স্বেচ্ছায় সরে যেতে সম্মত এলাকাবাসী

লালদিয়ার চরে উচ্ছেদ অভিযান কাল

উচ্ছেদে সংঘাত হবে না : কাউন্সিলর সালেহ আহমদ
সহনশীলতার মাধ্যমে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শেষ করা হবে : বন্দর চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক :
কোনো ধরনের সংঘাত ছাড়াই উচ্ছেদ হতে পারে লালদিয়ার চরের বসতি। ২০০৫ সালে উচ্ছেদ অভিযানে ব্যাপক গোলযোগ হলেও এবার সেই শঙ্কা নেই। গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহজাহানের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এমনই আভাস পাওয়া গেছে। লালদিয়া চরের বাসিন্দাদের প্রতিনিধিদের একটি টিম বন্দর গেস্ট হাউসে এ বৈঠক করেন। তবে পুনর্বাসনের দাবি নিয়ে লালদিয়া চরের প্রতিনিধিরা আজ রোববার জেলা প্রশাসকের সাথে বৈঠক করার কথা রয়েছে।
বৈঠক প্রসঙ্গে ৪১ নম্বর ওয়ার্ডেও কাউন্সিলর ও দীর্ঘদিনের জনপ্রতিনিধি সালেহ আহমদ চৌধুরী বলেন, আমরা বন্দর চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করেছিলাম। দেখা করে আরো কয়েকদিন পরে উচ্ছেদ করার জন্য সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু বন্দরের চেয়ারম্যান অপারগতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন ১ মার্চ (সোমবার) উচ্ছেদ অভিযান শুরু করবেন। সেই হিসেবে আমরা বসতি ছেড়ে দিচ্ছি।
অভিযানে সংঘাতের শঙ্কা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, আমরা শান্তিপ্রিয়ভাবে জায়গা ছেড়ে দেবো এবং বন্দর তাদের জায়গা বুঝে নেবে। আমরা রক্তপাত চাইনা।
পুনর্বাসন বিষয়ে বন্দর চেয়ারম্যানকে বলেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বন্দর চেয়ারম্যানকে বলায় উনি বলেছেন এটা (পুনর্বাসন) জেলা প্রশাসকের বিষয়। তাই আমরা আজ (রোববার) জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করবো।
এ বিষয়ে কথা হয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহানের সাথে।
তিনি বলেন, লালদিয়ার চরের প্রতিনিধিদের সাথে কথা হয়েছে। আমরা তাদের বলেছি ইতিমধ্যে দুই দফায় ( ২৪ মার্চ ও ২৮ মার্চ) সময় পেছানো হয়েছে। আর পেছানোর সুযোগ নেই। ৯ মার্চ আদালতে রিপোর্ট দিতে হবে। তাই ১ মার্চ উচ্ছেদ প্রক্রিয়া চালাতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা তাদের বলেছি আমরা নিজেরা আপনাদের (লালদিয়ার চরের মানুষ) উচ্ছেদ করছি না। আদালতের নির্দেশনা মানতে করা হচ্ছে। একইসাথে আগামীতে বন্দরের নিয়োগে এই এলাকার মানুষদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। একইসাথে যারা ভূমিহীন থাকবে তাদের যাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘর দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় সেই সুপারিশও আমরা করবো।
উচ্ছেদ প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের বল প্রয়োগ করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, উচ্ছেদ কার্যক্রমে যাতে কোনো অপ্রীতিকর অবস্থা তৈরি না হয়, সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ সংযম দেখাবো। সহনশীলতার মাধ্যমে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শেষ করতে চাই।
উল্লেখ্য, লালদিয়ার চরে তিনটি ব্লক রয়েছে। ১৯৩৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এই তিনটি ব্লক অধিগ্রহণ করেছিল। এরমধ্যে একটি ব্লক (১৩ ও ১৪ নম্বর খালের মধ্যবর্তী জায়গা) ২০০৫ সালের জুলাই মাসে উচ্ছেদ করেছিলেন তৎকালীন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ম্যাজিস্ট্রেট মুনীর চৌধুরী উচ্ছেদ করেছিলেন। সেই উচ্ছেদকৃত জায়গায় পরবর্তীতে গড়ে তোলা হয়েছে ইনকনট্রেন্ড টার্মিনাল। এখন ১২ ও ১৩ নম্বর খালের মধ্যবর্তী এবং ১৪ ও ১৫ নম্বর খালের মধ্যবর্তী দুটি জায়গা রয়েছে। এখন এই জায়গা দুটি উচ্ছেদ করা হবে।
মূলত: কর্ণফুলীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ নিয়ে মামলার প্রেক্ষিতে এ উচ্ছেদ অভিযান। কর্ণফুলী নদীর উভয় তীরের অবৈধ স্থাপনা নিয়ে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের রিট মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সেই মামলা বাদি ছিলেন অ্যাডভোকেট মানজিল মোরশেদ। ২০১০ সালের ৮ জুলাই দায়ের করা সেই মামলার শুনানি শেষে ২০১৬ সালের আগস্টে হাইকোর্ট উভয় তীরের স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছিল। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলেও পরবর্তীতে তা বন্ধ হয়ে যায়। এ বিষয়ে আদালত থেকে কয়েকদফা নির্দেশনা দেয়ার পর সম্প্রতি নদী তীরের সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে আগামী ৯ মার্চের মধ্যে তা জানাতে বলা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে উচ্ছেদ অভিযান। এ জায়গায় ১৯৭২ সাল থেকে বসতি স্থাপন করছেন বলে স্থানীয়রা পুনর্বাসন ছাড়া সরে যেতে রাজি নয়। এ নিয়ে তারা মানববন্ধন ও সমাবেশ করে আসছে।