সহসা কমবে না তাপমাত্রার পারদ

২০১৫ সালের পর চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
ছয়দিনে বেড়েছে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস
২৯ এপ্রিলের পর তাপমাত্রার তীব্রতা কমতে পারে-আবহাওয়া অধিদপ্তর

ভূঁইয়া নজরুল <<
বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয়বাস্প না আসা পর্যন্ত কমবে না তাপমাত্রার পারদ। আর আবহাওয়াবিষয়ক বিভিন্ন মডেলে আগামী এক সপ্তাহেও বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস আসার কোনো লক্ষণ নেই। তবে আরব সাগর থেকে আসা জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু দিল্লি হয়ে দেশের মধ্য পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে প্রবেশের পূর্বেই উত্তপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এতে বাড়ছে গরম, বাড়ছে দুর্ভোগ।
চলতি মাসে চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকার কথা ৩১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু গতকাল রোববার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত ২০২ এপ্রিল ছিল ৩৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২১ এপ্রিল ৩৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি, ২২ এপ্রিল ৩৪ দশমিক ১, ২৩ এপ্রিল ৩৫ দশমিক ২ এবং ২৪ এপ্রিল রেকর্ড হয়েছে ৩৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ প্রতিদিন বাড়ছে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে যশোরে ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সারাদেশেই চলছে তাপদাহ। চলমান এই তাপদাহ এখনই কমার কোনো লক্ষণ নেই বলে জানালেন আবহাওয়া অধিদপ্তর ঢাকা কেন্দ্রের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক।
পাঁচ কারণে বাড়ছে তাপমাত্রা বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এপ্রিল মাস স্বাভাবিকভাবেই দেশের উষ্ণতম মাস। বছরের এসময়ে দিনের দৈর্ঘ্য বেশি হওয়ায় সূর্য দীর্ঘ সময় কিরণ দেয় এবং ভূপৃষ্ঠ বেশি উত্তপ্ত হয়। এছাড়া বাতাসের গতিবেগ কম। অপরদিকে উপকূলীয় এলাকার বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণে সেখানে ভ্যাপসা গরম এবং অন্যান্য এলাকার বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় গরম বেশি অনুভূত হয়। এসময়ে আরব সাগর থেকে আসা বাতাস উত্তর প্রদেশ ও দিল্লি হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের আগেই উত্তপ্ত হয়ে যায় এবং এতে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।’
তাহলে বৃষ্টি কবে হবে কিংবা গরমের মাত্রা কমবে কবে- এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘২৯ এপ্রিলের পর আকাশে কিছু মেঘের দেখা পেলেও মূলত ২ মে এর পর বিক্ষিপ্তভাবে কিছু বৃষ্টিপাত হতে পারে এবং কমতে পারে গরমের মাত্রা।’
অপরদিকে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রামের বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় ভ্যাপসা গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে। এছাড়া ২০১৫ সালের পর চট্টগ্রামের তাপমাত্রা এতো বেশি হয়নি কখনো। সেবার সারাদেশের তাপমাত্রা বেশি ছিল এবং চট্টগ্রামের তাপমাত্রা ৩৭ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল।’
গরমের তীব্রতা কবে নাগাদ কমতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু না আসা পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা তেমন নেই। আর আগামী এক সপ্তাহেও সেই লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না আবহাওয়া বিষয়ক বিভিন্ন মডেলে।
আবহাওয়াবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছরের এ সময়ে স্বাভাবিকভাবেই আবহাওয়া উত্তপ্ত থাকে। আর এ কারণে গরমের তীব্রতাও বেশি থাকে। তবে এবার আকাশে মেঘ না থাকায় সারাদেশে গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে এবং একইসাথে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও তীব্র গরম।
এ বিষয়ে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল বলেন, আকাশে কোনো মেঘ নেই। মেঘ থাকলে সূর্যের আলো সরাসরি ভূপৃষ্ঠে পড়তো না। তখন গরমের মাত্রা কমে আসতো।
উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী আবহাওয়ার পরিবর্তন চলছে। বাংলাদেশসহ আশপাশের সব এলাকায় উত্তপ্ত আবহাওয়া বিরাজ করছে।