হয়েছিল। যারা স্বাধীনতা বিরোধী ও বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মদদ দিয়েছে তাদেরও খুঁজে বের করতে হবে। স্বাধীনতা পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত-রাজাকারেরা ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের শুধু বিদেশে পাঠানো হয়নি, দূতাবাসের মাধ্যমে তাদের উচ্চ পদে চাকরি দেয়া হয়েছিল। তাই শোককে শক্তিতে রূপান্তরের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত অনেককেই এর মধ্যে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। যারা এখনো পলাতক রয়েছে তাদের মধ্যে দুয়েকজনকে শিগগিরই দেশে আনা হবে। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সবাইকে হত্যার চেষ্টা হয়েছিলো, কারণ তারা ভালো করেই জানতো, বঙ্গবন্ধুর রক্ত যাদের ধমনীতে প্রবাহিত, তাদের কেউ বেঁচে থাকলে খুনিদের বিচার একদিন হবে। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নয়নের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যেত। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা তা হতে দেয়নি। তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, বিএনপি হরতাল,ধর্মঘট ডাকতে পারে। তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু অহেতুক যানবাহন বন্ধ, জনগণের অসুবিধা সৃষ্টি, রক্তারক্তি বা ভাঙচুর করলে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের কাজ সঠিকভাবে করবে।
মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা অসীম সাহসিকতার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ডাকে সাড়া দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা তাদের সেই ত্যাগের প্রতিদান দিয়েছেন। সরকারি ভাতাসহ নানা সুযোগ সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় প্রমাণ করেছেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। নানা ধরনের ষড়যন্ত্র শেখ হাসিনা মোকাবিলা করছেন।

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে নিরস্ত্র বাঙালি সশস্ত্র যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। আবার বঙ্গবন্ধু কন্যার ডাকে আজকে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবধরনের সহযোগিতা করছি। এই দেশ হলো হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানের দেশ। এই দেশে সবাই স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সবকিছুতে সমান অধিকার পাবে। অনেকেই ইতিহাস বিকৃত করে অনেক কথা বলছেন। বঙ্গবন্ধুর নামটাও মুছে ফেলার প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। অনেক দৃশ্য দেখেছি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দৃশ্য কোনো দিন ভুলতে পারবো না। ১৫ আগস্টের কথা কোনো দিন ভুলবো না। কী অপরাধ করেছিলো বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যরা। এসব কিছুর আজকে হিসাব নিকাশের সময় এসেছে। কারা এর সুবিধাভোগী? বঙ্গবন্ধুকে খুন করে খুনি, কুলাঙ্গাররা বাংলাদেশকে অন্ধকারের জগতে ডুবিয়ে দিয়েছিল।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৭৫ সালের নারকীয় হত্যাকা-ের পর ষড়যন্ত্র থেমে নেই। বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে কারা ছিল তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। বঙ্গবন্ধু একমাত্র নেতা যিনি সমগ্র বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিলেন। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। আজ তারই সুযোগ্য কন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও উদ্দেশ্য হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে আপনারা দেশকে ভালোবাসুন, দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র রুখে দিন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে জানার কোন শেষ নেই। তিনি অত্যন্ত দূরদর্শী নেতা ছিলেন। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তিনি আজীবন যুদ্ধ করে গেছেন। যে ব্যক্তি আজীবন দেশের স্বাধীনতা ও এদেশের মানুষের জন্য ত্যাগ করে গেছেন তাকেই সপরিবারে নিষ্ঠুরতম হত্যাকা-ের শিকার হতে হয়েছে। আমরা দুর্ভাগা জাতি। বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছে তারাই আজ ইতিহাস বিকৃত করছে। নতুন প্রজন্মের কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের সরকারের উন্নয়নের মহাসড়কে সামিল হতে হবে। জাতির পিতা হত্যাকারী ও ইতিহাস বিকৃতকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা জরুরি।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদের সভাপতিত্বে ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. সরওয়ার আলম চৌধুরী মনির সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান ও জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম রশিদুল হক।

এতে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম সরওয়ার কামাল দুলু, মহানগর ইউনিটের সহকারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সাধন চন্দ্র বিশ্বাস, কমিউনিটি পুলিশিং চট্টগ্রাম মহানগরীর সদস্য সচিব অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন, চবি উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক রাসেল ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড মহানগর কমিটির আহ্বায়ক সাহেদ মুরাদ সাকু।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা ইউনিটটের অধীন সর্বস্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সন্তান কমান্ডের নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি