সচল হাসপাতালের অচল মেশিন এবং অর্থ বরাদ্দেও পিছিয়ে

স্বাস্থ্যসেবার জন্য চট্টগ্রামের মানুষের প্রধান ভরসার জায়গা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (চমেক)। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ (২০২২ সালের ডিসেম্বর) মূল্যায়ন সূচকে দেশের ১৭টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে শ্রেষ্ঠ স্থান অর্জন করেছে চমেক হাসপাতাল। স্বাস্থ্যসেবার মান, সেবা গ্রহণকারীদের সন্তুষ্টিসহ নানা দিক বিবেচনা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই শ্রেষ্ঠত্বের কথা ঘোষণা করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক)। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রাক্কালে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে প্রকাশিত এ খবর চট্টগ্রামবাসীকে আনন্দিত করেছে এবং আশ্বস্ত করেছে নিঃসন্দেহে।
গত ২৩ এপ্রিল সুপ্রভাত বাংলাদেশে ‘দেশ সেরা হাসপাতালে ডজন মেশিন অচল’ শিরোনামে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে এমআরআই, ক্যাথল্যাব, ব্র্যাকি থেরাপি, ম্যামোগ্রাফি, এনজিওগ্রামসহ ডজন খানেক মেশিন অচল। এতে বাড়তি টাকায় বেসরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে গিয়ে পকেট কাটা যাচ্ছে রোগীদের। অনেক রোগী টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে পারছে না। এটি একটি মন খারাপ করা সংবাদ।
হাসপাতালের ডজন খানেক মেশিন নষ্ট থাকার কারণে বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। তবে এসব সচল করতে কর্তৃপক্ষ চেষ্টা চালিয়ে গেলেও কবে নাগাদ ঠিক হবে সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক সুপ্রভাতকে বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে তিন হাজার রোগী ভর্তি থাকে। অধিকাংশই নিম্নবিত্ত রোগী। এসব রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে আমরা প্রস্তুত। কিন্তু অচল কিংবা সচল মেশিন ঠিক করার ক্ষমতা আমাদের হাতে নেই। এটা মন্ত্রণালয়ের দেখভাল করার বিষয়। এমআরআই, ক্যাথল্যাব, ব্র্যাকি থেরাপি, ম্যামোগ্রাফি মেশিন ঠিক করার জন্য আমরা বারবার চিঠি দিচ্ছি। কিন্তু কোনো সদুত্তর পাচ্ছি না। হাসপাতালে তো বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার নেই যে, মেশিন অচল হওয়া মাত্রই সচল করা যাবে। তাছাড়া বেশির ভাগ মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নিজস্ব বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ঠিক করে দেন। এটাতে মেরামত ফি বাবদ বড় অংকের টাকা দিতে হয়। তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
আরেকটি মন খারাপ করা সংবাদ যা সম্প্রতি ছাপা হয়েছে চট্টগ্রামের আরেকটি স্থানীয় দৈনিকে ‘সেবায় শীর্ষে, বরাদ্দে পিছিয়ে’ শিরোনামে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক হাসপাতালটিতে বরাদ্দের পরিমাণ (বেতন-ভাতা বাদ দিয়ে) ১৬৭ কোটি ৮১ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। অন্যদিকে, ২২শ শয্যার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে বরাদ্দের পরিমাণ ৭৪ কোটি ৭৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। হিসেবে অতিরিক্ত চারশ শয্যার ঢামেক হাসপাতালে বাজেট-বরাদ্দের পরিমাণ চমেক হাসপাতালের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। তবে কম শয্যা সংখ্যার বেশ কয়টি হাসপাতালও চমেক হাসপাতালের তুলনায় বেশি বরাদ্দ পেয়ে আসছে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অনুমোদিত শয্যা সংখ্যা এক হাজার। যা চমেক হাসপাতালের তুলনায় ১২শ শয্যা কম। কিন্তু বেতন-ভাতা ব্যতীত হাসপাতালটি (ময়মনসিংহ) এবার বরাদ্দ পেয়েছে ১০৮ কোটি ৭৮ লাখ ১৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ শয্যা সংখ্যা বারশ’ কম হওয়ার পরও চমেক হাসপাতালের তুলনায় প্রায় ৩৩ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ পেয়েছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। একই ভাবে ১২শ’ শয্যার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালও প্রায় ১৫ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ পেয়েছে। হাসপাতালটিতে (রাজশাহী) এবার বরাদ্দের পরিমাণ (বেতন-ভাতা ব্যতীত) ৮৯ কোটি ৪১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। মাত্র নয়শ’ শয্যার অনুমোদন প্রাপ্ত সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালও বরাদ্দের দিক দিয়ে চমেক হাসপাতালের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে। নয়শ’ শয্যার এ হাসপাতালে এবার বরাদ্দের পরিমাণ ৭৬ কোটি ৫৯ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। যা ২২শ’ শয্যার চমেক হাসপাতালের তুলনায় প্রায় ২ কোটি টাকা বেশি।
শয্যা ও রোগী অনুপাতে অপর্যাপ্ত বরাদ্দের কারণে সেবাদানে হিমশিম অবস্থায় পড়তে হচ্ছে চমেক হাসপাতাল প্রশাসনকে। এগুলো স্পষ্টতই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিমাতাসুলভ আচরণ।