সিংগেল ডিজিটের বদলে বাজারভিত্তিক সুদহার

দেশের অর্থবাজারে প্রায় ৬০টি ব্যাংক ও ৩০টি অব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা কম দামে অর্থ কিনে বেশি দামে বিক্রি করে। ব্যাংকের ভাষায়, অর্থ ক্রয়কে ‘আমানত সংগ্রহ’ ও অর্থ বিক্রিকে ‘ঋণ প্রদান’ বলে।
স্বস্তি ও বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ থেকে সরকার আমানতের সুদের হার ‘ছয়’ আর ঋণের সুদ ‘নয়’ শতাংশ নির্ধারণ করে। আর সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তাগাদা থেকেই বহুল আলোচিত ‘নয়-ছয়’-এর যাত্রা। ২০২০ সালের এপ্রিলে ঋণের সুদহারের সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সীমা বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়নের তিন বছরের মাথায় সুদহার নির্ধারণে নতুন নিয়ম চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নিয়মে সব ধরনের ব্যাংকঋণের সুদহার বাড়ছে। সুদহার নির্ধারণ হবে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদের ওপর। সেই গড় সুদ কত হবে, তা-ও জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এর ফলে কৃষি, এসএমই, ব্যক্তিগত ও গাড়ি ঋণসহ সব ধরনের ঋণের সুদহার বাড়বে, যা কার্যকর হবে ১ জুলাই থেকে।
২০২০ সালের এপ্রিলের আগে সুদহার ছিল পুরোপুরি মুক্ত। তখন ব্যাংকঋণের সুদ ১৬-১৭ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল। এরপর ৯ শতাংশ সুদহারে নির্দিষ্ট ছিল। ১ জুলাই থেকে সীমা প্রত্যাহার করা হচ্ছে, তবে উন্মুক্ত না। ফলে সুদহার পুরোপুরি বাঁধা থাকল তিন বছর তিন মাস। নতুন নিয়মে নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় চলবে সুদ নির্ধারণের ব্যবস্থা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে গিয়ে বলেন, ব্যাংকঋণের ৯ শতাংশ সুদহার নির্ধারণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল। এই সীমা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তটিও রাজনৈতিক। আমাদের কৃতিত্ব আমরা রাজনৈতিক নেতৃত্বকে পরিস্থিতি বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। যখন এই সীমা দেওয়া হয়েছিল, তখন ব্যাংকগুলোর সুদ ১৮ শতাংশে উঠেছিল। তখন বিদেশি ঋণের সুদহার ছিল ২ শতাংশ। এখন বিদেশি ঋণের সুদ ৯-১০ শতাংশ। আবার টাকার অবমূল্যায়নের কারণে তার খরচ আরো বেশি হয়ে যাচ্ছে।
সীমা প্রত্যাহার হওয়ায় খুশি ব্যাংকাররা। ব্যাংক সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুদহার ধরে রাখার বিষয় না। এত দিন ধরে রেখেছিল, এখন ধীরে ধীরে বাজারভিত্তিক করা হচ্ছে। এটা ভালো উদ্যোগ। একেবারে ছেড়ে দিলে একসঙ্গে অনেক বৃদ্ধি পেয়ে ব্যবসার খরচ বাড়িয়ে দিত। এমনিতেই ডলার-সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা নানা সমস্যায় আছে। নতুন হিসাবে সুদ গণনা করতে ব্যাংকগুলোকে একটু ঝামেলা পোহাতে হবে। গ্রাহকদেরও বিষয়টি বুঝতে সময় লাগবে। তবে ভালো খবর হলো, অবশেষে সুদহারের সীমা তুলে নেওয়া হয়েছে।
এখন ব্যাংকঋণের সুদহার হবে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ। আর অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি (সিএমএসএমই) ও ভোক্তা ঋণের আওতাধীন ব্যক্তিগত ঋণ ও গাড়ি ক্রয় ঋণে আরও ১ শতাংশ তদারকি মাশুল যুক্ত করে সুদহার হবে ১১ দশমিক ১৩ শতাংশ। কৃষি ও পল্লি ঋণের সুদহার হবে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। কোনো সুদ আরোপ করার পর ছয় মাসের মধ্যে তা পরিবর্তন করা যাবে না। এর মধ্যে সুদহার বাড়লেও ব্যাংক গ্রাহকের সুদ বাড়াতে পারবে না।
বর্তমানে কৃষিঋণে সুদহার ৮ শতাংশ। অন্য ঋণে সুদহার ৯ শতাংশ। আর ক্রেডিট কার্ডে সুদহার আগের মতো ২০ শতাংশ বহাল থাকবে।
সুদহার বাজারভিত্তিক করার পথে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সুদ নির্ধারণেও নতুন মডেল চালু করেছে। এতে সব সুদহার আগের চেয়ে অনেক বেশি বাজারভিত্তিক হবে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর সম্পদ-দায় ব্যবস্থাপনা সহজ হবে।