সমুদ্র জয়ের সুফল এখনো অধরা!

নিজাম সিদ্দিকী »

ভারত ও মিয়ানমারের কাছ থেকে আইনি লড়াইয়ে অর্জিত সমুদ্র সীমানার যথাযথ ব্যবহার হয়নি দীর্ঘদিনেও। কিছু নীতিমালা ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে উঠলেও কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে তেমন কোনো অগ্রগতি লক্ষ করা যায় না। ফলে সমুদ্র জয়ের কাক্সিক্ষত সুফল এখনো মেলেনি। সমুদ্র অর্থনীতির বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আমরা আর্থিক সমৃদ্ধি লাভ করতে পারিনি।

অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষণ বলছে, সমুদ্রতলের গ্যাস, মৎস্যসহ অন্যান্য সম্পদ আহরণ, বন্দরের সুবিধা সম্প্রসারণ ও পর্যটনের ক্ষেত্রে যথোচিত কার্যক্রম সম্পন্ন হলে ২০৩০ সাল নাগাদ সমুদ্র থেকে প্রতি বছর প্রায় আড়াই লাখ কোটি ডলার আয় করা সম্ভব।

সমন্বিত জরিপ, কার্যকর সমুদ্রবান্ধব নীতি, দক্ষ জনশক্তি, প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং মেরিন রিসোর্সভিত্তিক পর্যাপ্ত গবেষণার অভাব সমুদ্র অর্থনীতি বিকাশের পথে অন্যতম অন্তরায় বলে বিবেচনা করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ মহল।

সমুদ্র অর্থনীতি বা ব্লু ইকোনমি কী

ব্লু-ইকোনমি হচ্ছে সমুদ্র সম্পদনির্ভর অর্থনীতি। সমুদ্রের বিশাল জলরাশি ও এর তলদেশের বিভিন্ন প্রকার সম্পদকে কাজে লাগানোর অর্থনীতি। ব্লু-ইকোনমিক অঞ্চল একটি দেশের ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনীতি নিশ্চিত করে। ১৯৯৪ সালে ব্লু-ইকোনমি শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন অর্থনীতিবিদ গুন্টার পাউলি তাঁর ‘দ্য ব্লু-ইকোনমি: টেন ইয়ার্স, হান্ড্রেড ইনোভেশন, হান্ড্রেড মিলিয়ন জবস’ বইয়ে। তিনি এই বইয়ে ব্লু-ইকোনমি মডেলের কথা বলেন। যেখানে স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত সম্পদকে কাজে লাগিয়ে পরিবেশজনিত সমস্যার নিরসন করা যায়। তার বইটি ২০১৪ সাল নাগাদ ৩৫টি ভাষায় অনুদিত হয়।

পরবর্তীকালে ব্লু-ইকোনমি নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে যার মধ্যে অন্যতম ২০১২ সালে রিওডিজেনিরো, ব্রাজিলে টেকসই উন্নয়ন শীর্ষক জাতিসংঘ সম্মেলন রিও+২০। ব্রাজিলের রিওডিজেনিরো রিও+২০ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশ্বের সামুদ্রিক এলাকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এর সামগ্রিক উন্নয়নে সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণে উৎসাহ প্রদান করা হয়।

বিশ্বব্যাংকের মতে, ব্লু-ইকোনমি একটি ধারণা যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং জীবিকার সংরক্ষণকে উন্নীত করতে চায় এবং একই সঙ্গে সমুদ্র ও উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশগত স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে।

জাতিসংঘ ব্লু- ইকোনমিকে মহাসাগর, সমুদ্র এবং উপকূলীয় অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্কিত অর্থনৈতিক কর্মকা-ের একটি পরিসর হিসাবে উল্লেখ করে। সমুদ্র অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ মূল বিষয় হলো টেকসই মৎস আহরণ, সমুদ্রের স্বাস্থ্য, বন্যপ্রাণী এবং দূষণ বন্ধ করা।

সমুদ্র অর্থনীতির বিশ্বব্যাপী প্রভাব

প্রতি বছর তিন থেকে পাঁচ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের কর্মকা- সংঘটিত হচ্ছে সমুদ্রকে ঘিরে। বিশ্বব্যাপী ৪৩০ কোটি মানুষের ১৫ ভাগ প্রোটিনের জোগান দিচ্ছে সামুদ্রিক মাছ, উদ্ভিদ ও জীবজন্তু। পৃথিবীর প্রায় ৭২% এবং বায়োস্ফেয়ারের প্রায় ৯৫% এলাকা ঘিরে আছে সাগর। পৃথিবী ৩০% গ্যাস ও জ্বালানি তেল লাভ করছে সমুদ্রতল থেকে। কিন্তু কেবল গ্যাস ও জ্বালানি তেল নয়, সমুদ্রে রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ, তামা, লোহা, নিকেল, কোবাল্ট, মলিবডেনাম, জিংক, লিথিয়াম, প্লাটিনাম, ইন্ডিয়াম, জার্মেনিয়াম,  সেলেনিয়াম, টেলুরিয়াম, দস্তা ইত্যাদি দুষ্প্রাপ্য ধাতু। এসব পদার্থ সমদ্র  থেকে আহরণের চেষ্টা ও অভিযান চলছে। বিশ্বে মোট হাইড্রোকার্বনের ৩২% সরবরাহ হয় সামুদ্রিক উৎস্য থেকে। বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক পরিবহনের ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয় সমুদ্রপথে। ইউরোপের উপকূলীয় দেশগুলো সমুদ্র অর্থনীতি থেকে প্রতি বছর ৫০০ বিলিয়ন ইউরো আয় করতে পারে, যা তাদের জিডিপির ১০ শতাংশ।

ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় আয়ে বিপুল অবদান রয়েছে ব্লু-ইকোনমির। সমুদ্র সম্পদ নিয়ে সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন হলে সমুদ্র থেকে আহরিত সম্পদের মূল্যমান হবে সে দেশের জাতীয় বাজেটের প্রায় দশগুণ। কর্মসংস্থান হবে ৭৫ হাজার লোকের, প্রতি বছর ১১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হবে। অস্ট্রেলিয়া এ খাত থেকে বছরে আয় করছে প্রায় ৪৭.২ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার। ২০২৫ সালের মধ্যে সমুদ্র অর্থনীতির আয়কে ১০০ বিলিয়ন ডলারে নিতে চায় দেশটি। সিঙ্গাপুরের জিডিপির ৪০ ভাগ সমুদ্রনির্ভর। চীনের মোট জিডিপির ১০ শতাংশ আসছে সমুদ্র অর্থনীতি থেকে।

সমুদ্র সীমানা জয়

২০১২ সালের ১৪ মার্চ আন্তর্জাতিক সালিসি আদালতের (পিসিএ) রায়ের মাধ্যমে মিয়ানমারের সাথে মামলায় বাংলাদেশ প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি সমুদ্র এলাকার দখল পায়। ২০১৪ সালের ৮ জুলাই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বিরোধপূর্ণ সমুদ্রসীমার আনুমানিক ২৫ হাজার ৬০২ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটারের অধিকার পায় বাংলাদেশ। এতে দেশের পর্যটন, সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ, প্রাকৃতিক সম্পদ, বাণিজ্য এবং জ্বালানি সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

সমুদ্র অর্থনীতিতে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি

বিশ্বব্যাংক ২০১৮ সালে ‘টুয়ার্ডস এ ব্লু- ইকোনমি : এ পাথওয়ে ফর সাসটেইনেবল গ্রোথ ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামের সমীক্ষায় জানায়, সমুদ্র অর্থনীতির ব্যাপারে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত  কোনো সমন্বিত নীতি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেনি।

বাংলাদেশের জিডিপির মাত্র ৪ থেকে ৫ শতাংশ ব্লু-ইকোনমি থেকে আসে। এটার পরিমাণ বার্ষিক প্রায় ৯৬০ কোটি ডলার। অথচ সমুদ্র  থেকে শুধু মাছ রপ্তানি থেকেই ১০-১২ হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের।

সমুদ্রবিরোধ নিরসনের পরে ‘সেভ আওয়ার সি’-এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতি বছর বঙ্গোপসাগর থেকে ৮০ লাখ টন মাছ ধরা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের জেলেরা ধরতে পারছেন মাত্র ৭ লাখ টন মাছ। দেশে বছরে  যে পরিমাণ মাছ অহরণ হয়, তার মাত্র ১৫ শতাংশ আসে গভীর সমুদ্র থেকে। উপকূলীয় এলাকার ৫০ লাখের বেশি মানুষের আয়ের প্রধান উৎস সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ। কিন্তু তারা এখনো মূলত প্রচলিত পদ্ধতিতেই সীমাবদ্ধ।

কিন্তু বর্তমানে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে সমুদ্রগামী ট্রলারগুলোর জ্বালানি, পরিচালন, জেলেদের  খোরাকি ব্যয়, বরফ, মজুরি মিলিয়ে ব্যয় বেড়ে গিয়েছে ৭০ শতাংশ। ফলে আহরিত মাছ বিক্রি করে ব্যয় তুলে লাভ করা দুরূহ হয়ে পড়ছে। এ খাতে জ্বালানি ভর্তুকি নেই, ব্যাংক ঋণের সুবিধা অবারিত নেই,  সরকারি পর্যায়ে জেলেদের বীমা ও মজুরি কাঠামোও নির্ধারণ করা হয়নি। এছাড়া গভীর সমুদ্রে মাছ আহরণে প্রয়োজন অত্যাধুনিক ট্রলার ও জাহাজ। সেই সক্ষমতাও বাড়েনি। ফলে দেশের নৌযানগুলো গভীর সমুদ্র  থেকে মৎস্য আহরণ করতে পারছে না।

ইতোমধ্যে সামুদ্রিক অর্থনীতি বিকাশের জন্য ২৬টি সম্ভাবনাময় কার্যক্রম চিহ্নিত করেছে সরকার। এগুলো হল- শিপিং, উপকূলীয় শিপিং, সমুদ্র বন্দর, ফেরির মাধ্যমে যাত্রীসেবা, অভ্যন্তরীণ জলপথে পরিবহন, জাহাজ নির্মাণ, জাহাজ রিসাইক্লিং শিল্প, মৎস্য, সামুদ্রিক জলজ পণ্য, সামুদ্রিক জৈব প্রযুক্তি, তেল ও গ্যাস, সমুদ্রের লবণ উৎপাদন, মহাসাগরের নবায়নযোগ্য শক্তি, ব্লু-এনার্জি, খনিজ সম্পদ (বালি, নুড়ি এবং অন্যান্য), সামুদ্রিক  জেনেটিক সম্পদ, উপকূলীয় পর্যটন, বিনোদনমূলক জলজ ক্রীড়া, ইয়টিং এবং মেরিনস্, ক্রুজ পর্যটন, উপকূলীয় সুরক্ষা, কৃত্রিম দ্বীপ, সবুজ উপকূলীয়  বেল্ট বা ডেল্টা পরিকল্পনা, মানবসম্পদ, সামুদ্রিক নিরাপত্তা এবং নজরদারি এবং সামুদ্রিক সমষ্টি স্থানিক পরিকল্পনা (এমএসপি)।

সমুদ্রসম্পদ আহরণ ও গবেষণা এগিয়ে নিতে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে কক্সবাজারে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিদ্যায়তনে চালু করা হয় সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগ। ২০১৭ সালে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠন করা হয় ‘ব্লু- ইকোনমি সেল’। ব্লু-ইকোনমির সঙ্গে সরকারের ১৭টি মন্ত্রণালয় এবং ১২টি সংস্থা জড়িত। এছাড়া সমুদ্রসম্পদ সুরক্ষায় ২০১৯ সালে মেরিটাইম জোন অ্যাক্ট করে সরকার। তবে ব্লু-ইকোনমি সেলটি অস্থায়ী ও ক্ষুদ্র প্রাসনিক সেল। একে আইনগত কর্তৃত্ব না থাকায় ২০১৭ সালে সংসদীয় কমিটি সুপারিশ করেছিল সেলের বদলে আইনগত ক্ষমতা দিয়ে একটি একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের। কিন্তু সে সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি। সামুদ্রিক আয়তনের বিশালতা, প্রকল্পের গুরুত্ব, সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা ও সম্ভাবনার বিপুলতা বিবেচনা করে সমুদ্র মন্ত্রণালয় গঠন করার কথাও এসেছে। এটিও পরবর্তীকালে বাস্তবায়ন হতে দেখা যায়নি।

২৬টি ব্লক ও কাজের অগ্রগতি

২০১২ সালে সমুদ্র বিরোধ নিষ্পত্তির পর মিয়ানমার দ্রুততম সময়ে তাদের সামুদ্রিক ফসল ঘরে তোলে। মাত্র দুই বছরে তারা নতুন করে গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের পাশাপাশি বাংলাদেশের সীমানা লাগোয়া তাদের ব্লক থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু করে। আর সেই গ্যাস দিয়ে এখন দেশটি তাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাচ্ছে। আবার গ্যাস রপ্তানিও করছে চীনে। ভারত এ যাবত ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আবিষ্কার করেছে বঙ্গোপসাগরে। দেশটি নিয়মিত গ্যাস উত্তোলনও করছে।

আমাদের সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হবার পরে ২৬টি নতুন ব্লকে একে বিন্যাস করা হয়। এর মধ্যে ১১টিকে অগভীর ও ১৫টিকে গভীর সমুদ্রের ব্লক হিসেবে স্থির করা হয়। জানা যায়, ২০১৯ সালে মাত্র ৪টি ব্লকে অনুসন্ধানের জন্য বিদেশী কোম্পানির সাথে চুক্তি হয়েছে। তারা কাজ করে খুব ধীরগতিতে। একটি কূপও তখনো খনন করা হয়নি। বাকি ২২টি ব্লক খালি পড়ে থাকে। ২০২২ সালে এসে শুধুমাত্র বঙ্গোপসাগরের মহীসোপানে (১৯৫৮ সালের কনভেনশন অনুযায়ী সমুদ্র তীরবর্তী দেশগুলোর স্থলভাগের বেসলাইন থেকে লম্বালম্বিভাবে সমুদ্রের ২০০ নটিকেল মাইল পর্যন্ত এলাকার মালিকানা) জরিপ করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এখানে ন্যূনতম ১৭ থেকে ১০৩ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট (টিসিএফ) গ্যাস হাইড্রেটস মজুদ রয়েছে।

আমাদের সম্ভাবনা

ভারত ও মিয়ানমার থেকে অর্জিত সমুদ্রসীমায় ২৬টি ব্লক ইজারা দিয়ে এসব ব্লক থেকে প্রায় ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সমুদ্রসীমা বিজয়ের ফলে ব্লু-ইকোনমির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দুই ধরনের সম্পদ অর্জন করেছে। এর একটি হলো প্রাণিজ, অপরটি অপ্রাণিজ। প্রাণিজের মধ্যে রয়েছে মৎস্যসম্পদ, সামুদ্রিক প্রাণী, আগাছা-গুল্মলতা ইত্যদি। এছাড়া বঙ্গোপসাগরের বিপুল পরিমাণ আগাছা প্রক্রিয়াজাতকরণ করে বিভিন্ন রোগের ওষুধ তৈরি করা যায়। এসব আগাছার মধ্যে রয়েছে ইসপিরুলিনা যা অত্যাধিক মূল্যবান।

বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় রয়েছে ২২০ প্রজাতির সাগর-উদ্ভিদ, ৩৪৭ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৪৯৮ প্রজাতির ঝিনুক, ৫২ প্রজাতির চিংড়ি, ৫ প্রজাতির লবস্টার, ৬ প্রজাতির কাঁকড়া এবং ৬১ প্রজাতির সি-গ্রাস। সেই সঙ্গে রয়েছে শ্যালফিশ, অক্টোপাস, হাঙ্গরসহ বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী।

অপ্রাণিজ সম্পদের মধ্যে রয়েছে খনিজ ও খনিজ জাতীয় সম্পদ যেমন তেল, গ্যাস, চুনাপাথর ইত্যাদি। ১৭ ধরনের মূল্যবান খনিজ বালু। যেমন জিরকন, রোটাইল, সিলিমানাইট, ইলমেনাইট, ম্যাগনেটাইট, গ্যানেট, কায়ানাইট, মোনাজাইট, লিক্লোসিন ইত্যাদি। যার মধ্যে মোনাজাইট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া সিমেন্ট বানানোর উপযোগী প্রচুর ক্লে রয়েছে সমুদ্রের তলদেশে।

সমুদ্রের ৩০-৮০ মিটার গভীরে সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল ‘ক্লু’ রয়েছে, যা উত্তোলন নিশ্চিত করতে পারলে দেশে সিমেন্ট শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে বলছেন বিশেষজ্ঞ মহল।

উপকূলীয় এলাকায় সমুদ্রকেন্দ্রিক পর্যটন চলমান রয়েছে। সি ট্যুরিজমের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ক্রুজশিপ। অনেক পর্যটক ক্রুজশিপের প্রতি আগ্রহী। পর্যটন এলাকায় প্রয়োজন সার্ফিং জোন, পানির নিচে ভ্রমণ-ব্যবস্থা, কমিউনিটিভিত্তিক যোগাযোগ স্থাপন। পর্যটন এলাকায় আমাদের ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক সুকৃতির প্রতিফলন থাকা দরকার। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সমুদ্রের পানি ব্যবহার করে লবণ উৎপাদন বাড়ানো যায়। জাহাজ নির্মাণ ও জাহাজ ভাঙা শিল্প সমৃদ্ধ করা যায়।

সমুদ্র-অর্থনীতি বিকাশে চ্যালেঞ্জ

সমুদ্র-অর্থনীতির বিকাশে সমুদ্রকে ঘিরে সমন্বিত জরিপ, গবেষণা ও সমুদ্রবান্ধব নীতি গ্রহণ করার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ মহল।  পাশাপাশি তাঁরা এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ে চ্যালঞ্জে মোকাবিলার কথা বলেছেন।  এগুলো হলো : বঙ্গোপসাগর ঘিরে মানব পাচার রোধ, আন্তর্জাতিক মাদক ব্যবসার রুট বন্ধ করা, সমুদ্র-সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, অস্ত্র ব্যবসায়ীর পথ বন্ধ, অবৈধভাবে মাছ ধরা বন্ধ, সমুদ্রকেন্দ্রিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সমুদ্রে দুর্ঘটনা, সমুদ্র দূষণরোধ, জলদুস্যতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা।

এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অত্যাধুনিক নৌবাহিনীতে আরো এয়ারক্র্যাফট,  হেলিকপ্টার, সাবমেরিন, দ্রুতগামী টহলবোটসহ নানা সুবিধা সংযোজনের কথাও বলেছেন।

সমুদ্র অর্থনীতির এ সম্ভাবনাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হলে সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সমুদ্রসম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবে। আর সমুদ্রসম্পদকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে আশা করা যায়।