স্কুল খোলার জন্য আর অপেক্ষা করা যায় না: ইউনিসেফ-ইউনেস্কো

সুপ্রভাত ডেস্ক »

সবাইকে টিকা দেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষায় না থেকে স্কুল খুলে দিয়ে শ্রেণিকক্ষে ক্লাস শুরুর আহ্বান এসেছে জাতিসংঘের দুই সংস্থা ইউনিসেফ ও ইউনেস্কোর তরফ থেকে।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর এবং ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে অ্যাজুল এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন,  “১৩ জুলাই অনুষ্ঠেয় গ্লোবাল এডুকেশন মিটিং সামনে রেখে আমরা নীতি নির্ধারক এবং সরকারগুলোর প্রতি অনুরোধ জানাই, একটি প্রজন্মকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে নিরাপদে স্কুল খুলে দেওয়ার বিষয়টিকে আপনারা অগ্রাধিকার দিন।” খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

বিশ্বে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব শুরুর পর ১৮ মাস পেরিয়ে গেছে; লাখ লাখ শিশুর পড়ালেখা এখনও ব্যাহত হচ্ছে। এখনও ১৯টি দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ থাকায় ১৫ কোটি ৬০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এ তথ্য তুলে ধরে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, “এভাবে চলতে পারে না। বন্ধের ক্ষেত্রে স্কুলগুলো সবার শেষে এবং খোলার ক্ষেত্রে সবার আগে বিবেচনায় রাখা উচিত।”

ইউনিসেফ ও ইউনেস্কো বলছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় সরকারগুলো অনেক সময় স্কুল বন্ধ করে দিচ্ছে এবং দীর্ঘদিন ধরে সেগুলো বন্ধ রাখছে। অনেক ক্ষেত্রে শুরুতেই স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, অথচ বার ও রেস্তোরাঁগুলো খোলা থাকছে।

“স্কুলে যেতে না পারায় শিশু-কিশোরদের যে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে, তা হয়তো কখনোই পুষিয়ে দেওয়া যাবে না। শেখার ক্ষতি, মানসিক সংকট, সহিংসতা ও নির্যাতনের সম্মুখীন হওয়া থেকে শুরু করে স্কুল-ভিত্তিক খাবার ও টিকা না পাওয়া বা সামাজিক দক্ষতার বিকাশ কমে যাওয়া – শিশুদের ক্ষেত্রে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি তাদের শিক্ষাগত অর্জন এবং সামাজিক সম্পৃক্ততায় এর প্রভাব পড়বে। সবচেয়ে কম সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বেঁচে থাকা শিশুরা, দূরশিক্ষণের উপকরণ ব্যবহারের সুযোগ যাদের নেই, এবং সবচেয়ে কমবয়সী শিশুরা, যারা এখন বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ ধাপে আছে, তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”

এ কারণেই ক্লাসে উপস্থিত হয়ে শিক্ষা গ্রহণের জন্য স্কুলগুলো খুলে দেওয়ার জন্য ‘আর অপেক্ষা করা যায় না’ বলে মনে করছেন ইউনিসেফ ও ইউনেস্কোর কর্তাব্যক্তিরা।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, “সংক্রমণ কবে শূন্যের কোঠায় নামবে, সেজন্য আর অপেক্ষায় থাকা যায় না। এটা প্রমাণিত যে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো সংক্রমণ ছড়াতে মুখ্য ভূমিকা রাখছে না। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উপযুক্ত কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে স্কুলগুলোতে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি সামাল দেওয়া সম্ভব। স্কুল খুলে দেওয়া বা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে এবং যে কমিউনিটিতে স্কুল অবস্থিত, সেখানকার মহামারী পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে।

ইউনিসেফ ও ইউনেস্কো বলছে, বৈশ্বিক পর্যায়ে টিকার ঘাটতি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে। এ অবস্থায় টিকাদানের ক্ষেত্রে সম্মুখসারির কর্মী ও মারাত্মক অসুস্থ ও মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দেওয়া অব্যাহত থাকবে।

এ পরিস্থিতিতে স্কুল খুলে দেওয়ার জন্য ‘সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা যায় না’ মন্তব্য করে বিবৃতিতে বলা হয়, স্কুলে প্রবেশের আগে টিকাদান বাধ্যতামূলক না করে সব স্কুলের উচিত যত দ্রুত সম্ভব ক্লাসে এসে শিক্ষার্থীরা যাতে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে- সেই ব্যবস্থা করা।

“স্কুল বন্ধ রেখে এখন কী লাভ হচ্ছে, তাই যেখানে স্পষ্ট নয়, সেখানে আমাদের ভবিষ্যৎকে কার্যত জিম্মি করে ফেলা হচ্ছে। অগ্রাধিকার নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই আরও বিবেচক হতে হবে। আমরা নিরাপদে স্কুলগুলো আবার খুলে দিতে পারি এবং আমাদের অবশ্যই তা করা উচিত।”