শঙ্কা বাড়াচ্ছে ভরাট খাল

জলাবদ্ধতা নিরসন

‘এবার জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ কম হবে’

ভূঁইয়া নজরুল  >
এখনো বর্ষা মৌসুম শুরু হয়নি। গতবার বৃষ্টি কম হওয়ায় জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ দেখা যায়নি তবে এবার জ্যৈষ্ঠের দুই দফা বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতার আগাম সতর্ক সংকেত দিচ্ছে। এবার কি দুর্ভোগ আরো বাড়বে?
নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির বাসিন্দা মমতাজুল ইসলাম বলেন, ঈদের দিনের এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে যেভাবে পানি জমেছে, এতে বর্ষায় কি ঘটবে তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।
একই অবস্থা কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকায়ও। স্বাভাবিকভাবেই এই এলাকায় জোয়ারের পানি জমে না। কিন্তু গত মঙ্গলবারের বৃষ্টিতে এই এলাকার পানি নামতে না পেরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের বক্তব্য এবার কি বর্ষায় আরো বেশি পানি জমবে?
গতকাল নগরীর বিভিন্ন খাল ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ খালে মাটি ভরাট। এসব খাল ভরাট করে উভয় পাশে রিটেনিং দেয়াল নির্মাণের কাজ চলছে। বহদ্দারহাট পুলিশ বক্সের মোড় থেকে চকবাজার ফুলতলার দিকে আসা চাক্তাই খালটি সম্পূর্ণ ভরাট অবস্থায় রয়েছে। খালের মাঝখানে স্কেভেটর। চলছে রিটেনিং দেয়ালের নির্মাণকাজ। খালের পানি সরু জায়গা দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। আর একারণেই কাতালগঞ্জ এলাকাসহ আশপাশের বৃষ্টির পানি নামতে না পেরে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান।
এছাড়া রাজাখালী-১, রাজাখালি-২ ও রাজাখালি-৩ খালগুলোর রিটেনিং দেয়াল নির্মাণের কাজ শেষ না হওয়ায় খালগুলোর স্থানে স্থানে বাঁধ রয়েছে। একই চিত্র সদরঘাট-১, সদরঘাট-২, ফিরিঙ্গীবাজার, মরিয়মবিবি, টেকপাড়া, কলাবাগিচাসহ বিভিন্ন খালে। এসব খালের মুখে আবার স্লুইস গেট বসানো হবে বলে খালের মুখ বন্ধ রয়েছে। সব মিলিয়ে বৃষ্টির পানি নেমে যাওয়াই এখন চ্যালেঞ্জ।
কিন্তু এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বার বার বলে আসছেন খালের বাঁধ কেটে দেয়ার কথা। খালের বাঁধ কেটে দিলে পানি দ্রুত নেমে যাবে এবং নগরীতে জলাবদ্ধতা মারাত্মক আকারে রূপ নেবে না।
খালের বাঁধ এবং খালের মাঝখানে মাটি রাখা প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হয় জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ আলীর কাছে। তিনি বলেন, ‘খালের মধ্যে বাঁধ না দিলে আমরা কাজ করবো কিভাবে? তবে বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই আমরা এসব বাঁধ ও খাল থেকে মাটিগুলো অপসারণ করে নেবো। তাই এবার অতীতের চেয়ে কম দুর্ভোগ দেখবে নগরবাসী। বৃষ্টির পর পানি দ্রুত নেমে যাবে বলে আশা করছি।’
নগরীর অনেক খালের কাজ অসমাপ্ত অবস্থায় রয়েছে। প্রায় সব খালেই কাজ চলমান। খাল থেকে মাটিগুলো কিভাবে অপসারণ করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্প্রতি কিছু খালের বাঁধ কেটে দেয়া হয়েছিল। এসব খালে আমরা আবারো বাঁধ দিয়ে অসমাপ্ত কাজ শেষ করে বাঁধগুলো কেটে দেব।
তিনি আরো বলেন, যেসব খালে রিটেনিং দেয়াল নির্মাণের জন্য খালের মধ্যখানে মাটি ভরাট রয়েছে সেগুলোর মাটি চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে অপসারণ করা হবে। কোনোভাবেই যাতে পানি আটকাতে না পারে সেজন্য আমরা খালগুলো উন্মুক্ত করে দেব। বর্ষা শেষে আবারো নতুন করে কাজ শুরু করা হবে।
কিন্তু অনেক খালের মুখে স্লুইস গেট বসানোর কাজ চলছে। সেগুলোর পানি পাইপ দিয়ে যাচ্ছে। সেসব খাল দিয়ে পানি নামতে না পারলে জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ নেবে। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এসব খালগুলোর মধ্যে কলাবাগিচা ও মরিয়ম বিবি খালের মুখে বাঁধ থাকবে। পাইপ দিয়ে বা বিকল্প মাধ্যমে পানি যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। বাকি খালগুলোর মুখ কেটে দেয়া হবে, যাতে পানি দ্রুত নেমে যেতে পারে।
হালিশহর এলাকায় মহেশখালে স্লুইস গেট নির্মাণের কাজ চলছে। সেই খালের পানিও ডাইভারশান দিয়ে প্রবাহিত হবে বলে লে. কর্নেল মো. শাহ আলী জানান।
তিন বছর মেয়াদি মেগা প্রকল্পটি ২০১৭ সালে একনেকে অনুমোদন পেলেও বাস্তবে এর কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের এপ্রিলে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হলেও সিডিএ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সেনাবাহিনীর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়।
তিন বছরে এ প্রকল্পের অগ্রগতি কতটুকু হয়েছে জানতে চাইলে লে. কর্নেল মো. শাহ আলী বলেন, ‘আমাদের ৫১ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। জুনের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে আবারো সময় বর্ধিতকরণের জন্য আবেদন করা হবে।
উল্লেখ্য, মেগা প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৩৬টি খাল আরএস শিট অনুযায়ী পূর্বের অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, খালের উভয় পাশে ১৫ ফুট চওড়া রোড ও খালের মুখে ৫টি সøুইস গেইট বসানো, ৪২টি সিল্ট ট্র্যাপ (বালি জমার স্থান), ৩টি জলাধার নির্মাণ, ৩৬টি খাল খননের মাধ্যমে ৫ লাখ ২৮ হাজার ২১৪ ঘনমিটার মাটি উত্তোলন, ৪২ লাখ ঘনমিটার কাদা অপসারণ, নতুন করে ১০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ, ১ লাখ ৭৬ হাজার মিটার দীর্ঘ রিটেনিং দেয়াল নির্মাণ এবং খালের উভয় পাশে ৮৫ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করার কাজ রয়েছে।