স্বপ্ন সেতুর দ্বার খুলল

সুপ্রভাত ডেস্ক »

মাওয়ায় পদ্মার তীরে উন্মোচিত হল ফলক, বাতাসে উড়ল রঙিন আবির, বর্ণিল উৎসবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সেতুর ফলক উন্মোচন করেন সরকারপ্রধান। দুই দশক আগে তিনিই দক্ষিণ জনপদের ২১ জেলার মানুষের স্বপ্নের এ সেতুর ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। শুধু উদ্বোধন নয় সেতুতে টোল দিয়ে তিনিই এ সেতুর প্রথম যাত্রী হয়েছেন।
সকালে ঢাকার তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে করে মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতু সার্ভিস এরিয়ায় সুধী সমাবেশে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারের মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাসহ প্রায় সাড়ে তিন হাজার অতিথি সেখানে হাজির ছিলেন সকাল থেকেই।
সুধী সমাবেশে দেওয়া বক্তৃতায় শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে বলেন, আসুন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এই ঐতিহাসিক দিনে যে যার অবস্থান থেকে দেশ এবং দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার শপথ নিই, এ দেশের মানুষের ভাগ্য পবির্তন করে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব।’
দেশের মানুষকে ‘স্যালুট’ জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণের সমর্থন আর সাহসেই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কঠিন কাজটি সম্ভব করা সম্ভব হয়েছে।
‘এই সেতু শুধু একটি সেতু নয়, এই সেতু দুই পাড়ের যে বন্ধন সৃষ্টি করেছে তা নয়, এই সেতু শুধু ইট, সিমেন্ট, স্টিল, লোহা, কংক্রিটের একটা অবকাঠামো নয়, এই সেতু আমাদের অহংকার, এই সেতু আমাদের গর্ব। এই সেতু আমাদের সক্ষমতা, আমাদের মর্যাদার শক্তি।’
বক্তব্য শেষে মাওয়ার এই সমাবেশ থেকেই স্মারক ডাক টিকিট, স্মারক নোট, স্যুভেনির শিট, সিলমোহর ও উদ্বোধন খামের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেতু নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত প্রকৌশলীদের সঙ্গে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে গ্রুপ ছবি তুলতে দাঁড়ান ক্যামেরার সামনে।
সুধী সমাবেশ শেষ করে বেলা ১১টা ৪৯ মিনিটে ৭৫০ টাকা টোল দিয়ে প্রথম যাত্রী হিসেবে পদ্মা সেতু এলাকায় প্রবেশ করেন সরকার প্রধান। শুধু নিজের গাড়ির নয়, বহরে থাকা সবগুলোর গাড়ির মোট ১৬ হাজার ৪০০ টাকা টোল মেটান তিনি। খবরবিডিনিউজ।
টোল প্লাজা থেকে বেরিয়ে বেলা ১১টা ৪৯ মিনিটে পদ্মা সেতুর দিকে এগিয়ে যায় প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর। সেতুতে ওঠার আগে পদ্মা সেতুর ফলক উন্মোচন করেন সরকারপ্রধান। বাতাসে রঙিন আবীর উড়িয়ে বর্ণিল পরিবেশে উদ্বোধন হয় বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর।
ফলক উদ্বোধনের পর মোনজাত পরিচালনা করেন মন্ত্রীপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। সেখানে লাল গালিচায় ফটোসেশনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। তার সঙ্গে মেয়ে সায়মা ওয়াজেদও ছিলেন এ সময়। এই উৎসবের ক্ষণে মায়ের সঙ্গে তাকে মোবাইল ফোনে সেলফি তুলতে দেখা যায়।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারেক সিদ্দিকীও উপস্থিত ছিলেন এ সময়। এ ছাড়া ২০১২ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির চেষ্টার অভিযোগ ওঠায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হওয়া যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এবং তখনকার যোগাযোগ সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূইয়াও উপস্থিত ছিলেন এ সময়। যদিও সেই অভিযোগের কোনো প্রমাণ মেলেনি।
মাওয়ায় ফলক উন্মোচনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর মূল সেতুতে ওঠে বেলা ১২টা ৭মিনিট। কিছুক্ষণ পর বহরের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে সেতুতে দাঁড়ান শেখ হাসিনা। সেখানে প্রায় ১৫ মিনিট সময় কাটান তিনি, উপভোগ করেন বিমান ও হেলিকপ্টারের ফ্লাইং ডিসপ্লে।
কয়েকটি হেলিকপ্টার পতাকা উড়িয়ে প্রদর্শনীতে অংশ নেয়। বিমান থেকে ছড়ানো লাল, সবুজ, নীলসহ নানা রঙের ধোঁয়া।
সেতুতে দাঁড়িয়ে মিগ-২৯ জঙ্গি বিমানের প্রদর্শনীও উপভোগ করেন সরকার প্রধান। উৎসবের এ মুহূর্তগুলোকে ক্যামেরায় ধারণ করতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে। স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরীও সেতুর ওপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন এ সময়।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু পাড়ি দিয়ে ১২টা ৩৪ মিনিটের দিকে প্রধানমন্ত্রী পৌঁছান শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে। সেখানে সেতুর আরেকটি ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী, পরে যোগ দেন মাদারীপুরের শিবচরে আওয়ামী লীগের বিশাল সমাবেশে।
সেখানে তিনি বলেন, সেতু নির্মাণে যারা বাধা দিয়েছিল, তাদের ‘উপযুক্ত জবাব’ দেওয়া হয়েছে। পদ্মাসেতু নির্মাণ করে বাংলাদেশ দেখিয়েছে, ‘আমরাও পারি।’ খবরবিডিনিউজ।
বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়ার পর জনগণের ‘সাহস ও শক্তি নিয়েই’ সেতুর কাজ শুরু করেছিলেন জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এই খরস্রোতা পদ্মা নদী পার হতে গিয়ে আর কাউকে সন্তান হারাতে হবে না, বাবা-মাকে, ভাইবোনকে হারাতে হবে না। আজকে সেখানে আপনারা নির্বিঘ্নে চলতে পারবেন। সেই ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি।’
পদ্মা সেতুকে ‘ প্রাণের সেতু’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ পাশে ছিল বলেই সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।