নিখোঁজ ডুবোযান টাইটানে আছেন কারা?

সুপ্রভাত ডেস্ক »

কানাডার কাছে আটলান্টিক মহাসাগরে পানির সাড়ে ১২ হাজার ফুট নিচে থাকা টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখাতে ডুব দেওয়া পর্যটকবাহী ডুবোযান টাইটানের খোঁজ এখনও মেলেনি। পাঁচ আরোহীর ওই ডুবোযানে করে ১৯১২ সালে ডুবে যাওয়া টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পর্যটকদের আড়াই লাখ ডলারের মতো লাগে। রোববার ডুব দেওয়ার পৌনে দুই ঘণ্টার মাথায় এর সঙ্গে পানির ওপরে থাকা জাহাজ পোলার প্রিন্সের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়; তারপর থেকে উত্তর আটলান্টিকের বিশাল এলাকাজুড়ে তল্লাশি অভিযান চললেও এখন পর্যন্ত ডুবোযানটির খোঁজ মেলেনি। এক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স পর্যটকবাহী ওই ডুবোযান এবং এর আরোহীদের নিয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরেছে।

ডুবোযানটিতে আছেন যারা
পর্যটকবাহী ওই ডুবোযানে থাকা আরোহীদের মধ্যে আছেন ব্রিটিশ ধনকুবের, বিমান সংস্থা অ্যাকশন এভিয়েশনের চেয়ারম্যান হামিশ হার্ডিং। দুবাইভিত্তিক অ্যাকশন এভিয়েশনের এ শীর্ষ কর্মকর্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘মিশন স্পেশালিস্ট’ হিসেবে টাইটানিকের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে পেরে গর্বিত হওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, নিউফাউন্ডল্যান্ডে ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বাজে শীতের কারণে, এই মিশনটিই খুব সম্ভবত ২০২৩ সালে টাইটানিকের উদ্দেশ্যে যাওয়া প্রথম ও একমাত্র মনুষ্যবাহী মিশন হতে যাচ্ছে।হার্ডিং ২০১৯ সালের ‘ওয়ান মোর অরবিট’ ফ্লাইট মিশনেও ছিলেন; ওই মিশনে থাকা উড়োজাহাজটি দুই মেরুর উপর দিয়ে উড়ে দ্রুততম সময়ে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেছিল।

টাইটানে আরও আছেন শাহজাদা দাউদ ও তার ছেলে সুলেমান। তাদের পরিবারও এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। পাকিস্তানের অন্যতম বৃহৎ কোম্পানি এংরো করপোরেশনের ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাদা। সার, গাড়ি বানানো, জ্বালানি ও ডিজিটাল প্রযুক্তি খাতে এংরো করপোরেশনের ব্যাপক বিনিয়োগ রয়েছে।শাহজাদা ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসইটিআইয়েরও একজন ট্রাস্ট্রি। এ প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শাহজাদা স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে ব্রিটেনে বসবাস করেন। তার শখের মধ্যে আছে ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফি, বাগান করা ও বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে যাওয়া। তার ছেলে সুলেমান বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর ভক্ত বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে দাউদ গ্রুপ।

টাইটানে যে ৫ আরোহী আছেন তাদের মধ্যে ৭৭ বছর বয়সী ফরাসী পর্যটক পল অঁরি নারজিলেও আছেন বলে জানিয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যম। পল এমন একটি কোম্পানির পানির নিচে গবেষণা কার্যক্রমের পরিচালক, যারা টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের সত্ত্বাধিকারী। ফরাসী নৌবাহিনীর সাবেক কমান্ডার পল পানির গভীরে ডুব দিতে এবং মাইন পরিষ্কারে সিদ্ধহস্ত। নৌবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি ১৯৮৭ সালে টাইটানিকে প্রথম পুনরুদ্ধার অভিযানের নেতৃত্ব দেন; ক্রমেই তিনি হয়ে ওঠেন টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ মেলা স্থান বিষয়ক শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ।

২০২০ সালে ফ্রান্সের বিলে রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পল গভীর সমুদ্রে ডুব দেওয়ার বিপদ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “মরতে ভয় পাই না আমি, এটা (মরণ) একদিন না একদিন হবেই।

এ চারজনের সঙ্গে নিখোঁজ ডুবোযানটির যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরিচালনাকারী কোম্পানি ওশেনগেইটের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টকটন রাশও আছেন বলে জানিয়েছে একাধিক গণমাধ্যম। খবর বিডিনিউজ।

এটি অনন্য সুন্দর অসাধারণ ধ্বংসাবশেষ,” টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ প্রসঙ্গে চলতি বছরের শুরুতেই ব্রিটেনের স্কাই নিউজকে বলেছিলেন তিনি। ওয়াশিংটনের এভারেটভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান বলছে, তারা সমুদ্রের ১২ হাজার ফুটেরও বেশি নিচে যেতে পরবর্তী প্রজন্মের মনুষ্যবাহী ডুবোযান ও লঞ্চ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে থাকে। ওশেনগেইট এখন পর্যন্ত প্রশান্ত মহাসাগর, আটলান্টিক ও মেক্সিকো উপসাগরে ১৪টি বেশি অভিযান ও ২০০টির বেশি ডাইভ সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। কার্যকর ও বর্ধিত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে আমাদের দল প্রতিটি মিশনের পর পুরো প্রক্রিয়াটি পর্যালোচনা ও আধুনিকায়ন করে,” বলা হয়েছে তাদের ওয়েবসাইটে।

টাইটান কী?

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে একে সাবমেরিন বলা হলেও, ৫ আরোহীবিশিষ্ট টাইটান মূলত ডুবোযান। সাবমেরিন যে কোনো বন্দর থেকে নিজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাত্রা শুরু করতে পারে, কিন্তু ডুবোযানকে যেতে হয় অন্য কোনো জাহাজের সহায়তা নিয়ে।