রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ উপস্থিতি মারাত্মক প্রভাব ফেলছে

আইপিএএমএসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

সুপ্রভাত ডেস্ক »

মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ১২ লাখেরও বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছে। তাদের নিজেদের দুর্দশা ছাড়াও দীর্ঘ সময় তাদের উপস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা এবং সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।’

গতকাল সোমবার সকালে ‘৪৬তম ইন্দোপ্যাসিফিক আর্মিস ম্যানেজমেন্ট সেমিনার ২০২২’ (আইপিএএমএস) এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। বিশ্ব শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে জানিয়ে এ কার্যক্রমে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, ‘শান্তি সহায়তা কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ আজ বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত। এটি আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা যে, বাংলাদেশ সর্বদা বিশ্ব শান্তি বজায় রাখতে সহায়তা করবে। খবর বিডিনিউজের।

‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘ মিশনসহ বিশ্বের যে কোনো দেশে শান্তি রক্ষায় কাজ করতে সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।’

অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া সবাইকে স্বাগত জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বন্ধুত্ব, শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আইপিএএমএস সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

‘আমি মনে করি, এই ধরনের ফোরামের মাধ্যমে সাধারণ স্বার্থের বিষয়গুলো উঠে আসে এবং কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলোর সমাধান সহজ হয়। ২৭টি দেশ নিয়ে আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক সেমিনারের সহ-আয়োজক হওয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য গর্বের।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোনো দেশের সেনাবাহিনী সেই দেশের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করার অন্যতম নিয়ামক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয়াও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিকশিত হয়েছে।

বর্তমান বিশ্বে নিরাপত্তা ও গতিশীলতা দিন দিন পরিবর্তিত হচ্ছে এবং জটিল হচ্ছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘যে কোনো সংঘাত বা সংকট বিশ্বের প্রতিটি জাতিকে প্রভাবিত করে। এটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীল উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে।

‘উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তা বিশ্বের প্রায় সব দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত বিষয়। এই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুটি দেশগুলোকে টেকসই উন্নয়নের জন্য শক্তিশালী সহযোগিতার দিকে নিয়ে গেছে। যোগাযোগ, সংলাপ ও শীর্ষ বৈঠকের জন্য বেসামরিক ও সামরিক কূটনৈতিক যোগাযোগের পথ প্রশস্ত করেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি দেখতে পাচ্ছি যে, আইপিএএমএস একটি অনুরূপ বহুজাতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পারে, যাতে এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করে।

‘আমি বিশ্বাস করি, জ্যেষ্ঠ সামরিক নেতাদের অবশ্যই এ ধরনের ফোরামের মাধ্যমে কথা বলতে হবে, যোগাযোগ করতে হবে এবং তাদের পরস্পরের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে হবে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বহুপক্ষীয়বাদে দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলেন জানিয়ে তার মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির সারমর্ম জানিয়ে বলেছিলেন- ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’।

‘বৈদেশিক নীতিতে বাংলাদেশ সবসময় বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। এটি আমাদের একটি জাতি হিসাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছে এবং ধীরে ধীরে জাতি হিসেবে আমাদের সঠিক মর্যাদা দাবি করার সক্ষমতা দিয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলাদেশের’। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার স্বপ্ন পূরণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

‘বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার ৫১তম বছরে পা দিয়েছে এবং গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। দারিদ্র্য হ্রাস, খাদ্য ও শক্তি নিরাপত্তা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লিঙ্গ সমতা, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাসে সাফল্য পেয়েছে।’